‘সিআরবিতে হাসপাতাল : সবুজ ভূখণ্ড নিশ্চিহ্নের পাঁয়তারা প্রতিহত করুন’

| মঙ্গলবার , ২০ জুলাই, ২০২১ at ৭:৫২ পূর্বাহ্ণ

[দৈনিক আজাদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা আমাদের ইমেইলে ‘নাগরিক মতামত’ পাঠিয়েছেন, তাঁদের সে-সব মতামত আমরা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আজ প্রকাশিত হলো ৬ষ্ঠ কিস্তি।]

সিআরবি নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি, চট্টগ্রামবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের নিরাপদ স্থান সিআরবিতে মাফিয়া চক্রের প্রস্থাবিত হাসপাতাল নির্মাণের ষড়যন্ত্র আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে হবে। তবে, আমরা চট্টগ্রামে হাসপাতাল ও চাই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ধ্বংস করে এবং নগরবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের একমাত্র নিরাপদ স্থানকে ধ্বংস করে সিআরবিতে নয়–শহরের পার্শ্ববর্তী যে কোন এলাকায় এ ধরণের হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলে দেশ, জাতি, জনগণও যেমন উপকৃত হবে তেমনি, চট্টগ্রামের চিকিৎসা সেবায় আসবে বিশ্বমানের আমূল পরিবর্তন। আশা করি এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে। মাফিয়া চক্রের লোলুপ দৃষ্টি থেকে ঐতিহ্যবাহী সিআরবিকে বাঁচাতে হবে। একমাত্র সিআরবি এলাকায় বর্তমানে চট্টলবাসীর জন্য প্রকৃতির উপভোগ করার এবং বাঙ্গালীর সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মিলন স্থান। এইবার এই স্থান শেষ করে দিতে পারলে হাজার বছরেও এ পরিবেশ আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম আর ফিরে পাবে না। এ জন্যই দল, মত নির্বিশেষে সকলকে একই কণ্ঠে সোচ্চার হওয়ার মাধ্যমে আমাদের প্রাণের সম্পদ সিআরবি কে রক্ষা করতে হবে।

ভূমি দস্যুর কবলে সিআরবি
এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম মিয়া

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টলার ফুসফুসখ্যাত ছোট বড় পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে কমবেশী ২১০ একর জুড়ে নান্দনিক সিআরবি এলাকায় ভূমি খেকো নব্য মাফিয়া চক্র ও ভূমি দস্যুর কবলে পড়েছে। বেসরকারী হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজকে ৬ একর জমি বরাদ্দ আই ওয়াশ মাত্র। এই মাফিয়া চক্র লালকুটির এবং নীল কুটিরে বসে উপরের মহল বিশেষকে ম্যানেজ করে ভূমি বরাদ্দ পত্র হাসিল করেছে। পর্যায়ক্রমে পুরো সিআরবি গ্রাস করবে। কিন্তু চট্টগ্রামে সর্বস্থারের জনতা ষড়যন্ত্রের এই হীন নীল নকশা বাস্তবায়ন করতে দিবে না। চলমান সিআরবি পরিস্থিতি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সিআরবিতে হাসপাতাল স্থাপন পুনর্বিবেচনা করুন
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিআরবিতে হাসপাতাল ও কলেজ স্থাপনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে চটগ্রামের পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সচেতন সব মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। সিআরবি’র শতবর্ষী বৃক্ষ নিধনের আশংকা তাদের। নগরবাসী বিকেলে কিংবা অবসর সময়ে বিশুদ্ধ বাতাস ও নির্মল বিনোদনের জন্য এখানে আসেন। অনেকে শারীরিক সুস্থতার জন্য ব্যয়াম বিশেষ করে হাঁটা হাঁটি করেন। এতে নগরবাসী উপকৃতই হন। এমনিতে নগরে খোলা জায়গা সংকুচিত হয়ে আসছে বা নেই বললেই চলে। হাসপাতাল যেমন প্রয়োজন তেমনি পরিবেশ সুরক্ষা ও সসুস্বাস্থের জন্য উপযুক্ত পরিবেশও জরুরি।
তাই বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবিতে শতবর্ষী বৃক্ষনিধন করে রেলওয়ের প্রস্তাবিত হাসপাতাল ও কলেজ স্থাপন না করে সুবিধামত জায়গায় এই প্রতিষ্ঠানগুলো নির্মাণ করার দাবি জানাই। পরিবেশ সুরক্ষায় এবং নগরবাসীর মানসিক প্রশান্তির জন্য এই জায়গাটি সংরক্ষণের দায়িত্ব সকলের।
এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি। দাবি জানাচ্ছি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার।

