[দৈনিক আজাদীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে যাঁরা আমাদের ইমেইলে ‘নাগরিক মতামত’ পাঠিয়েছেন, তাঁদের সে-সব মতামত আমরা পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার চেষ্টা করবো। আজ প্রকাশিত হলো পঞ্চম কিস্তি।]
সবুজে বাঁচুক প্রাণ
তারিফা হায়দার
সবুজে ভরা এই শহরটা অবুঝ লোকের আস্তানা, সবুজগুলো লুটতে যে চায় চিল, শকুন আর হায়েনা। পাহাড়, সাগর, বন বনানী, শতবর্ষী গাছপালা, প্রাণ জুড়ানো রূপের বাহার অরন্যের এক মিলনমেলা। বিপ্লবীদের চারনভূমি প্রানের শহর চাঁটগা, তার কলিজায় আঘাত এলে ফিরিয়ে দেবো কয়েকশো ঘা। সবুজ ভরা সিআরবি আর সবুজ শিরিষতলা, সাক্ষী হয়ে আছে আজও সেসব কিছুই হয়নি বলা। বুকভরে শ্বাস নিতে সবাই আসে এই প্রাঙ্গণে, নাভিশ্বাসে ভরলে জীবন পরপারের দিন গুনে। চাইনা কেউ হারাক সবুজ ইট,পাথরের আড়ালে, প্রানের শহর মরবে কেঁদে সবুজটা তার হারালে।
প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নয়
এস এম মোখলেসুর রহমান
চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কিছু স্থানের মধ্যে পাহাড় বেষ্টিত সিআরবি এলাকা অন্যতম। সাত রাস্তার মোড় নিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ দৃশ্য সম্বলিত এই এলাকায় আছে শতবর্ষী বেশ কিছু গাছ। যা লক্ষ কোটি টাকা খরচ করেও সরকার কিংবা রেলওয়ের পক্ষে এমন নয়নাভিরাম এলাকা গড়ে তোলা সম্ভব না। এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতির দান। কিন্তু আমরা এখন নিজের হাতে সেই প্রকৃতির দানকে ধ্বংস করে গড়ে তুলতে চাচ্ছি অট্টালিকা। যা সম্পূর্ণ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো হাসপাতাল কিংবা স্থাপনা হতে পারে না। সিআরবিতেও হতে পারে না।
হাসপাতাল হলে তার নিরাপত্তার কথা বলে একসময়ে শিরীষ তলাও ডিসি হিলের মতো বন্ধ করে দিবে। সে সময়ে আর কিছু করার থাকবে না। এছাড়া হাসপাতালকে ঘিরে এই এলাকায় গড়ে উঠবে হরেক রকম ব্যবসা। চলাচল করবে অবাধে গাড়ি, সৃষ্টি হবে যানজট। তখন কি নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে শান্তিতে হাঁটা যাবে? বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নেয়া যাবে? তখন এই এলাকা হয়ে উঠবে জমজমাট ব্যবসায়িক এলাকা। অতএব আধুনিক হাসপাতাল নির্মিত হোক অন্য কোনো জায়গায়, সিআরবি তে নয়। সিআরবি থাকবে তার ঐতিহ্য নিয়ে, তার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।
নগর হারাবে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য!
