বিলুপ্তির শঙ্কায় ম্রোদের রেংমিটচ্য ভাষা, কথা বলেন মাত্র ছয়জন

| বৃহস্পতিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানে ম্রো জনগোষ্ঠীর ‘রেংমিটচ্য’ ভাষায় কথা বলতে পারাদের মধ্যে জীবিত রয়েছেন মাত্র ছয় জন। যাদের অধিকাংশই ষাটোর্ধ্ব বয়সের। রেংমিটচ্য জানা এই মানুষরাও মূলত ম্রো ভাষায় কথা বলেন, এমনকি তারা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা না হওয়ায় এই ভাষা চর্চার সুযোগও তাদের তেমন হয় না। তাই ভাষা বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এ মানুষগুলোর মৃত্যুর সঙ্গে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে আরেকটি ভাষা। জীবিত ছয় রেংমিটচ্যভাষীর ছবি নিয়ে শব্দভাণ্ডার বইয়ের প্রচ্ছদ করা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

রেংমিটচ্যভাষী এই ছয়জন ম্রো হলেনআলীকদম সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ক্রাংসিং পাড়ার বাসিন্দা মাংপুং ম্রো (৬৯), একই পাড়ার বাসিন্দা কুনরাও ম্রো (৭২), একই পাড়ার বাসিন্দা আরেক কুনরাও ম্রো (৬২) এবং নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেনসিং পাড়ার বাসিন্দা থোয়াই লক ম্রো (৫৭)। অন্য দুজন হলেন নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওয়াইবট পাড়ার বাসিন্দা রেংপুং ম্রো (৫৪) ও সাংপ্ল পাড়ার বাসিন্দা মাংওয়াই ম্রো (৬৫)। তার মধ্যে মাংপুং ম্রো, রেংপুং ম্রো ও মাওয়াই ম্রো তারা আপন ভাই। জীবিত এই ছয়জনের মধ্যে দুজন নারী। তবে বিলুপ্তপ্রায় এই রেংমিটচ্য ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই ভাষার শব্দভাণ্ডার নিয়ে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু নিজস্ব বর্ণমালা না থাকায় ‘মিটচ্য তখক’ নামের এই বইটিতে রেংমিটচ্য ভাষার উচ্চারণ ম্রো শব্দের পাশাপাশি লেখা হয়েছে বাংলা শব্দের মাধ্যমে।

বইটির লেখক ও ম্রো ভাষার লেখক ইয়াঙান ম্রো জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে থেকে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে রেংমিটচ্য ভাষার শব্দ সংগ্রহ করে তিনি বইটি প্রকাশ করেছেন। রেংমিটচ্যভাষী জীবিত ছয়জনের ছবি দিয়ে বইটির প্রচ্ছদ করা হয়েছে। আর খবর পেয়ে আলীকদমের নোয়াপাড়া ইউনিয়নের মেনসিং পাড়ার বাসিন্দা থোয়াই লক ম্রো (৫৭)

বইয়ের প্রচ্ছদে নিজের ছবি দেখে আপ্লুত হয়ে থোয়াই লক ম্রো সাংবাদিকদের বলেন, বিলুপ্তপ্রায় একটি ভাষার শব্দ নিয়ে বই প্রকাশিত হবে কল্পনাও করিনি। ইয়াংঙান ম্রো আমাকে ২০টি বই দিয়েছে। গিয়ে সবাইকে দেখাব। বিশেষ করে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া আমার এক নাতির জন্য বেশি খুশি হয়েছি। সে বাংলার মাধ্যমে রেংমিটচ্য ভাষা শিখতে পারবে। বইটির লেখক ইয়াঙান ম্রো জানান, মূলত ২০০৯ সালে বান্দরবান জেলার আলীকদমে এসে রেংমিটচ্য ভাষা নিয়ে কাজ শুরু করেন যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক ও ভাষাবিজ্ঞানী ডেডিভ পিটারসন। তিনিই প্রথম ম্রোদের মধ্যে রেংমিটচ্যভাষীদের খুঁজে বের করেন। তার সেই গবেষণার সহযোগী ছিলেন ম্রো ভাষার লেখক ইয়াঙান। ইয়াঙান ম্রো বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১০ সালের দিকে ডেভিড পিটারসন রেংমিটচ্য ভাষায় কথা বলতে পারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২২ জনকে খুঁজে বের করেন। বিভিন্ন সময় মারা যাবার পর যাদের মধ্যে এখন মাত্র ছয়জন জীবিত রয়েছেন।

ডেভিড পিটারসন চলে যাওয়ার পর আমি নিজ উদ্যোগেই এ ভাষা নিয়ে কাজ করা শুরু করি। ২০১৪ সালে রেংমিটচ্য ভাষার লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, তাদের ২২ জনের বাইরে আরও ১০ জন রেংমিটচ্যভাষী ম্রো থাকতে পারে। যারা ভাল করে এই ভাষায় কথা বলতে পারেন। এই ১০ জন রেংমিটচ্যভাষী কোন এলাকায় রয়েছেন এখনও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাহার মার্কেটে যৌথ অভিযান তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধসিংহ রাসেলের জীবনাবসান সঙ্কটাপন্ন টুম্পাও