রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডে (সিইউএফএল) ছোট ট্রাকের পরিবর্তে বড় ট্রাকে করে সার পরিবহনের বাধ্যবাধকতা দিয়ে জারি করা নতুন কার্যাদেশে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পরিবহন মালিক, চালক–শ্রমিকেরা। নতুন নিয়মে লোড–আনলোডে অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি মজুরিও বেড়ে যাবে দাবি করে পরিবহন মালিক–শ্রমিকেরা এ নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। আগে প্রতি ট্রাকে ৫ থেকে ৮ মেট্রিক টন সার পরিবহন হলেও এখন বলা হচ্ছে বড় ট্রাকে করে ১০ থেকে ২০ মেট্রিক টন সার পরিবহন করতে হবে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, কারখানার স্বার্থে খরচ ও সময় বাঁচাতে এ কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে পরিবহন ঠিকাদার দক্ষিণ চট্টগ্রাম ট্রাক মালিক সমিতি, বন্দর আনোয়ারা পশ্চিম পটিয়া ট্রাক মালিক সমিতি, চট্টগ্রাম জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও রাঙাদিয়া উত্তর বন্দর ঠিকাদার শ্রমিক ইউনিয়ন নতুন কার্যাদেশ বাতিল চেয়ে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখতে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এবং সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট লিখিত আবেদন জানিয়েছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের লিখিত আবেদনে জানা যায়, সিইউএফএল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কারখানা হতে প্রতি গাড়িতে ৫ থেকে ৮ টন করে সার পরিবহনের নিয়ম ছিল। কিন্তু সমপ্রতি সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ পূর্বের নিয়ম বাতিল করে নতুন নিয়মে আহ্বানকৃত দরপত্রে ‘গ’
কাজের ১.৭ নং শর্তে উল্লেখিত বিধি মোতাবেক প্রতি ট্রাকে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ২০ টন পর্যন্ত (সার পরিবহনের নিয়মে) ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাকের সক্ষমতা সনদ দাখিল সাপেক্ষে সার পরিবহনের কার্যাদেশ আহ্বান করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন পূর্বের নিয়মে সার পরিবহনের স্থানীয় পরিবহন ঠিকাদার, মালিক শ্রমিকরা।
শ্রমিকদের দাবি সিইউএফএলের জন্মলগ্ন থেকে তারা প্রতি গাড়িতে ৫টন থেকে ৮টন পর্যন্ত সার পরিবহন করে আসছেন। এ নিয়মে একটি গাড়ি লোড–আনলোড করতে শ্রমিকদের ১০–১৫ মিনিট সময় লাগতো; কিন্তু নতুন কার্যাদেশ অনুযায়ী একটি ট্রাক লোড–আনলোড করতে ৪০–৪৫ মিনিট সময় লাগবে। এতে আগের চেয়ে বেশি শ্রমিক প্রয়োজন হবে। আর ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি এবং সাধারণ ট্রাক দিয়েও বর্তমান নিয়মে সার পরিবহন সম্ভব হবে না। তাই সাধারণ ঠিকাদার, শ্রমিক সকলের স্বার্থে মানবিক বিবেচনায় এই আদেশ বন্ধ করে পূর্বের নিয়ম বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তারা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন।
এ বিষয়ে রাঙাদিয়া ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সিইউএফএলের শুরু থেকে নিয়ম অনুযায়ী প্রতি গাড়িতে ৫ থেকে ৮টন পর্যন্ত সার পরিবহন করে আসছি আমরা মালিক শ্রমিকেরা। কিন্তু হঠাৎ করে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত আসে প্রতি গাড়িতে ১০ টন থেকে ২০ টন পর্যন্ত সার পরিবহন করার। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হলে আমরা ঠিকাদার, গাড়ি মালিক, চালক, হেলপার ও শ্রমিকরা মারাত্মক ক্ষতির শিকার হব। বর্তমানে সার পরিবহন কাজে আমাদের ৬২টি গাড়ি, ১৫০–২০০ চালক–হেলপার এবং ৩ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। তাই পূর্বের নিয়মে সার পরিবহনের দাবি জানিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি।
এ বিষয়ে সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, মূলত কৃষকদের কাছে সার পৌঁছানোর ক্ষেত্রে দাম কমানোর জন্য এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি কারখানা থেকে ট্রাকে করে টেন্ডার অনুযায়ী ৬–৮ টন সার নিয়ে একটু দূরে গিয়ে তারা ট্রাকের সার অন্য একটা বড় ট্রাকে আবার লোড–আনলোড করে ১৫–২০ টন করে লোড করে পরিবহন করে থাকে। যার কারণে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তাই পরিবহন খরচ কমাতে সরাসরি কারখানা থেকে ১০ থেকে ২০ মেট্রিক টন করে সার লোড করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ম কাফকো ও ডিএপি সার কারখানায় ইতিপূর্বে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।