মর্জিনা হক চৌধুরী পপি
সিআরবিতে রয়েছে সাত রাস্তার মোড়, এর সামনে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে সি আর বি ভাবন দাঁড়িয়ে আছে। আরেক পাশে রয়েছে রেলওয়ে হাসপাতাল, আর রয়েছে হাতির বাংলো অপূর্ব স্থাপত্য নিদর্শন। রয়েছে শিরীষ তলা যেখানে প্রতিবছর বৈশাখের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। করোনার কারনে যা দুবছর ধরে বন্ধ রয়েছে। সিআরবি যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামের মানুষদের দিয়ে আসছে বিনোদের আস্বাদন। নাগরিক জীবনের কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তি, আরাম আর মানুসিক প্রশান্তির খোঁজে সময় পেলে মানুষ ছুটে যায় এই সি আর বিতে। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে চায়। সি আর বি কে নগরীর ফুসফুসও বলে। নগরীর এই ফসফুসকে ধ্বংস করে বিশাল হাসপাতাল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এখানে যদি হাসপাতাল স্থাপন করা হয় নগর হারাবে তার প্রকৃতির সৌন্দর্যকে, কাটা পড়বে শতবর্ষী বহু গাছ গাছালি। আমরা হাসপাতাল স্থাপনার বিপক্ষে নয়। হাসপাতাল হোক তবে সিআর বি তে নয়। যেসব সরকারী পরিত্যক্ত জায়গা প্রভাবশালীদের দখলে আছে সেগুলো উদ্ধার করে হাসপাতাল সেখানে বানানো হোক। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার বিনীত আবেদন হাসপাতাল আমরা চাই তবে আমার নগর ফুসফুসকে ধ্বংস করে হাসপাতাল চাই না।
সিআরবির প্রকৃতি স্রষ্টার দান, মাথায় তুলে রাখতে হবে
আজিজা রূপা
মানুষ এবং গাছ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে। একটি গাছ কেটেফেলা মানে আপনি নিজেই নিজের শ্বাসনালী চেপে ধরা। কারণ গাছই তো তার অঙিজেন দিয়ে আমাদের শ্বাসনালী চালু রেখেছে। এই গাছই তো আমাদের বেঁচে থাকার পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেছে। এই গাছই তো আপনাকে সুশীতল ছায়ায় আমাদের একটুকু শান্তি দেয়। সুবাসিত হাওয়ায় প্রশান্তি দেয়। অপরূপ সৌন্দর্যে আমাদের মন রাঙিয়ে দেয়। শহরের হাপিত্তাস জীবনের একটুকু শান্তি, একটুকু প্রশান্তি, আর মন রাঙ্গায় আমাদের চট্টগ্রাম শহরের মাঝে এক টুকরো সবুজ সিআরবি, শিরীষ তলা। এই শিরীষ তলাটা থাক না আজীবন এক টুকরো শান্তি আর প্রশান্তি হয়ে। থাকনা আমাদের বৃক্ষগুলো আমাদের মায়া হয়ে। হাসপাতালের প্রয়োজন আছে কিন্তু সেটা হোক অন্যখানে। শিরীষ তলা, সিআরবি থাক আমাদের অস্তিত্বে, ঐতিহ্যে এবং আজীবন দেখুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের তরে। শতবর্ষীয় গাছ গুলো যেমন আছে তেমনই থাক। প্রকৃতির দানই প্রকৃত দান। তাকে রাখুন মাথায় করে। সিআরবি আছে, থাকবে যুগ থেকে যুগান্তরে। তাই এহেন উদ্যোগে আমি একজন নাগরিক হয়ে তার চরম প্রতিবাদ জানাই।
চট্টগ্রামের হৃদস্পন্দন সিআরবি
রতন কুমার তুরী
চট্টগ্রামবাসী’র ফুসফুস সিআরবি। এখানে ব্রিটিশ বিরোধি আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ সূর্যসেন এবং অগ্নিকন্যা প্রীতিলতারও কিছু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। এমন একটি স্থানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছে যেনে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের স্থানটিকে বিক্ষত করার এমন হঠকারি সিন্ধান্ত নেয়ার আগে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কি একবারও চিন্তা করলোনা এখানে হাসপাতাল চট্টগ্রামের মানুষের ফুসফুস কাটা পড়বে? আর এই ফুসফুস কাটা পড়লে চট্টগ্রামবাসী বাঁচবেনা? আমরা আমাদের ফুসফুসকে বিক্ষত করে কখনো সিআরবিতে হাসপাতাল হতে দিতে পারিনা। চট্টগ্রামে হাসপাতালের দরকার রয়েছে তবে তা চট্টগ্রামের ফুসফুস সিআরবি’র সবুজ বেষ্ঠনী কেটে নয়, এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অন্যজায়গায় গড়তে পারে। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের মাননীয় মেয়র মহোদয় সিআরবির বাইরে হাসপাতালের জন্য জাশগাও দেবে বলেছে ফলে আমরা প্রত্যাশা করবো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে তাদের হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা থেকে সরে দাঁড়াবেন এবং গণমানুষের এই প্রাণের দাবীটির প্রতি অচিরেই একাত্মতা ঘোষণা করবেন।