সবুজকে ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ সুস্থ থাকার পথে অন্তরায়
হাসান মেহেদী

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার নামে ‘প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম’ এই আপ্তবাক্যকে অনুসরণ করে যাঁরা সুস্থ থেকে হাসপাতালমুখো না হওয়ার মনোবাঞ্ছায় প্রশান্তির সতেজ নিঃশ্বাস নিতে সবুজের কাছে, চট্টগ্রামের হৃৎপিণ্ডখ্যাত ‘সিআরবি’-তে ছুটে আসেন, তাঁদের সেই প্রাণের সবুজে নির্দয় শ্যেনদৃষ্টি কেনো? কেনো নির্মল ‘অঙিজেন উৎপাদন কেন্দ্র’ বলে বিবেচিত সিআরবি এলাকাতেই হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করতে হবে? কেনোইবা বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য, প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকাকেই হাসপাতালের জন্য অবিকল্প বলে ধরে নিতে হব? এসব উত্তর জানা প্রশ্নগুলোই যেনো বিবেকবান মানুষের সামনে বড় দেখা দিয়েছে এখন। অসুস্থকে সুস্থ করার জন্যে হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ অভিনন্দনযোগ্য কিন্তু সুস্থ থাকার উপায় হিসেবে সর্বজন স্বীকার্য সবুজকে ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণ সুস্থ থাকার পথে অন্তরায় বলেই বিবেচিত হবে। একারণেই আমাদের দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে উচ্চারণ- হাসপাতাল চাই, সবুজ চাই তারও আগে।

সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের প্রচেষ্টার প্রতিবাদ জানাই
লিপি বড়ুয়া

প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ আমি তাই বরাবরই সিআরবি এর সাথে আমার হৃদয়ের বন্ধন। আমার মতো হাজারো প্রকৃতিপ্রেমী রয়েছে যাদের কাছে সি আর বি প্রাণের স্পন্দন। আমরা স্বীকার করছি জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে হাসপাতালের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিন্তু সেটা অবশ্যই সিআরবি তে নয়। সেটা অন্য কোনো পরিত্যক্ত স্থানে হোক। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত, বর্ষীয়ান বৃক্ষরাজিতে ঘেরা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এবং অসংখ্য কীট পতঙ্গের বসবাস এই সিআরবি তে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের পদচারণা এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের উম্মুক্ত স্থান সি আর বি শিরীষ তলা। আমাদের আনন্দময় শ্বাস গ্রহণের প্রিয় স্থান এই সিআরবি সাত রাস্তা মোড়। আমাদের ফুসফুস ছিঁড়ে হাসপাতাল নির্মাণের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাই। এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছে তাঁদের ধিক্কার জানাই। চট্টগ্রাম নগরীর মধ্যমনি প্রকৃতির নির্মল ছায়াময় পরিবেশ সি আর বি তে একটু বিশুদ্ধ শ্বাস গ্রহণের আবেদন জানাই পরিবেশ বান্ধব জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে।

