চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে গ্রহণ করা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সাড়ে তিন হাজার গার্ডার স্থাপনের কাজ আজ থেকে শুরু হচ্ছে। পতেঙ্গা সি বিচ এলাকা থেকে এই গার্ডার স্থাপনের কার্যক্রম চলবে। প্রতিদিন ছয় থেকে আটটি গার্ডার স্থাপন করা হবে। দুই পিলারের মাঝে স্থাপিত এই গার্ডারের উপর দিয়েই যান চলাচল করবে। এছাড়া বৃষ্টি বন্ধ হলেই বিমানবন্দর সড়কের সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড মোড় পর্যন্ত বেহাল হয়ে পড়া সড়ক সংস্কার করা হবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) একজন কর্মকর্তা জানান, লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিকটস্থ টানেল রোড পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আজ রাত থেকে প্রতিদিনই গার্ডার স্থাপনের কাজ চলবে। প্রতিটি একশ’ থেকে একশ বিশ টন ওজনের এক একটি গার্ডার স্থাপন করতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। ৩৫ মিটার থেকে ৪৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা এক একটি গার্ডার। ৫৪ ফুট প্রস্থ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে প্রতিটি স্প্যানে (এক পিলার থেকে অপর পিলারের দূরত্ব) আটটি করে গার্ডার স্থাপন করা হবে। প্রতিদিন গার্ডার স্থাপনের পাশাপাশি সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় পিলার নির্মাণের কার্যক্রমও চলবে। সি বিচ থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত আট কিলোমিটার সড়কে সর্বমোট ২০০টি পিলার স্থাপিত হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২৫টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে। পতেঙ্গা সি বিচ অংশ থেকে পিলারের উপর গার্ডার বসিয়ে সল্টগোলা ক্রসিং এর দিকে পৌঁছতে পৌঁছতে বাদবাকি পিলারের কাজও সম্পন্ন হয়ে যাবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আট কিলোমিটার অংশের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার লক্ষ্য নিয়ে সিডিএ কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও সূত্র জানায়।
এবিষয়ে সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস গতকাল বলেন, আমাদের কার্যক্রম দ্রুত চলছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে শুধু সিডিএ’র নয়, এটি চট্টগ্রামের প্রত্যেক নাগরিকেরই একটি স্বপ্নের প্রকল্প। এটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েই আমরা কার্যক্রম চালাচ্ছি। আজ থেকে গার্ডার স্থাপনের কাজ শুরু হওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, একটি ফ্লাইওভারের সর্বশেষ পর্যায়ের কাজ হচ্ছে স্প্যানের উপর গার্ডার স্থাপন। আর আমরা সেই কাজটি শুরু করতে যাচ্ছি। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অপরদিকে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকে কেন্দ্র করে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে ইপিজেড পর্যন্ত সড়কের অবস্থা পুরোপুরি বেহাল। খানাখন্দকে ভরা রাস্তাটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। এঅবস্থায় সিডিএ ইট-বালি দিয়ে জোড়াতালি দেয়ার চেষ্টা করলেও রাস্তাটির অবস্থা নাজুক। তাই রাস্তাটিতে প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট লেগে থাকে। এতে কয়েক লাখ মানুষের ভোগান্তি চরমে উঠে।
বিষয়টি নিয়ে সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ব্যস্ততম এই সড়কটির পাশে নালার কোন কার্যকারিতা নেই। এতে নালার সব পানি রাস্তার উপর থৈ থৈ করে। সাথে রয়েছে জোয়ারের পানিও। রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। এতে যান চলাচলে ভোগান্তি বেড়েই চলেছে।
সিডিএ’র চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস এ সংকটের কথা স্বীকার করে বলেন, রাস্তাটির অবস্থা এত খারাপ হতো না। নালার ও বৃষ্টির পানিতে রাস্তাটির অবস্থা শোচনীয়। আমরা গর্তগুলো ভরাট করার কোন সুযোগই পাচ্ছি না। আজও বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেই আমরা রাস্তাটিতে পিচ ঢালাই করে দু’পাশে চমৎকার ব্যবস্থা করে দেবো।
উল্লেখ্য, ৩হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে গৃহীত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে বহদ্দারহাট থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে যাতায়ত করা যাবে।
২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া প্রকল্পে চার ভাগে কাজ চলছে। এরমধ্যে সি বিচ এলাকার টানেলের কাছ থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত প্রথম পর্যায়, সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ চলছে। এই দুইটি অংশে ১৬ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আট কিলোমিটার নির্মিত হয়ে যাবে। তৃতীয় অংশে সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় এবং চতুর্থ অংশে বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা সমস্যা থাকলেও অচিরেই সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।