শান্তির আধারকে হারাতে দেব না
জেরিন তাসনিম
এমন একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানে তৈরি হবে হাসপাতাল? শতবর্ষী গাছ, পাখিদের বাসস’ান, নাগরিকের স্বস্তির স্থান সবকিছু উপড়ে তৈরি হবে হাসপাতাল? তাহলে এই শহরে স্বপ্নবাজ তরুণেরা কোথায় গিয়ে গিটার বাজিয়ে ছন্দ তুলে গান গাইবে? গৃহবন্দী শিশু কিশোরগুলো খেলার জন্য কোথায় যাবে? খোলা আকাশের নিচে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মুগ্ধতায় মানুষের মন আর মেতে উঠবে কি এরপর! আমরা আজ সকলেই আতঙ্কিত। আমরা চাই না আমাদের একমাত্র শান্তির খোঁজে ফেরা স্থানটি এইভাবে হারিয়ে যাক। যেই শহরে মানসিক শান্তি পাওয়া যাবে না সেই শহরের মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা পেয়েও সুস্থ হবে না। আমরা এখানে হাসপাতাল বা অন্য কোনো স্থপনা চাই না, স্রষ্টা প্রদত্ত মানসিক শান্তির আধার এই একমাত্র আশাটি বাঁচিয়ে রাখতে চাই।
প্রিয় সিআরবি চত্বর ধ্বংস করবেন না
মহিউদ্দিন শাহ আলম নিপু
বাস্তবতা হলো- সিআরবি চত্বরে কোন হাসপাতাল হলে কোন অবস্থাতেই তার বর্তমান পরিবেশ ও সৌন্দর্য্য রক্ষা করা সম্ভব হবে না। হাসপাতালের চারিদিক গড়ে উঠে ফার্মেসী, রুগী ও এ্যাটেন্ডসদের খাবার দোকান, ব্যবহার্য জিনিসপত্রের দোকান, সারি সারি এম্বুলেন্স ও যানবাহন, ক্রমান্বয়ে জমা হতে থাকা বর্জ্য এ বিষয়গুলো স্থান নির্বাচক কমিটি কেন আমলে আনেন নি তা বোধগম্য নয়। এক অনলাইন সাক্ষাৎকারে রেলওয়ে সংসদীয় কমিটির আহ্বায়ক মাননীয় সাংসদ ফজলে করিম জানিয়েছেন হাসপাতালের কাজ সমাপ্ত হতে ১২ বছর সময় লাগবে। এ সময় রড-ইট-সিমেন্ট-বালি আর শ্রমিক আবাসনে এলাকার অবস্থা কি হবে সেটাও ভাবার বিষয়। চট্টগ্রাম শহরে রেলওয়েরই বহু অব্যবহৃত জায়গা রয়েছে যেখানে এর চাইতেও আরো অনেক বড় বড় হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। সুতরাং আর ভুল নয়। সময় থাকতে এখনি বিকল্প স্থান নির্ধারণ করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জোরালো অনুরোধ করছি।
প্রতিবছরের ন্যায় পুরো সিআরবি চত্বরে পহেলা বৈশাখ, চৈত্র সংক্রান্তি, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ও মিলনমেলা অব্যাহত থাকুক। নগরবাসী যেন সেখানে মুক্ত পরিবেশে নিশ্বাস নিয়ে তাদের দেহ সুরক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে এ প্রত্যাশা রইলো।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই পরিবেশ ধ্বংস হতে দেবেন না
সাহেলা আবেদীন
চট্টগ্রাম প্রাচ্যের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত, এর প্রকৃতিক সৌন্দর্য কোনভাবে নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না, সিআরবি আমাদের প্রাণের জায়গা। তিলোত্তমা চট্টগ্রাম বৃক্ষ লাগানো ও বৃক্ষকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে আসছে জনগণকে সবসময়ই। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হলেন প্রকৃতি প্রেমিক। তিনি জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করেন গাছ লাগানোর জন্য। ছাদ বাগান করার জন্য, প্রতিটি খালি জায়গাকে তিনি ব্যবহার করতে বলেছেন। সেই জায়গায় আমাদের চট্টগ্রামের ফুসফুসখ্যাত সিআরবিকে নিশ্চয়ই তিনি ধ্বংস হতে দেবেন না। প্রাকৃতিকভাবে শ্বাস নেওয়ার জায়গায় প্রয়োজনবোধে আরো গাছ লাগানো হবে। আমরা আল্লাহ দেওয়া প্রদত্ত অঙিজেনের মাধ্যমে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে চাই সিআরবিতে। আমরা হাসপাতাল চাই, তবে পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করে নয়। আমরা চট্টগ্রামবাসী চট্টগ্রামের আর কোন সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকা নষ্ট হতে দেবো না। চট্টগ্রামের ঐতিহ্য রক্ষা করা আমাদের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব, যা বিশ্বের দরবারে আমাদের ভাবমূর্তি অক্ষত থাকবে।
পরিবেশ নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়
আমিনুল হক বাবু
পূর্ব রেলের সদর দপ্তর চট্টগ্রামের সিআরবি এলাকায় পরিবেশ নষ্ট করে হাসপাতাল নির্মাণ কোনভাবেই কাম্য নয়। সিআরবি চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বুক ভরে নিশ্বাস নেওয়ার স্থান। এমন একটি জায়গায় হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড, জনসমাগম বৃদ্ধি ও মেডিকেল বজ্যর্র কারণে সিআরবির বর্তমান পরিবেশ ও প্রকৃতি নষ্ট হবে।
গাছপালামণ্ডিত সিআরবি এলাকাটিকে চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে গণ্য করা হয়। এর আগে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া সিআরবিতে রাস্তা সমপ্রসারণের নামে রেলওয়ের শতবর্ষী গাছ কাটা হয়েছে। এ অপকমের্র সঙ্গে জড়িত রেলওয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছিল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি।
কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা আমরা জানতে পারিনি। সিআরবির পরিবেশ ধ্বংসের ধারাবাহিকতায় এবার সেখানে হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অপচেষ্টা চলছে। প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকা চট্টগ্রামবাসীর ইতিহাস ঐতিহ্যের অংশ, বৈশাখ সহ বিভিন্ন সময় সাংস্কৃতিক কর্মীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় এই এলাকা। এছাড়া পূর্ব রেলের সদর দপ্তর সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। এছাড়া এখানে স্টাফ কোয়ার্টার আছে। চট্টগ্রামের জন্য আরো হাসপাতাল দরকার এটি বাস্তবতা, তাই বলে সিআরবিতে কেনো, এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা অযৌক্তিক। হাসপাতাল করতে চাইলে সিআরবির বাইরে রেলের অনেক অব্যবহৃত জমি আছে, সেখানে করা যায়।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সিআরবিতে হাসপাতাল করতে দেয়া হবে না
সুপ্রতিম বড়ুয়া
সমপ্রতি আমরা লক্ষ্য করছি যে, সাংস্কৃতিক বলয় বেষ্টিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজরিত চট্টগ্রাম এর নান্দনিক বহুসংখ্যক বৃক্ষরাজি বেষ্টিত স্থান সিআরবিতে বৃক্ষ কর্তন করে হাসপাতাল এর মতো স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। এই স্থানটিতে শত শত মুক্তিযোদ্ধার গণ কবর রয়েছে। তাঁদের ইতিহাস রক্ষার জন্য যেখানে স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা আবশ্যক, সেখানে একটি মহল ব্যবসার নামে ইতিহাসকে মুছে দিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ এর পাঁয়তারা শুরু করেছে।এসব অশুভ চক্রকে নির্মূল করতে হবে। ইতিহাসকে রক্ষা করতে হলে তার পরিবেশ এবং স্থানিক অবস্থানকেও রক্ষা করতে হয়। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যাতে এইসব ঐতিহ্যকে বুকে ধারণ করে উপলব্ধি করতে পারে তার জন্যই এই বিশাল চত্বর বা অবয়ব সংরক্ষণ করা জরুরি। আমরা মনে করি, এই স্থানটিতে বঙ্গবন্ধুর নান্দনিক ভাস্কর্য নির্মাণ করে সামনে বিশাল খোলা প্রান্তর অক্ষত রাখা হোক। সিরিজ তলার এই উদ্যানে সকল ধরনের হোটেল নির্মাণ, হাসপাতাল এবং গাড়ি পার্কিং এর পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে- মনে রাখতে হবে এটি কোন ব্যবসায়িক কেন্দ্র নয়- এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা।অথচ আজ এই উদ্যানের বৃক্ষরাজি কর্তন করে জৈববৈচিত্র ধ্বংস এবং অঙিজেনের অফুরন্ত উৎসকে নিধন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে হাসপাতাল এর নামে ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিনাশকারী এই অপকর্মকে রুখে দেয়ার জন্য সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।
হাসপাতাল নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসুন
মোহাম্মদ আবদুস সালাম
পাহাড়কে ঠিক রেখে, সবুজকে প্রাধান্য দিয়ে ব্রিটিশরা যদি এরকম স্থাপনা করতে পারেন তাহলে আমরা কেন স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারবো না। এমনিতেই দিনের পর দিন চট্টগ্রাম শহরের নান্দনিকতা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে যদি সিআরবিও বেদখলে চলে যায়, চট্টলাবাসীর নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা আর থাকলো কোথায়? রেলওয়ে কতৃপক্ষ কেন এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বোঝা যাচ্ছে না। এছাড়া সিআরবির শিরীষতলা চট্টলাবাসীর একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর জায়গা। চট্টগ্রামের সংস্কৃতিচর্চা বিকাশের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবেও জায়গাটি বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। প্রভাতে হাজার হাজার মানুষ প্রাতঃভ্রমণে এসে শারীরিক সুস্থতার জন্য কসরত করে থাকেন। ইট পাথরের শহরে একটু সবুজের স্পর্শ পেতে সন্ধ্যায় এসে সারাদিনের ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করেন নগরবাসী। বিভিন্ন আয়োজনে চট্টলবাসী বিনোদনের উপকরণ খুঁজতেও শিরীষতলার শরণাপন্ন হন। আশাকরি চট্টগ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর দৃষ্টি রেখে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন।
পরিবেশ ধ্বংস করে হাসপাতাল কেন
আতিক খান
চট্টগ্রামে ইউনাইটেড হাসপাতালের মত মানসম্পন্ন হাসপাতাল হোক, এটা আমরাও চাই। কিন্তু সেটা পরিবেশ ধ্বংস করে কেন? পুরো চট্টগ্রাম শহরে সিআরবি, শিরীষ তলার মত মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক পরিবেশ আছে এমন আর একটা জায়গাও কি আছে? এখানে এখন ৬ একর জায়গা জুড়ে তৈরি হবে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল, ৫০ আসনের নার্সিং ইন্সটিটিউট আর ১০০ আসনের মেডিকেল কলেজ।
ইট-পাথরের খাঁচায় বন্দি মানুষ দু’দণ্ড সময় কাটাবে কিংবা বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবে। এমন উন্মুক্ত পরিসর খুব একটা অবশিষ্ট নেই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। ঢাকায় যেমন আছে রমনার বটমূল কিংবা বোটানিক্যাল গার্ডেন জাতীয় পার্ক আর উদ্যান। নগরবাসী স্থানটিকে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে থাকেন।
এই সিআরবি এলাকা আড্ডা, প্রাতঃ আর বৈকালিক ভ্রমণের জায়গাই শুধু না, এটাকে কেন্দ্র করে সারা বছর জুড়েই অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলাসহ অসংখ্য শিল্প আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এ সুন্দর পরিমণ্ডলকে ধ্বংস করার কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পুরো চট্টগ্রামবাসীর উচিত রুখে দাঁড়ানো।
যে কোন ভাবে আমরা সিআরবি, শিরীষতলা পুরো অক্ষত চাই। সবাই যার যার অবস্থান হতে প্রতিবাদে অংশ নিন। চট্টগ্রাম বসবাসের অযোগ্য এক নগরীতে পরিণত হচ্ছে। আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাব আমরা? শুধু ইট-পাথরের সব স্থাপনা?
বন্ধ হোক এই হাসপাতাল নির্মাণ
সুলতানা নুরজাহান রোজী
নিঃশ্বাস নেওয়ার কারখানা ফুসফুস সচল থাকা বিনামূল্যে অঙিজেন সরবরাহ হয় আমাদের সি আর বি সবুজ বনায়ন”
চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস এই সিআরবি। বন্ধ হোক এই হাসপাতাল নির্মাণ! এই সিআরবি সবুজের ছায়ায় গালিচার জায়গাগুলো আমাদের নিঃশ্বাস নেওয়ার ফ্যাক্টরি, সবুজের কারখানা, বিনোদনের ডেস্ক।
বাচ্চা বুড়ো, সবার নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য কোথাও কোন খালি জায়গা নাই মাঠ, পার্ক রাখা হচ্ছে না। সবখানেই ব্যবসা বাণিজ্য। সিআরবি আমাদের প্রকৃতির অবদানের এক বিশাল ঐশ্বর্য। সিআরবিকে টিকিয়ে রাখা সকলের দায়িত্ব। এখানে নতুন করে কোনো স্থাপনা নয়। চলুন, মানবিক হই। মন মানসিকতার পরিবর্তন করে সুন্দর নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখা দরকার।
নতুন স্থাপনা নির্মিত হলে পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে
ডা: কল্যাণ বড়ুয়া
বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের প্রধান শাখাটি অবস্থিত চট্টগ্রামের শিরিষ তলায়। এই ঐতিহাসিক স্থানটি চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। শত বছর বয়সী শিরিষ গাছ ঘেরা মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবেষ্টিত এলাকাটির হৃদস্পন্দনে স্নিগ্ধ হন হাজারো মানুষ প্রতিদিন। চট্টগ্রামের বাইরের কোনো মানুষ একটিবার সিআরবি এলাকাটি ঘুরে গেলে নিশ্চয়ই হৃদয়ে স্থান করে নিবে নি:সন্দেহে। এমন জায়গাটিতে নতুন স্থাপনা নির্মাণের প্রচেষ্টা কোনভাবে শুভ বুদ্ধির পরিচয় বহন করে না। এতে এলাকাটির শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে অবধারিতভাবে। আমরা প্রিয় চট্টগ্রামবাসী সকলেই বুকভরে প্রকৃতির শ্বাস নিয়ে বাঁচতে চাই আজীবন। এটি আমাদের অধিকার। আমাদের ফুসফুস ভালো থাকুক, এটিই আমাদের একান্ত প্রত্যাশা।
লুটেরা সাবধান!
কাঞ্চনা চক্রবর্তী
চট্টগ্রামের মানুষ সংস্কৃতি অন্তঃপ্রাণ। সংস্কৃতির টানে আর ক্লান্তি ভুলতে সিআরবিতে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বিভিন্ন বাগান ও সবুজ প্রেমীদের মিলনমেলা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মিলনমেলা আর শিশু উৎসবসহ বাঙালির সকল জাতীয় উৎসব। আমার তো মনে হয় বাঙালির উৎসব আর ঐতিহ্যকে এই স্থাপনার সাথে অতি সঙ্গোপনে গলা টিপে হত্যা করা হবে। এটা একটা শ্রেণির গোপন চক্রান্ত। কিন্তু না! চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ এই অবৈধ স্থাপনার বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কোন মৌখিক কথায় তারা ভুলবে না। স্থায়ীভাবে আইনুযায়ী স্থাপনা বন্ধের লিগ্যাল নোটিশ করতে হবে। এই হাসপাতালটি রেলওয়ের অন্য যেকোন জায়গা বা শহর থেকে দূরে সুবিধাজনক যেকোন জায়গায় স্থাপিত হোক। আমরা চাই হাসপাতাল হোক। এই মহামারীতে চট্টগ্রামে হাসপাতালের দরকার আছে। আমাদের আপত্তি সি আর বি এবং তার আশেপাশের এলাকাকে নিয়ে।এমনকি রেলওয়ের সাধারণ কর্মচারীরাও এর বিরূদ্ধে। আমাদের মুক্ত অঙিজেন বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম অঙিজেন চাই না। আজ বর্তমান বিশ্বে কোভিড মহামারীতে একটু অঙিজেনের জন্য মানুষ কত অল্প সময়ে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিচ্ছে তা এখন ও বোধোদয় না হলে আর কখনও হবেনা। আমরা রুখে দাঁড়াব, প্রয়োজন হয় রক্তও দিব। তবুও মায়ের ফুসফুস আমরা ধ্বংস করতে দিব না। চট্টগ্রাম শহর থেকে দূরে কোথাও এই হাসপাতালটি হোক। শহরের বুদ্ধিজীবী আর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে সঠিক দিক নির্দেশনা দিতে পারবে। কিন্তু আমরা সি আর বি এর একচুল জায়গাও দেব না। নতুন প্রজন্মের কাছে আমরা কলংকিত হতে চাই না। ওদের চোখ আটকে আছে স্ক্রিনে। ওরা কোথায় যাবে? বুক ভরে ওরা নিঃশ্বাসই তো নিতে পারেনা, কিভাবে সুস্থ মানুষ তৈরি হবে? তাহলে আসুন, তাঁদেরকে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে দিই। প্রাণ ভরে বাঁচতে দি। শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
