১৯৭১ সালের এই দিনে সারা দেশে মুক্তি আন্দোলন আরও উত্তাল হয়ে ওঠে। গণআন্দোলনে পাকবাহিনী দিশেহারা হয়ে পড়ে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সমরাস্ত্র নিয়ে একটি জাহাজ ১০ মার্চ চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে নোঙর করলে এর প্রতিবাদ জানিয়ে ১১ মার্চ স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানায়।
এদিন জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধিকে উলফ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তার কাছে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানি সামরিক জান্তার সমরসজ্জায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান সাত কোটি বাঙালির নেতা, তার নির্দেশ পালন করুন। লক্ষ্য অর্জনের জন্য সবাই একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম করুন। এ মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো বিরোধ থাকা উচিত নয়। জনগণ এখন নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। এদিনও বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ অনুযায়ী সর্বস্তরের মানুষ সরকারের সঙ্গে সব ধরনের অসহযোগিতা অব্যাহত রাখে। হাইকোর্টের বিচারপতি ও প্রশাসনের সচিবসহ সারা বাংলার সরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানের সর্বস্তরের কর্মচারী অফিস বর্জন করেন। এদিন সচিবালয়, মুখ্য সচিবের বাসভবন, প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ সব সরকারি ও আধাসরকারি ভবন ও বাসগৃহের শীর্ষে স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়তে থাকে। ন্যাপ (ওয়ালী) পূর্ববাংলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, পাঞ্জাব আওয়ামী লীগ সভাপতি এম খুরশীদ, মুসলিম লীগ প্রধান মমতাজ দৌলতানার বিশেষ দূত পীর সাইফুদ্দিন এদিন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার ধানমণ্ডিস্থ বাসভবনে পৃথক আলোচনায় মিলিত হন। এদিন সেনাবাহিনীর রসদ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর স্বাভাবিক সরবরাহে বাধার সৃষ্টি করে সংগ্রামী জনতা। রংপুর, যশোর ও সিলেটে রেশন নেয়ার সময় সেনাবাহিনীর একটি কনভয়কে বাধা দেয়া হয়। রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ সামরিক আদেশ জারি করে। গণহত্যার প্রতিবাদে প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর পাকিস্তান সরকারের এক চিত্রপ্রদর্শনীতে যোগদানে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি তিনি দেশের চিত্রশিল্পীদেরও যোগদানে বিরত থাকার আহ্বান জানান।