মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় গত শুক্রবার। রোববার দুপুরে ফল প্রকাশের পর মুহূর্তেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে রাফসান জামানের কথা।
এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশে প্রথম হয়েছেন রাফসান। তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন। ভর্তি পরীক্ষায় ৯৪ দশমিক ২৫ টেস্ট স্কোরসহ তার মেরিট স্কোর ২৯৪ দশমিক ২৫। পছন্দের ক্রম অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন রাফসান জামান। তাদের গ্রামের বাড়ি রংপুর জেলা সদরে হলেও জন্মের পর থেকেই পুরো পরিবার থাকছেন চট্টগ্রাম হালিশহরের ‘কে ব্লকের’ বাসায়।
মেডিকেলের ভর্তির সুযোগ পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় ছিল না রাফসান জামানের, তবে একেবারে মেধাতালিকায় সারাদেশে প্রথম হবেন, তাও ভাবনাতে ছিল না তার। ফল প্রকাশের পর রোববার দুপুর থেকে রাফসানদের বাসায় ভিড় বাড়তে থাকে। প্রতিবেশিদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড়ও কম ছিল না। উচ্ছ্বসিত রাফসান সাংবাদিকদের বলেন, ভর্তি পরীক্ষা খুবই ভালো হয়েছিল। তাই ভালো কিছুর জন্য আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। কিন্তু সারাদেশে প্রথম হবো, সেটি ভাবিনি। দুপুরের পর কোচিং থেকে যখন জানানো হয় তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না। নিজে রোল নম্বর যাচাই করার পর নিজেই চমকে যাই। এরপর বিশ্বাস হয়। এই সাফল্যের পিছনে শিক্ষকদের পাশাপাশি মা–বাবার অবদানও অনেক বেশি বলে জানান রাফসান।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসির উভয় পরীক্ষাতে সব বিষয়ে জিপিএ–৫ পাওয়া রাফসানের এবারের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কিছুটা কঠিন লেগেছিল। এজন্য কিছুটা হতাশ ছিলেন জানিয়ে রাফসান বলেন, আমাদের পরীক্ষা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়ার কারণে কিছুটা টেনশনে ছিলাম। পরীক্ষায় টিকব, সেটা আশা ছিল, কিন্তু এতটা ভালো হবে, তা কল্পনার বাইরে ছিল।
রাফসানের বাবা এ কে এম শামসুজ্জামান দেশের অন্যতম একটি শিল্প গ্রুপের চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম)। আর মা কাউসার নাজনীন গৃহিণী।
ছেলের এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বাবা একেএম শামসুজ্জামানও। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ছেলে সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়েছে, এর চেয়ে বড় আনন্দ তো আর কিছুতে হয় না।’
দুই ভাই–বোনের ছোট রাফসান। তার বড় বোন সাদিয়া ইবনে রাইসা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে স্থাপত্য বিভাগে স্নাতক করেছেন। বড় বোনের মতো প্রকৌশলী না হয়ে স্কুল জীবন থেকেই রাফসান চিকিৎসক হতে চেয়েছেন বলে জানান।
রাফসান বলেন, আমি এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার জন্য পুরোদমে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। এজন্য একটি কোচিং সেন্টারে কোচিংও করি। এছাড়া গত ১০–১২ বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন স্টাডি করেছি নিজে নিজে।
নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করার সবরকম চেষ্টা করেছি। আমার চেষ্টা সফল হয়েছে। চিকিৎসাবিদ্যায় পড়তে পারব। চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ার আগ্রহের বিষয়ে রাফসান বলেন, আমি ছোট থেকেই চিকিৎসক হতে চেয়েছি। এটি মহান পেশা। পড়ালেখা শেষ করে আমি একজন ভালো চিকিৎসক হতে চাই। এমবিবিএস পড়া শেষে নিউরো সার্জারি নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হতে দেশবাসীর দোয়াও চেয়েছেন রাফসান।
যারা ভবিষ্যতে মেডিকেলে পড়তে চান তাদের একাগ্রতার পাশাপাশি ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে পরামর্শ দিয়েছেন এই শিক্ষার্থী। এসএসসি–এইচএসসিতে ভালো ফল তো লাগবেই; সঙ্গে নিজের সর্বোচ্চটুকু ঢেলে দিতে হবে, বলেন রাফসান।