চিরসবুজের বুকে যান্ত্রিক কুঠারের আঘাত প্রতিহত করো
শাহীন রেজা

চট্টগ্রামে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের দু’শো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি), কালের আবহে বাঙালি সংস্কৃতির বাতিঘর হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত অপরূপ সৌন্দর্যের আধার, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্যকলা ইতিহাস সমৃদ্ধ সিআরবি এলাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের একটি হাসপাতাল থাকার সত্বেও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ-হাসপাতাল নির্মিত হলে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাস্তুসংস্থানের দারুণ ক্ষতি হবে। নগর জীবনের শত ব্যস্ততা উপেক্ষা করে একদণ্ড শান্তির খোঁজে এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা অঞ্চলে নির্মল বায়ু গ্রহণে আসা মানুষগুলো আজ বড়ই হতাশ ও অবসাদগ্রস্ত। ক্রমবর্ধমান অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও যান্ত্রিকসভ্যতার আগ্রাসনের মাঝে এই এক চিলতে সবুজ ভূখণ্ডে আজ হায়েনাদের লোলুপ দৃষ্টি, যা এ চট্টলার সহজ সরল জনগণ মেনে নিবেন না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে বিনীত নিবেদন, অতিসত্বর এ সবুজ ভূখণ্ড নিশ্চিহ্নের পাঁয়তারা প্রতিহত করুন। নতুবা, আমাদের নিঃশ্বাস ফেলার এ অবারিত আঙিনা, বুক ভরে বাতাস নেওয়ার এক চিলতে দক্ষিণের এ বারান্দা রক্ষা করতে ব্যর্থ হলে পরবর্তী প্রজন্ম নিশ্চয়ই আমাদের ক্ষমা করবে না।

সি আর বি কে বাঁচান
মো মারুফ মজুমদার

ব্রিটিশ আমল থেকে সিআরবি ভবনকে ঘিরে শতবর্ষী গাছ-গাছালি, এক প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে এখানে। নগরবাসী স্থানটিকে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখানে বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে সিআরবিতে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল ও ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ নির্মাণের সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অপরিণামদর্শী এমন উদ্যোগে হতাশা ফুটে উঠেছে প্রকৃতিপ্রেমী ও জনগণের মধ্যে। স্বর্গসম এ জায়গাটিতে হাসপাতাল হলে এখান থেকে বিতাড়িত হবে প্রকৃতির ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণ, কাটা পড়বে গাছ-গাছালি, গড়ে উঠবে দোকানপাট, নগরবাসীর মুক্ত বাতাস গ্রহণের স্থান পরিণত হবে জনবহুল অস্বাস্থ্যকর স্থানে। উক্ত মনোরম এলাকায় একবার বাণিজ্যিক আগ্রাসন শুরু হলে সেটা আর আটকানো যাবে না। চট্টগ্রামে ঢাকার মতো রমনা পার্ক নেই, বোটানিক্যাল গার্ডেন নেই। গাছ-গাছালিতে আচ্ছাদিত নয়নাভিরাম এই উন্মুক্ত পরিসরটিও যদি অবশেষে না থাকে, মানুষ যাবে কোথায়! এমতাবস্থায় বিজ্ঞমহলের মতামত এবং নগরবাসীর প্রতিবাদ আমলে নিয়ে যেকোনো মূল্যে সিআরবির প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী।

কোন দামালের ছেলে তুমি?
মিনু মিত্র

কে রে তুই ? কোন দামালের ছেলে? আমার শহর, আমার নগর, আমার সবুজ, তোর হাতের মুঠোয় নিয়ে খেলবি! তুই কি বড্ড অবুঝ তোর সাহস দেখে থমকে যায়, আমার নগর প্রাণ হারাবে, তুই কি ভাবলি কে দাঁড়াবে? কে রে তুই? কোন দামালের ছেলে? মাতাল হাওয়ায় ঘুরছিসরে তুই, টাকার গন্ধে পাগল, এমন কাণ্ড করলে তোকে, সবাই বলবে ছাগল। কে রে তুই? কোন দামালের ছেলে? তোর ভিটে মাটি দে না ছেড়ে, হাসপাতালে জন্য। আমার সবুজ ধংস করে করছিস কেন পণ্য? কে রে তুই? কোন দামালের ছেলে? নরপশু হয় যে এমন, তোর চেতনার রং যেমন। তুই তো বোকা বুদ্ধি শূন্য, তাই তো হলি পাপে পুণ্য। কে রে তুই? কোন দামালের ছেলে? প্রকৃতিকে করলে ধ্বংস, তুই নিজেই হবি তার শিকারের অংশ। দুইটি বছর করলি পার, বুঝলি না তাও প্রকৃতির বিচার। নিজের ঘরে আসলে অন্ধকার, বুঝবি তখন অঙিজেনের কী দরকার। সময় থাকতে শুধরে দাঁড়া নইলে হবি স্বজন হারা।