চট্টগ্রামবাসীকে বধ করার সামিল
নাসিরুদ্দিন চৌধুরী
সিআরবি পাহাড়ে হাসপাতাল নির্মাণের চেষ্টা কোন সুস্থ মানুষ নিতে পারেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। যদি সত্যিই কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নিয়ে থাকেন, সেটা হবে একটি আত্মঘাতী, ঐতিহ্যবিনাশী এবং মুক্তিযুদ্ধবিরোধী পদক্ষেপ।
আত্মঘাতী বলছি যে কারণে তা’ হলো সিআরবি হচ্ছে চট্টগ্রামের ফুসফুস। এখন এই ফুসফুস যদি কেউ ধ্বংস করতে চান, তাহলে তা’ হবে চট্টগ্রাম তথা চট্টগ্রামবাসীকে বধ করার সামিল। কারণ চট্টগ্রামবাসীর মুক্ত বায়ু সেবনের একমাত্র স্থানটি দূষিত ও অবশেষে ধ্বংস হয়ে যাবে। দ্বিতীয়ত সিআরবিতে হাসপাতাল হলে আমাদের ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাবে। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে আসামের চা ব্যবসায়ীরা চা রপ্তান্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরকে কাজে লাগানোর জন্য আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ে স্থাপন করে। সেসময় বন্দরও তাদের অধীনে ছিলো। তারা সিআরবি পাহাড়টি লিজ নিয়ে সেখানে এবি রেলওয়ের সদর দপ্তর স্থাপন করে। বর্তমান সিআরবি বিল্ডিং- ই ছিলো হেডকোয়ার্টার। সিআরবি বিল্ডিং এখন চট্টগ্রামের হেরিটেজ বিল্ডিং, এটি রক্ষা করা দরকার।
মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বললাম এ কারণে যে, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো সিআরবি পাহাড় থেকে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ তৎকালীন ইপিআর-এর এডজুট্যান্ট ক্যাপ্টেন (পরে ১নং সেক্টর কমান্ডার, মেজর, বীর উত্তম) রফিকুল ইসলাম পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সিআরবি পাহাড়ের দক্ষিণ অংশে একটি কাঠের বাংলো যেখানে আছে সেখানে তাঁর ট্যাকটিক্যাল হেডকোয়াটার স্থাপনের স্থান নির্বাচন করেছিলেন। সেদিন সন্ধ্যায় তিনি সেখানে লে. কর্ণেল এম আর চৌধুরী ও মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদেরকে বুঝাতে চেয়েছিলেন তাঁর যুদ্ধ পরিকল্পনায় সামিল হওয়ার জন্য। কিন্ত তাঁরা রফিকের কথায় সঙ্গত হননি। তাঁরা বলেছিলেন, পাকিস্তানি সৈন্যরা কখনো অমন নিষ্ঠুর আচরণ করতে পারে না। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস কর্ণেল চৌধুরীকে ২৫ মার্চ মধ্যরাতে তাঁর জীবন দিয়ে তাঁর কথা ভুল ছিলো সেটা প্রমাণ করেছিলো। তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের নতুন রিক্রুট সৈনিকদের চিফ ইনস্ট্রাক্টর। পরদিন ২৫ মার্চ রাতে ৮.৪৫ মিনিটে ক্যাপ্টেন রফিক আওয়ামী লীগ নেতা কায়সার, ডা. আবু জাফর এবং ডা. এম এ মান্নানের পরামর্শক্রমে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেছিলেন। সারা বাংলাদেশে আর কোথাও কোন বেঙ্গল রেজিমেন্ট বা ইপিআর অফিসার উক্ত সময়ে মুক্তিযুদ্ধ আরম্ভ করেননি। সবাই মুক্তিযুদ্ধে প্রবৃত্ত হন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রদানের কথা জানতে পেরে। সিআরবি উক্ত কাঠের বাংলো কালের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে আজো অক্ষত অবস্থায় টিকে আছে। চট্টগ্রামবাসীর একটি জনপ্রিয় দাবি সেখানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হোক।