সিংহ রাসেলের জীবনাবসান সঙ্কটাপন্ন টুম্পাও

চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের গুরুতর অসুস্থ সিংহ দম্পতি রাসেল ও টুম্পার চিকিৎসা চলছিল পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে। বার্ধক্যসহ নানা জটিলতায় ভুগছিল সিংহ দুটি। তাই গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে গত ৪ জানুয়ারি থেকে সিংহ দুটির চিকিৎসা শুরু করে পার্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখা যায়নি পুরুষ সিংহ রাসেলকে।

গতকাল বুধবার ভোরে পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালের কোয়ারেন্টিন শেডে পুরুষ সিংহ রাসেলের জীবনাবসান হয়। রাসেল মারা যাওয়ায় পার্ক কর্তৃপক্ষ চকরিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছে। একইসাথে মারা যাওয়া সিংহ রাসেলের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি এবং ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বন্যপ্রাণী চিকিৎসকরা। এ সময় শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংগ্রহের পর তা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হয়। এর পর সিংহ রাসেলকে মাটিতে পুঁতে ফেলা হয় গতকাল সন্ধ্যার দিকে।

মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্য ও চকরিয়া উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয়ের ভেটেরিনারি সার্জন সমর রঞ্জন বড়ুয়া দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিল পুরুষ সিংহ সোহেল। সে মারা যাওয়ার কয়েকদিন পর থেকে পার্কে থাকা অন্য দুই সিংহ রাসেল ও টুম্পার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে।’

তিনি বলেন, রাসেল এবং টুম্পাও বার্ধক্যসহ নানা ইনফেকশনে ভুগছিল। তন্মধ্যে রক্ত ও পানিশূন্যতা দেখা দেয় তাদের শরীরে। কারণ নিয়মিত খাবার গ্রহণ না করলে এই রোগে অবশ্যই ভুগতে হয়। প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা সমর রঞ্জন বড়ুয়া আরো বলেন, সর্বশেষ মারা যাওয়া পুরুষ সিংহ রাসেল মূলত ‘ব্লাড প্রোটোজোয়ায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ‘ব্লাড প্রোটোজোয়ায়’ রাসেল মারা গেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই অবস্থায় রাসেলের সঙ্গী টুম্পারও একই ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই যে কোনও সময় টুম্পারও জীবনাবসান ঘটতে পারে। বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায় মো. মাজহারুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে জানান, ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে পুরুষ সিংহ রাসেল ও স্ত্রী সিংহ টুম্পা। এ অবস্থায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) এবং সাফারি পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে দেন। বোর্ডের প্রধান করা হয় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধরকে।

পার্কের বন্যপ্রাণী চিকিৎসক হাতেম সাজ্জাদ জুলকার নাইন বলেন, বার্ধক্যজনিত কারণেই সিংহ দম্পতি রাসেল ও টুম্পার নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা ছিল।পার্কের প্রকল্প পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম চৌধুরী (ডিএফও) দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সিংহ রাসেলকে বাঁচিয়ে রাখতে কোনও ধরণের ত্রুটি ছিল না। প্রকৃতিতে পুরুষ সিংহের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল হচ্ছে ৮ থেকে ১০ বছর। সেখানে আবদ্ধ অবস্থায় রাসেল বেঁচেছিল ১৬ বছর। একই অবস্থা হতে পারে স্ত্রী সিংহ টুম্পারও, বর্তমানে এটির বয়স ১৫ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। সেটিকেও আলাদা শেডে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০০৪ সালে সোহেল নামের একটি পুরুষ সিংহ পার্কে আনা হয়। তার সঙ্গী হিসেবে আনা হয় স্ত্রী সিংহ হীরাকে। তাদের দাম্পত্য জীবনে আসে রাসেল। এর পর হীরা মারা গেলে সোহেল সঙ্গী হিসেবে পায় নদীকে। সোহেলনদীর সংসারে আসে টুম্পা ও সম্রাট। বার্ধক্যের কারণে ২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ২২ বছরে মারা যায় সোহেল। আবার ওই বছরের ২২ এপ্রিল মারা যায় স্ত্রী সিংহ নদীও। তাকে অবশ্য সন্তান সম্রাট গলা ও পেটে কামড়ালে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় নদী। বর্তমানে পার্কে রয়েছে পুরুষ সিংহ সম্রাট () ও অসুস্থ টুম্পা (১৫)

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিলুপ্তির শঙ্কায় ম্রোদের রেংমিটচ্য ভাষা, কথা বলেন মাত্র ছয়জন
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশ ভোটার ডাকছে, জীবনেও শুনিনি : মির্জা আব্বাস