চট্টগ্রামের সিআরবিতে গাছপালা কেটে ও পরিবেশ নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতিসহ (বেলা) ৬টি সংগঠন। বিশেষ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এলাকা, জাতীয় ঐতিহ্য স্মারক বৃক্ষ, কুঞ্জ বন ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক স্থান ঘোষণা এবং শতবর্ষী গাছগুলোকে স্মারক বৃক্ষ হিসেবে ঘোষণার দাবিও জানানো হয়েছে নোটিসে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, রেলওয়ের মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধান বনসংরক্ষক, রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার পূর্বাঞ্চল, বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনার, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড বরাবরে এ নোটিস দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফরম অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট, নিজেরা করি ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) ৫ সংগঠনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ কবীর এ লিগ্যাল নোটিস পাঠিয়েছেন। বেলা’র নেটওয়ার্ক মেম্বার আলীউর রহমানের স্বাক্ষরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, সমপ্রতি পত্র-পত্রিকার সংবাদে দেখা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বেসরকারি সংস্থা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ এন্ড কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে ৬ একর জায়গার উপর ৫শ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ও ১শ আসন বিশিষ্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। যদিও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনাতে সিআরবি এলাকাকে উন্মুক্ত স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবি এলাকায় রেলওয়ের হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মিত হলে পাহাড়-টিলা এবং অসংখ্য গাছপালা কাটা পড়বে। এতে সিআরবি অঞ্চল তার শত বছরের বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং নির্জন এলাকাটি কোলাহলযুক্ত ব্যস্ত এলাকায় পরিণত হবে। জীববৈচিত্র্য তাদের বাসস্থান হারাবে। তাই সিআরবি এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রয়োজনে অন্যত্র এ হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানানো হয়েছে নোটিসে।
বিএইচআরএফ এর লিগ্যাল নোটিশ : একই ঘটনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব, রেলসচিব, মহাপরিচালকসহ আটজনকে ডিমান্ড অব জাস্টিস নোটিস (লিগ্যাল নোটিশ) পাঠিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন (বিএইচআরএফ)। বিএইচআরএফ পরিচালক, ট্রাস্টি ও চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এএম জিয়া হাবিব আহসানের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ডাক ও ই-মেইলযোগে এই নোটিস পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।
আগামী সাতদিনের মধ্যে পরিবেশ বিনষ্টকারী এই প্রকল্পের স্থান অন্য কোনো যৌক্তিক জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে নোটিসে। যাতে পরিবেশ, ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যহানি না হয়। প্রকল্পের স্থান পরিবর্তনে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে বিএইচআরএফ’র পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপযুক্ত আদালতে মামলা কিংবা উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে নোটিসে।
অ্যাডভোকেট এএম জিয়া হাবিব আহসান জানান, ঐতিহাসিক স্থাপনা ধ্বংস, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট ও গাছ নিধন করে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সংবিধানের ১৮-ক ও ২৪ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে। যেখানে পরিবেশ ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনায় স্থানসমূহকে সংরক্ষণের কথা স্পষ্ট বলা আছে।