সাম্য ও সমতার মধ্য দিয়ে শিশুদের বড় করতে হবে

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন : জাতীয় শিশু দিবস

| শুক্রবার , ১৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৪০ পূর্বাহ্ণ

আজ ১৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী। একই সঙ্গে দিবসটি জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপিত হবে। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের অবিসংবাদিত এই নেতা। তাঁর সাহসী ও আপসহীন নেতৃত্বে অনুপ্রাণিত হয়েই পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি জাতি।

আমরা জানি, এদেশের মানুষ দীর্ঘকাল থেকেই লড়াই করেছে স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীনতা ছিল বাঙালির দীর্ঘকালের স্বপ্ন। সেই অগ্নিযুগ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের আগে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। সেই বীর শহীদদের রক্তের মিলিত স্রোতধারাই স্বাধীন বাংলাদেশের রূপায়নে মিলিত শক্তি হয়ে কাজ করেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই মহান পথ প্রদর্শক, যিনি জাতিকে একটি অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। তাঁর সঠিক নেতৃত্বে জাতি পরাধীনতার শৃঙ্খল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসে। স্বাধীনতার ডাক তিনি দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ: ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, যার যা আছে, তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করো; ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো’। এসব অবিস্মরণীয় অমোঘ বাক্যের মধ্য দিয়ে বাঙালি দেখতে পেয়েছিল আগামী দিনের আশা। আগামী দিনের দিশা। এরপর ২৫ মার্চ রাতে তিনি ঘোষণা করেন স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন সেই নেতা, যিনি প্রত্যেক বাঙালির চোখে স্বপ্ন এঁকে দিতে পেরেছিলেন। এই স্বাধীনতার ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপসহীন। প্রতিটি কাজে তিনি দিয়েছিলেন সাহসিকতার পরিচয়। ১৯৭২ সালে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর রেসকোর্স ময়দানের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন: ‘ইয়াহিয়া খান আমার ফাঁসির হুকুম দিয়েছিলেন। আমি বাঙালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। বাঙালিরা একবারই মরতে জানে। তাই আমি ঠিক করেছিলাম, আমি তাদের কাছে নতিস্বীকার করবো না। ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলবো, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা। তাদের আরো বলেছি, তোমরা মারলে ক্ষতি নেই। কিন্তু আমার লাশ বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়ো’। এই বাক্যটার ভিতর দিয়েই বোঝা যায় তিনি কতটা সাহসী ও আপসহীন ছিলেন। বোঝা যায়, দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি তাঁর কী পরিমাণ মমতা লুকিয়েছিল।

মানুষের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল গভীর মমতা। বিশেষ করে ছোটোদের তিনি খুব ভালোবাসতেন। শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। ছোটোবেলা থেকেই ছিলেন দয়ালুপ্রকৃতির। মানুষের প্রতি দরদি হওয়ার কারণেই নিপীড়িত বাঙালিকে তিনি অধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। পেরেছেন সচেতন করতে, সংগ্রামী করতে।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৫৬ সালের ৫ অক্টোবর দেশের ঐতিহ্যবাহী শিশু সংগঠন ‘কচিকাঁচার মেলা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহিত্যসংস্কৃতি চর্চা, শিক্ষা ও খেলাধুলার মাধ্যমে অসামপ্রদায়িক চেতনায় শিশুদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই সংগঠনের ভিত্তি তৈরি হয়। দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসার মানসিকতায় যেন শিশুরা বড় হয়, দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ পায়, সেজন্য তিনি দরদ অনুভব করেছিলেন। তিনি বুঝেছিলেন, দেশের আগামী দিনের নাগরিক আজকের শিশুদের স্বার্থ সংরক্ষণ দরকার। আগামী দিনে তারাই জাতিকে নেতৃত্ব দেবে। সুতরাং তাদের আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। শিশু মনে দেশপ্রেমের আগুন জ্বালাতে না পারলে কোনো শিশু সুষ্ঠু নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে না। ১৯৫৮ সালের কথা। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান দেশের ক্ষমতা দখল করে নেন জোর করেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আটকে রাখেন জেলে। পাঁচ বছরের জন্য পুরো দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় রাজনীতি। তখন গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে শেখ মুজিবুর রহমান তরুণদের এক যুগান্তকারী নির্দেশ দিয়ে গেলেন। বললেন, ‘এই পাঁচ বছর তোমরা শিশু সংগঠন কচিকাঁচার মেলার মাধ্যমে কাজ করো। নিজেদের সচল রাখো।’

এই নির্দেশের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, শিশু সংগঠনের প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ।

শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম ভালোবাসা। সমাজ, মানুষ আর মানুষের রাজনীতির মধ্যে নানা রকম বিভেদ থাকলেও তিনি বিশ্বাস করতেনপ্রতিটি শিশুকে সাম্য ও সমতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠতে হবে। প্রতিটি শিশুর প্রাণে জাগাতে হবে দেশপ্রেম ও অসামপ্রদায়িক চেতনা। সকল প্রকার অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে নতুন থেকে নতুনের দিকে এগিয়ে চলার যে শিক্ষা শিশুর মানসিক বিকাশে সহায়ক, সেই শিক্ষাই ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন শিশুর অন্তরে।

তাঁর জন্মদিনকে তাই জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে আমরা পালন করছি। শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ এবং সুখীসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে দলমতনির্বিশেষে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। আজকের দিনে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে আমরাও বলতে চাই ‘আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমরা বর্তমানকে উৎসর্গ করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। দলমতনির্বিশেষে সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে