জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ২৯ বা ৩০ জুন পবিত্র ঈদুল আজহা তথা কোরবানির ঈদ। প্রতি বছরের মতো এবারও কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামের আড়তদাররা সকল ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের প্রথম এবং প্রধান উপকরণ হলো লবণ। এখন লবণ কেনা, চামড়াজাত করার জন্য গুদাম ভাড়া এবং শ্রমিক ঠিক করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন। তবে লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন কাঁচা চামড়া আড়তদাররা। ট্যানারি মালিকদের মতো আড়তদারদের সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ দেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
চট্টগ্রামে ছয় বছর আগেও মদিনা ট্যানারি ও রিফ লেদার ট্যানারি নামে দুটি প্রতিষ্ঠান ছিল। বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) না থাকায় ছয় বছর আগে মদিনা ট্যানারি বন্ধ করে দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর সাড়ে তিন থেকে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করলেও এক লাখ চামড়া নেয় চট্টগ্রামের রিফ লেদার ট্যানারি। ফলে বাকি চামড়া বিক্রি করতে ঢাকার ট্যানারির উপর নির্ভর করতে হয় এখন। এবারও রিফ লেদার গত বছরের মত চট্টগ্রামের আড়তদারদের কাছ থেকে এক লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে বলে জানা গেছে।
কোরবানির চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতির ব্যাপারে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মুসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, গতবার আমরা গরু–ছাগল মিলে পাঁচ লাখের মতো কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহের টার্গেট করেছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখের বেশি পাইনি। গত বছর থেকে গরুর দাম বেড়ে গেছে। তাই এবারও আমরা মনে করি চট্টগ্রামে গরু আর মহিষ–ছাগল মিলে তিন থেকে সাড়ে তিন লাখের বেশি কোরবানি হবে না। দাম বেড়ে যাওয়ায় আগে যারা একজনে একটি গরু কোরবানি দিয়েছে, তারা এবার দুই–তিনজনে মিলে একটি গরু কোরবারি দেবে। তাছাড়াও মানুষের হাতে এবার টাকা–পয়সাও কম। তিনি বলেন, লোকসান গুনতে গুনতে আমাদের এই ব্যবসা (কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ী) থেকে অনেকেই দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। আগে চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য ছিল ১১২ জন। সমিতির বাইরে ছিল আরো ১০–১২ জনের মতো। এখন আমাদের সমিতির সদস্য সংখ্যাই দাঁড়িয়েছে ৩০ জনের মতো। প্রতি বছর লোকসান দিতে দিতে, ঋণের বোঝা বইতে বইতে অনেকেই এই ব্যবসা ছেড়ে অন্য ব্যবসায় চলে গেছে। তাছাড়া আমাদের চট্টগ্রামে আগে দুটি ট্যানারি ছিল, এখন কোনোমতে টিকে রয়েছে একটি।
লবণের দামের ব্যাপারে তিনি বলেন, লবণের বাড়তি দাম নিয়েই আমরা বেশি শঙ্কিত। চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের বিকল্প নেই। কিন্তু লবণের দাম বাড়লে চামড়ার দামও বেড়ে যাবে। কিন্তু ট্যানারিগুলো সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে এক টাকাও বাড়তি দেবে না। তাই লবণের দাম কমানোটা জরুরি। প্রতি বছর কোরবান আসলে লবণের দাম বেড়ে যায়। কিছুদিন আগে প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) লবণ ছিল ৭শ থেকে ৮শ টাকা। এখন সেই লবণের বস্তার দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১শ টাকা। ট্যানারি মালিকরা যদি অন্তত সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কেনে তাহলে হয়ত আমরা টিকে থাকতে পারব।
কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সদস্যরা জানান, সরকার প্রতিবছর ফুটপ্রতি পুরো চামড়ার দর নির্ধারণ করে দিলেও ট্যানারি মালিকরা কিছু অংশ বাদ দিয়ে চামড়া কেনেন। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পুরো চামড়ার দাম চান। অথচ আমরা তো ট্যানারির হাতে বাধা। এটা মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বোঝেন না। এমনিতেই আমরা প্রতি পিস চামড়ার বাদ দেয়া অংশ থেকে প্রায় ৫০ টাকা করে লোকসান দিই। ফলে লভ্যাংশও কমে যায়। তাই মৌসুমী ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে বলব, গ্রাম থেকে চামড়া আনতে দেরি হলে লবণ দিয়ে দিতে হবে। এতে করে এই জাতীয় সম্পদটা নষ্ট হবে না।