সালাম

এমরান চৌধুরী | বুধবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ১০:১৮ পূর্বাহ্ণ

টিচার বাসা থেকে বেরোতে না বেরোতে আম্মু আম্মু করে ডাকা শুরু করল আফরিন। ওর মা কিচেন রুমে রাতের রান্নার জন্য সবজি কাটছিলেন। এ অবস্থায় শুনতে পেলেন মেয়ের ডাক।
আম্মু,
আম্মু,
ও আম্মু। ডেকেই চলেছে মেয়েটা। হঠাৎ কোনো সমস্যা হয়েছে ভেবে তড়িঘড়ি ছুটে এলেন তিনি। দেখতে পেলেন টিচার চলে গেছেন। আফরিন বইখাতা গুটাতে গুটাতে বলল, আম্মু, আমি এই টিচারের কাছে পড়ব না? মেয়ের আচমকা এই কথায় চোখজোড়া কপালে ওঠল মায়ের। অবাক করা চোখে তিনি মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,
একি বলছ মা! আজই তোমার জন্যে টিচার রাখা হয়েছে। আর তুমি বলছ পড়বে না।
আফরিন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। আগে পড়ত গ্যারেজের মতো দেখতে একটা স্কুলে। দেখতে গ্যারেজের মতো বাহার হলেও এই স্কুলগুলোর আহার ছিল কিন্তু বোয়ালের মতো। বইয়ের ভারে কুঁজো হয়ে যেত বেশির ভাগ ছেলেমেয়ে। ভর্তিতে হাজার পাঁচ আর প্রতি মাসে পাঁচশ থেকে সাতশ এর কম লাগত না ফি। কোনো কোনো মাসে এটা ওটার দোহাই দিয়ে আরও অনেক টাকা আদায় করে নিত। তাই আফরিনের বাবা এবছর ওকে ভর্তি করেছে সরকারি স্কুলে। ওর স্কুলের নাম সিএন্ডবি কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এক সময় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বদনাম ছিল। বলা হতো কাউয়া স্কুল। টেবিলে ডাস্টার পড়ে থাকত -টিচারের দেখা নেই। ছেলেমেয়েরা ক্লাসটাকে বাজার বানিয়ে ছাড়ত- খবরদারি, নজরদারি করার কেউ থাকত না। টিচাররা কেউ অফিস রুমে গল্পে, আর কেউ টেবিলে মাথা রেখে নাক ডাকত। এই অবস্থা এখন নেই। কী শহর কী গ্রাম, সবখানের এখন অভিন্ন চিত্র। এখন শিক্ষকদের দেওয়া হয়েছে সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ। সরবরাহ করা হয়েছে যুগোপযোগী পাঠদান সামগ্রী। ফলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ালেখা এখন অনেক ভালো। তাই আফরিনের স্কুল বদল। সে সাথে বাসায় পাঠদানের জন্য রাখা হয়েছে একজন প্রাইভেট টিউটর।
কেন মা, কেন পড়বে না।
টিচার আমাকে সালাম দিয়েছে!
সালাম দিয়েছে?
হ্যাঁ। বলেছে আসসালামু আলাইকুম।
ওহ্‌, তাই। তো কী হয়েছে। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল আফরিনের মা।
বলছে কিছু হয়নি! আমি না ছোট। সালামতো আমিই দেব।
তো তুমি দাওনি কেন?
আমি যেই হাত উঠাচ্ছি অমনি উনি সালাম দিয়ে দিলেন।
ঠিক আছে মা। কাল টিচার আসার সঙ্গে সঙ্গে তুমি সালাম দেবে।
পরদিন টিচার আসার আগেই আফরিন বসে যায় পড়ার টেবিলে। কলিং বেল বাজতেই আম্মু দরোজা খুলে দেন। টিচার ধীর পায়ে পড়ার রুমে ঢুকতেই আফরিন হাত তোলে সালাম দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার আগেই টিচার বলেন, আসসালামু আলাইকুম।
আফরিন এবারও সালাম দিতে না পেরে মুখ গোমড়া করে বসে থাকে।
টিচার বিজ্ঞান বই খুলে যেই পড়াবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অমনি আফরিন বলে বসে, আমি পড়ব না।
কেন? পড়া শিখ নাই? বলোতো দেখি কোন ভিটামিনের অভাবে রাতকানা রোগ হয়?
বলব না!
ওমা! এই কী কথা। পড়তে বসে রাগ করতে নেই। টিচারের গলায় বেজে ওঠে স্নেহের সুর।
আপনি আমাকে সালাম দিলেন কেন?
সালাম দিয়েছি তো কি হয়েছে?
তুমি তো আমার সালামের জবাব দাওনি।
কেন দেব? আমি তো ছোট। আমিই তো সালাম দিব। আপনি জবাব দেবেন।
এজন্য রাগ বুঝি। তাহলে শোনো সালামের কথা।
সালাম যে কেউ আগে দিতে পারে। তিনি বয়সে ছোট হোক আর বড় হোক। এই যেমন আমি তোমাকে সালাম দিলাম।
তাই নাকি। আমি তো শুনিনি স্যার। তাহলে তো আপনার সালামের জবাব দিতে হবে-
ওয়া আলাইকুমুস সালাম। বলে আফরিন দাঁড়িয়ে টিচারের সালামের জবাব দিল। ছাত্রীর মুখে শুদ্ধ উচ্চারণে সালামের জওয়াব শুনে টিচারের মুখখানা উজ্জ্বল হয়ে ওঠল। তাঁর মুখ থেকে আপনি বেরিয়ে এলো, ভেরি গুড আফরিন। তিনি বললেন মনে রেখ ‘যে আগে সালাম দেবে,সে বেশি ছাওয়াব পাবে’। এটা আমাদের কথা নয়। মহানবি (স) এর কথা। তবে বড়রা ছোটদের আগে কেন সালাম দেবে জানো? না, স্যার। কীভাবে সালাম দিতে হয় তা শেখাবার জন্যে।
আমিতো সালাম দিতে জানি স্যার!
তুমি তো ভালো মেয়ে, তাই জানো। সালাম দিলে আল্লাহ খুশি হন। তাই এখন থেকে আমরা সবাইকে সালাম দেব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করলো চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী
পরবর্তী নিবন্ধহেমন্তের ছবি