সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে আইএমএফ, প্রাথমিক সমঝোতা

| বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ এর কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। আগামী ফেব্রুয়ারিতেই এ ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যেতে পারে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গতকাল বুধবার বলেছেন, যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবে আইএমএফের ঋণ পেতে যাচ্ছি। প্রয়োজনীয় শর্ত তারা দিয়েছে, সেগুলো আমরা নিজেরাই শুরু করছিলাম। খবর বিডিনিউজের।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, এই সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার আইএমএফ বাংলাদেশকে দেবে সাত কিস্তিতে। শেষ কিস্তি বাংলাদেশ হাতে পাবে ২০২৬ সালে। সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিনও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় দুই সপ্তাহের সফর এবং আলোচনার ফলাফল তুলে ধরতে সচিবালয়ে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে আসেন আইএমএফ প্রতিনিধি দলের নেতা এবং সংস্থার এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রাহুল আনন্দ। ঋণের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তারা একটি প্রতিবেদন তৈরি করে আইএমএফের নির্বাহী পরিষদে উপস্থাপন করবেন। সকল আনুষ্ঠানিকতা সেরে আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে আইএমএফ বোর্ড এ ঋণ প্রস্তাবে চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে পারে। এ সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়, ৪২ মাসের চুক্তিতে সরকারের নেওয়া ‘অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মসূচিতে’ সহায়তা হিসেবে আইএমএফের এঙটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ) এবং এঙটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি থেকে ৩২০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনিবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাবে বাকি ১৩০ কোটি ডলার।

এ ঋণের অর্থ দিয়ে যেসব প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার হাতে নেবে, তার উদ্দেশ্য হবে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখা এবং দুর্দশায় পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দিয়ে দৃঢ়, অর্ন্তভুক্তিমূলক এবং পরিবেশবান্ধব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সামষ্টিক অর্থনীতির ঝুঁকি কমিয়ে আনতেও এই ঋণের অর্থ ব্যয় করা হবে। কোভিড মহামারীর ধাক্কা সামলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও ইউক্রেইন যুদ্ধের জেরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বড় ধরনের চাপে পড়েছে, ডলারের বিপরীতে মান হারিয়ে চলছে টাকা, মূল্যস্ফীতিও পৌঁছেছে উদ্বেগজনক পর্যায়ে।

রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানিতে লাগাম টানায় অর্থনীতি সঙ্কুচিত হয়েছে, জ্বালানি সংকটের মুখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের মত দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকিও বাংলাদেশের সামনে রয়েছে।

রাহুল আনন্দ বলেন, ২০৩১ সালের মধ্যে সফলভাবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে অতীতের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে প্রবৃদ্ধির চাকাকে আরও গতিশীল করার জন্য কাঠামোগত সমস্যাগুলোতে নজর দিতে হবে এবং সেই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, উৎপাদন সুসংহত করা এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে হবে। এই বাস্তবতায় এবং সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় নেওয়া আগের উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিতায় বাংলাদেশ সরকার আইএমএফ এর সহযোগিতায় বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা সাজিয়েছে, যা ঝুঁকি কমিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান মজবুত করবে এবং সামাজিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং জলবায়ু ঝুঁকি প্রশমনের কাজ ত্বরান্বিত করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে। আইএমএফ বলছে, আর্থিক খাতে আরও বেশি সুযোগ তৈরি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, মুদ্রানীতির কাঠামোগত পরিবর্তন, আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী করা, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহিষ্ণুতা গড়ে তোলা এই পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অংশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমদানি করা হচ্ছে ১৩ লাখ টন চাল ও গম
পরবর্তী নিবন্ধমহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ১৮ ডিসেম্বর, দক্ষিণ জেলার ১২ ডিসেম্বর