সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আনতে হবে দায়বদ্ধতার আওতায়

| মঙ্গলবার , ২৬ জুলাই, ২০২২ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

সমাজের প্রতি ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা অপরিসীম। মানুষকে বলা হয়ে থাকে সামাজিক জীব। শুধু সমাজবদ্ধভাবে চলাফেরার কারণে মানুষ সামাজিক জীব নয়; ‘বিবেক’ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে মানুষ সামাজিক জীব। এই বিবেক মানুষকে চালায়, এলোমেলো বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনব্যবস্থা থেকে একটি স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থায় নিয়ে আসে। অন্যদিকে বিবেকই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আদালত, যেখানে নিজেকে দাঁড় করানো যায় নিজের সামনে। নিজের প্রতি যার আত্মসম্মানবোধ আছে এবং নিজেকে সমাজের কাছে দায়বদ্ধ মনে করে সে অপরাধ থেকে দূরে থাকে। তবে সমাজবিজ্ঞানীরা বলেন, অপরাধ না করেও অনেক সময় অনিচ্ছায়ও মানুষ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। অনেক ব্যক্তিই কোনো না কোনোভাবে ভিকটিম হয়ে পড়ছে। কেউ ব্যক্তির কারণে ভিকটিম, কেউবা সমাজের কারণে। অন্য দিকে ব্যক্তির কাছেও সমাজ ভিকটিম বা জিম্মি হয়ে পড়ে। সমাজের প্রতি সমাজের মানুষের দায় আছে। ফলে সবক্ষেত্রে জবাবদিহিতার প্রশ্ন চলে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সামাজিক দায়বদ্ধতা অনেকটা উপেক্ষিত। ফলে নানারকম গুজব ছড়ানো থেকে শুরু করে হানাহানি উদ্রেক ও সম্প্রীতি নষ্টের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মাধ্যম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উত্তরণে সামাজিক মাধ্যমগুলোর অসামান্য উপকারিতার কথা স্বীকার করেও দাঙ্গা লাগানো ও অন্যান্য নেতিবাচক ঘটনার হোতা হচ্ছে এই সামাজিক মাধ্যম।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না, সে বিষয় আমরা সচেতন নই। অবস্থাটা এমন যে সবাই এখানে খুবই স্বাধীনভাবে যা খুশি তা-ই করতে পারছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের একটা সীমারেখা টানা আছে। আপনি এমন কোনো পোস্ট দিতে পারবেন না যা অপরের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেয়; আপনি এমন কোনো পোস্ট দিতে পারবেন না যা অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা সঞ্চার করে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও এ বিষয়ে রেজ্যুলেশন নেওয়া হয়েছে এবং ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকেও এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এখন ফেইসবুকসহ এই মাধ্যমগুলোও বলছে যে তারা একটা ইন্ডিপেন্ডেন্ট অথরিটি তৈরি করে দিয়েছে যারা এসব মনিটর করবে এবং আইডি ব্লক করাসহ নানা পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু আমরা দেখছি যে ফেসবুক বাংলাদেশে বাণিজ্য করছে কিন্তু কোনো দায়বদ্ধতার পরিচয় দিচ্ছে না। এজন্য ফেইসবুককে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। ফেসবুকের দায় নিয়ে ক্ষতিপূরণের মামলাও করা যায়। মিয়ানমারেরর সিভিল সোসাইটি ফেসবুকের বিরুদ্ধে এমন বেশ কিছু মামলাও করেছে।
এ বিষয়ে তিনি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের কথা উল্লেখ করেন। এ মন্ত্রণালয়কে কোন্‌ কোন্‌ উৎস থেকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে সেসব খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের দক্ষতা কাজে লাগাতে হবে এবং এজন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রণালয় একটা সমন্বিত উদ্যোগ নিতে পারে। তাঁর ভাষায়, আমরা এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে উগ্রবাদী ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর কাছে, ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে দিতে পারি না। দেশের ভেতরে-বাইরে সক্রিয় এমন গোষ্ঠী ও ব্যক্তিদের যেমন চিহ্নিত করতে হবে তেমনি ফেসবুক-ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোর কর্তৃপক্ষকেও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এ বিষয়গুলো এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং এজন্য জাতিসংঘের এজেন্সিও আছে। আমি মনে করি তাদের সঙ্গে আমাদের একটা রাষ্ট্রীয় যোগসূত্র তৈরি করতে হবে। সমাজে ও রাষ্ট্রে সামপ্রদায়িক সমপ্রীতি রক্ষায় এটা এখন জাতীয় কর্তব্য হয়ে পড়েছে।
প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা থেকে মানুষের সাহায্যে মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে সামর্থবান প্রত্যেকেরই অন্যের সংকটকালে সাধ্যমতো সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, আজ পর্যন্ত পৃথিবী যতটুকু এগিয়েছে তা এই সামাজিক দায়িত্ববোধের কারণে এগিয়েছে। কাজেই ব্যক্তি হিসেবে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। সামাজিক দায়বদ্ধতা মানুষের একটি সহজাত সৌন্দর্য এবং সহজাত দায়িত্বশীলতা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধলিবিয়া ও মালদ্বীপের স্বাধীনতা দিবস