এক মুঠো মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে চাই
এস এম আব্দুল আজিজ

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উত্তরাধিকারী এই নব্য বেনিয়া গোষ্ঠীর শকুনি নজর পড়েছে, আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামে একমাত্র নিঃশ্বাসের জায়গা ‘সিআরবি’ এর মুক্ত প্রাকৃতিক অবস্থানের প্রতি। আর এর সাথে যোগ হয়েছে এদের দেশের ঘরের শত্রু বিভীষণ এই দেশেরই কিছু অসাধু বেনিয়া যারা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে থেকে কচ্ছপের মতো এবং সময়মত নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মুখ তোলে আর ওই বেনিয়াদের সহায়তা করে। এই কায়েমী চরম স্বার্থবাদী মহলকে সমূলে স্তব্ধ করে দিতে হবে এবং তাদের সমস্ত ক্ষমতার কালো হাত ভেঙ্গে দিতে হবে যাতে করে তারা আর কখনো শুধু ‘সিআরবি’ নয় আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের আর কোন নাগরিক স্থাপনায় কিংবা পরিবেষ বিপর্যয়কর কোন স্থাপনায় হাত দিতে না পারে।
আসুন, আমরা সবাই আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজ সম্মিলিত কন্ঠে আওয়াজ তুলি ‘সিআরবি’ কে বিশেষ মুক্ত অঞ্চল/সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে এবং আমাদের প্রিয় চট্টগ্রামকে ও চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজকে প্রকৃতির বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ‘সিআরবি’ তে কোনো রকমের বাণিজ্যিক স্থাপনা স্থাপন করে যাবে না। এবং আমরা তা করতে দেবো না।

ঐতিহ্য সংরক্ষণে চাই সুষ্ঠু পরিকল্পনা
মুহাম্মদ নুর রায়হান চৌধুরী

নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম শহর চট্টগ্রাম। বলা হতো প্রাচ্যের রাণী। চট্টগ্রামে পাহাড়, সমতল, নদী, সমুদ্র সবকিছুর সম্মিলনে একাকার। অথচ চট্টগ্রামের সঙ্গে জলাবদ্ধতার সম্পর্কের গভীরতা যুগ যুগ ধরে। ভারি বর্ষণে তলিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম নান্দনিকতা হারায়। একদিকে জোয়ারের পানি, অপরদিকে বৃষ্টির পানি, উভয়টি মিলে নগরবাসীর জীবনাচারে যেন নাভিশ্বাস। এই যখন অবস্থা চট্টগ্রামের, তখন শ্বাসটাও বন্ধ করতে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত কেন্দ্রীয় রেলওয়ে ভবন (সিআরবি) এলাকায় হাসপাতাল তৈরির প্রকল্প।
১৮৯৫ সাল থেকে তৎকালীন বৃটিশ বেঙ্গল রেলওয়ের সদরদফতর এবং বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদরদফতর সিআরবি। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই সিআরবি অনন্য সুন্দর ও প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা একটি ঐতিহাসিক এলাকা। সবুজে ঘেরা সারি সারি বৃক্ষের রাজপ্রাসাদ। কোন গাছের বয়স একশ, কোনোটির বয়স ততোধিক।
সমপ্রতি সিআরবি এলাকায় ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ সাইনবোর্ড লাগিয়ে হাসপাতাল নির্মাণের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে চট্টগ্রামের পরিবেশবাদীরা। একজন সেচ্ছাসেবী, সমাজকর্মী হিসেবে আশাকরি ইতিহাস, ঐতিহ্যের এই বৃক্ষপ্রাসাদ সংরক্ষণের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ফিরিয়ে আনবে সর্বমহলে স্বস্তি।

ফুসফুসের বিনিময়ে চিকিৎসাকেন্দ্র কাম্য নয়
আবদুস সামাদ রিফাত

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের এক অনন্য সুন্দর মনোমুগ্ধকর পরিবেশ হলো সিআরবি এলাকা। যে কারো মন ভাল করে দেবার মত একটি স্থান সিআরবি। এই ইট পাথরের রুক্ষ্ম কঠিন শহরের উঁচু উঁচু দালান আর শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভিড়ে শতবর্ষী বৃক্ষে ঘেরা “সিআরবি”কে এক টুকরো অঙিজেন প্ল্যানেট বলা চলে।
এখানে রয়েছে শতবর্ষী গাছ আবার কোন কোনটির বয়স ১৫০ বছরেরও বেশী। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত এই নৈসর্গিক এলাকা। এই শিরিষ তলায় প্রতি বছর বাংলা নববর্ষে বসে মেলা, চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বলী খেলা।
নাগরিক জীবনে ক্লান্ত নগরবাসী একটু পার্থিব জগতের সকল ব্যস্ততা আর জীবনের হিসেব নিকেষে যখন ক্লান্ত, শ্রান্ত তখন বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য এখানে এসে বসে। এক একটি গাছের দিকে তাকালে যেন নিজের অজান্তেই হারিয়ে যায় কোন অজানা অতীতে, শেকড়ের সন্ধানে মন উজার হয়ে যায়। ফুসফুসের বিনিময়ে চিকিৎসা কেন্দ্র কি আমাদের কাম্য? বেঁচে থাকুক শতবর্ষী শিরিশতলা, বেঁচে থাকুক সিআরবি, বেঁচে থাকুক বন্দর নগরী চট্টগ্রাম। জীবনে জীবন থাকুক অটুট আবহমান কাল।

চলো একসাথে আজ ঠেকাই
মনজু আলম

দুর্বল ফুসফুসে দম নেওয়া ভার , বিশুদ্ধ বায়ুর অভাব চলে হাহাকার, মনের আকুতি ঝরে বারেবারে তাই, এক চিলতে সবুজ ভূমি বৃক্ষ পাবার। বড়ই আকাল আজ অঙিজেনের সমগ্র দুনিয়ায়, সবুজ প্রকৃতি তাও উদার হস্তে কিছু কিছু দিয়ে যায়। সালোকসংশ্লেষণে প্রশ্বাসে টানে দূষিত বাতাস কার্বন মিশ্রিত যত, ফিরিয়ে দেয় প্রতি নিঃশ্বাসে বিশুদ্ধ বায়ু বিষাক্ততা শুষে নেয় কত কত! স্বার্থান্বেষী লোভাতুর বেজায় চতুর এমনই লোক আছে কিছু, মাথা মোটা মেধাহীন কর্তা মানুষ নাচে তার পিছু পিছু! চাটগাঁর ফুসফুস শিরিষতলা কুচক্রির নজরে আজ, ওরা ভূমিদস্যু অর্বাচীন মুখোশধারী ভয়াল থাবার বাজ। সবুজ বৃক্ষের মত অমূল্য বন্ধু কোথাও তো আর নাই, সি আর বি তে সেই বৃক্ষ নিধন হবে, দেবনা হতে, চলো একসাথে – তারে আজ ঠেকাই।

ঐতিহ্য রক্ষা করতে হবে
মৃণালিনী চক্রবর্তী

সি আর বি’র প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শতবর্ষী বৃক্ষদের সবুজের বাহার নিয়ে চিত্রপট মুগ্ধ করার দৃশ্য অনন্য। যেখানে পাখিরা আপনমনে উড়ে গান গায়। মানুষ ও ছায়াতলে ক্লান্তি মুছে স্বচ্ছ বাতাসে দুঃখ ভুলে সুর তোলে। এই প্রকৃতির দান। শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় মানুষের মুক্ত হাঁটার, মুক্ত বাতাস, বাঙালির শুদ্ধ সংস্কৃতি উৎসব লালনের এই প্রাণকেন্দ্র। মানুষের শুদ্ধ চিন্তার উম্মোচন হোক। শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় সকল প্রতিকূলতাকে উৎপাটন করা নগরপিতার দায়িত্ব।
চট্টগ্রামের ঐতিহ্য সিআরবি। তার রক্ষার দায়িত্ব সরকার জনগণ সকলের। এই চট্টগ্রাম এর লালিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক চারণক্ষেত্র। এর মমত্বগাথায় চট্টগ্রামের অনেক ঐতিহ্য লালিত যুগ যুগ ধরে। ধ্বংস করা ইতিহাস ঐতিহ্যতে হাত দেওয়া বন্ধ করুন, রক্ষা করুন।

