সিইউএফএল এমডিকে অবরুদ্ধের ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের টিম

ওভারটাইম ইস্যু

আনোয়ারা প্রতিনিধি | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারায় ওভারটাইম ইস্যুতে চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) অবরুদ্ধের ঘটনায় বিসিআইসির ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গতকাল শুক্রবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য একটি মহল পরিকল্পিতভাবে কারখানার পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তদন্ত কমিটির নজরে এসেছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য বা সিইউএফএল কর্মকর্তাদের কেউই নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজী হননি। ওভারটাইম ইস্যু নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ খানের অফিসের বিদ্যুত ও টেলিফোন লাইন বিচিছন্ন করে দেয়। এ সময় তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

এ ঘটনায় গতকাল সকালে বিসিআইসির মহাব্যবস্থাপক (এম.আই.এস) শাহনাজ বেগমের নেতৃত্বে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি কারখানা পরিদর্শনে আসেন। তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন বিসিআইসির উপ মহাব্যবস্থাপক প্রশাসন সরোয়ার জাহান ও ব্যবস্থাপক (এল.এম.এস.) কামরুজ্জান শেখ।

এমডিকে অবরুদ্ধ করার ঘটনায় পুরো প্লান্টে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে শুক্রবার থেকে কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শেষে আবারও উৎপাদন শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ খান।

ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রণ, পানি সরবরাহে অনিয়ম, বাসা ভাড়া, ওভারটাইমসহ নানা অনিয়মে রাষ্ট্রীয় সর্ব বৃহৎ এ সার কারখানা জর্জরিত বলে অভিযোগ রয়েছে। এ কারখানার পাশেই রয়েছে ডিএপি সারকারখানা। এ কারখানায় শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক প্রতিমাসে ৫৪ থেকে ৫২ ঘণ্টা ওভারটাইম পেয়ে থাকেন। কিন্তু সিইউএফএল সার কারখানার শ্রমিকেরা ৮০ থেকে ১০০ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম ভোগ করে থাকেন বলে জানা গেছে।

সিইউএফএল সূত্রে আরো জানা য়ায়, শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক প্রতিমাসে সর্বোচচ ৫৬ ঘণ্টা ওভারটাইম পাওয়ার কথা। কিন্তু সিইউএফএল সার কারখানায় সে নিয়ম মানা হয় না। দীর্ঘদিন ধরে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে শ্রমিকেরা নিয়মের অতিরিক্ত অভারটাইম বিল নিয়ে থাকেন। এ কারখানায় এমন শ্রমিকও আছেন যারা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব বিস্তার করে এক’শ ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম সুবিধা ভোগ করে থাকেন। ওভারটাইমের এই অনিয়মের ব্যাপারে শ্রম আইম অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে বিসিআইসি নির্দেশ প্রদান করা হয় বলে জানা যায়। তারই ধারাবাহিকতায় বিসিআইসি ও সিইউএফএল পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অতিরিক্ত ওভারটাইম (বিল) বিধি মোতাবেক কর্তন করার ব্যবস্থা নিলে শ্রমিকেরা তাতে আপত্তি তুলে। তার প্রতিবাদে শ্রমিকেরা গত বৃহস্পতিবার ব্যবস্থা পরিচালককে ৮ ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

শ্রমিকদের দাবি, কারখানায় উৎপাদনে যাওয়ার জন্য শ্রমিকরা রাতদিন কাজ করে গেলেও বিভিন্ন সময়ে তারা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়। তার ওপর ওভারটাইমের টাকা কর্তন করে শ্রমিকদের হতাশ করেছে। যে কারণে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা এমডিকে অবরুদ্ধ করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহীদুল্লাহ খানা জানান, শ্রম আইন অনুযায়ী একজন শ্রমিক প্রতিমাসে সর্বোচচ ৫৬ ঘণ্টা ওভারটাইম পাওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ম কার্যকর করতে বিসিআইসি ও সিইউএফএল পরিচালনা বোর্ডের নির্দেশনা রয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন বিভাগে শ্রমিকদের ওভারটাইম বিল যাছাই-বাছাই করে আংশিক কর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। এতে শ্রমিকরা এসে আমাকে দপ্তরে অবরুদ্ধ করে অফিসের টেলিফোন, বিদ্যুত লাইন কেটে দেন। বিষয়টি আমি ভূমিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগে জানানোর পর বিসিআইসি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। শুক্রবার ৩ সদস্যের তদন্ত টিম কারখানায় আসেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহক্কানি কর্পোরেশনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধমাঠজুড়ে কৃষকের স্বপ্ন