সিআরবিতে হাসপাতাল নয়
জোনাকী দত্ত

ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি একটি গাছ কাটলে দুইটা লাগাতে হবে। কিন্তু বাস্তবে প্রয়োজনে হোক বা দুর্বৃত্তরা গাছ কেটে সাবাড় করছে, লাগানোর কোন লক্ষণই দেখা যায় না। মানুষ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে। গাছ আমাদের অঙিজেন থেকে শুরু করে সব মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা) পূরণ করছে। অন্যদিকে আমরা সেটা বুঝে ও না বুঝার ভান করে চলেছি। সিআরবি তে হাসপাতাল তৈরি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে বিশিষ্টজনেরা বিভিন্ন মতামত দিয়ে আসছেন। ‘দৈনিক আজাদী’ পত্রিকার মারফতে আমরা সবার মতামত জানতে পারছি এবং অনেক অজানা তথ্য সিআরবি সম্পর্কে জানতে পারছি। আমিও সকলের সাথে চট্টগ্রামের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে সহমত পোষণ করে বলছি, সিআরবি এর মত এমন নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা, প্রাচীন বৃক্ষরাজির সমারোহ, যেখানে মানুষ প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়, বিভিন্ন পাখির আশ্রয়স্থল, সাত রাস্তার মোড় সম্বলিত সবুজেঘেরা জায়গায় হাসপাতাল নয়, বরং সেখানে কিভাবে আরো গাছ লাগিয়ে পরিবেশ রক্ষা ও মানুষের অঙিজেনের ভান্ডার ও প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য সবুজ অরণ্য সৃষ্টি করা যায় সেটাই কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

পরিবেশের ক্ষতি করে হাসপাতাল নয়
সাইফুল্লাহ্‌ কায়সার

সিআরবির শিরীষতলার এই জায়গাটি চট্টগ্রামের “ফুসফুস” হিসেবেই পরিচিত। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শতবর্ষী বৃক্ষ ঘেরা পাহাড়, টিলা ও উপত্যকা ঘেরা এ এলাকাটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রাণির আবাস। ছায়াঘেরা পরিবেশ নগরবাসীর প্রাতঃ ও বৈকালিক ভ্রমণ এবং বিনোদনের কেন্দ্রের জন্য এই স্থানটি সর্বদা নগরবাসীর মন কেড়েছে।
আসুন পরিবেশ সম্পর্কে ইসলাম কি বলেছে জেনে নিই। আল্লাহতায়ালা পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় ও জীবজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় সৃষ্টি করেছেন গাছপালা ও পর্বতমালা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং উৎপন্ন করেছি নয়নাভিরাম বিবিধ উদ্ভিদরাজি। এটি আল্লাহর অনুরাগী বান্দাদের জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ’ (সূরা কাফ : ৭-৮)। গাছপালা সংরক্ষণের নির্দেশ হুশিয়ারি দিয়ে নবীজি (দ.) বলেন, যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটবে, আল্লাহ তার মাথা আগুনের মধ্যে নিক্ষেপ করবেন’(আবু দাউদ : ৫২৪১, বায়হাকী: ৬/১৪০)।
হাসপাতাল হোক আমরা চাই। কিন্তু পরিবেশের ক্ষতি করে নয়। চট্টগ্রাম শহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের অনেক জায়গা এখনও পরিত্যক্ত হিসেবে পড়ে আছে সেখানেই হাসপাতাল নির্মাণ করা হোক। ইতোমধ্যে হাসপাতাল নির্মাণের বিপক্ষে দেশের বিশিষ্টজন সহ গণ মানুষের দাবীতে পরিণত হয়েছে। আশাকরি, গণ মানুষের দাবীকে উপেক্ষা করে হাসপাতাল নয়, সেদিকে কর্তৃপক্ষ সজাগ দৃষ্টি দিবেন।

সৌন্দর্য বিনাশ করে হাসপাতাল চাই না
কামরুন নাহার ঝর্না

জীবন ও জীবিকা এক সরলরেখায় চলে জানি। আল্লাহ প্রকৃতিতে অসীম নিয়ামত দিয়ে রেখেছেন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য। অঙিজেন কারখানা সৃষ্টির ক্ষমতা দিয়েছেন গাছপালা কে। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে মানুষ গাছপালা কেটে রাস্তা ঘাট, দোকানপাট, চাষাবাদ, ঘরবাড়ি, নগরায়ন, আধুনিকীকরণ করছে স্বাভাবিকীকৃতভাবে। এখানেও পরিকল্পনার খুব বেশী প্রয়োজন অনুভব করি আমরা। সুস্থ ভাবে, সবল ভাবে বেঁচে থাকতে হলে চিত্তের সুস্থতা আগে। সুস্থ দেহ সুস্থ মন। সুস্থ, কর্মঠ জনসংখ্যা এক সময় দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়।যারা দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে সহায়তা করে।
চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক আগে থেকেই হারাতে বসেছে পাহাড় আর গাছ পালা নিধনের মাধ্যমে। শহরের প্রানকেন্দ্রে অবস্থিত সি আর বির শত বর্ষীয়ান গাছগুলি এখনও কিছুটা প্রশান্তির ছায়া দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার শিশু, কিশোর থেকে যুব বৃদ্ধার মিলন মেলা এই চত্বর।এর সৌন্দর্য বিনাশ করে হাসপাতাল গড়ে উঠুক এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়। হাসপাতাল হবে অন্য কোন পরিত্যক্ত বিরান ভূমিতে। সেখানের গড়ে উঠবে নগর, জনপদ। সিআরবি আমাদের সৌন্দর্যস্বরূপ।এই রূপ হাজার বছর চট্টগ্রামবাসীর অধিকারে থাক।

নির্ভয়ে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ দেবেন
মর্জিনা আখতার

পাহাড়-নদী-সাগর বিধৌত চট্টগ্রাম অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। তার সাথে সিআরবির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংযোজিত হয়ে চট্টগ্রামকে করেছে আরো আকর্ষণীয় ও রূপসী। আজ সারা বিশ্বের আপামর জনসাধারণ বুঝতে পারছে অঙিজেন কী, এবং কতো প্রয়োজনীয়। সিআরবি দিচ্ছে নির্মল অঙিজেন, তাই এটি ‘চট্টগ্রামের ফুসফুস’ নামে খ্যাত। আগে যারা প্রকৃতিকে ধ্বংস করেছে আজ তারা অনুতপ্ত। ‘করোনা’ তাদের যথোচিত শিক্ষা দিয়েছে। অবাক লাগছে কোন ভিনদেশী নয়, আমরাই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছি মানুষের স্বাভাবিক জীবনকে সংকটে ফেলবার জন্য। চট্টগ্রামে এবং চট্টগ্রামের বাইরে যারা থাকেন তারা যদি কোন কাজে একবার ঐ পথে যান তবে সি আর বি দেখতে দেখতে যান (লোকমুখে প্রচলিত সাত রাস্তার মাথা) আর মুগ্ধ চোখে এর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। এই চমৎকার কেন্দ্রে বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের জমজমাট অনুষ্ঠান ও মেলা শিরীষতলায় বাংলা গানের মনমাতানো হৃদয় ছোঁয়া সুর মানুষকে চুম্বকের মতো টানে। সুতরাং এখানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার মতো অন্যায় পদক্ষেপ কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। চট্টগ্রাম ন্যায্য অধিকার আদায়ের অন্যতম সূতিকাগার। অতএব চট্টগ্রামের একজন নাগরিক হিসেবে চট্টগ্রামবাসীর পক্ষে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবিনয়ে নিবেদন করছি, সিআরবি এর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নষ্ট করে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ বন্ধ করবার জন্য তিনি যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে চট্টগ্রামবাসীকে কৃতজ্ঞ করেন এবং অবারিত সবুজের নির্মল বাতাস থেকে নির্ভয়ে নিঃশ্বাস নিবার সুযোগ অব্যাহত রাখেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনার শুরু থেকে আ. লীগের নেতাকর্মীরা মানুষের পাশে আছে
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় মাতামুহুরী নদীর ভাঙন রোধে পাউবোর উদ্যোগ