সামপ্রদায়িক হামলা নির্যাতন বন্ধের দাবি

ঐক্য পরিষদের গণঅবস্থান কর্মসূচি

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৮ নভেম্বর, ২০২০ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

ধর্ম অবমাননার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সামপ্রদায়িক হামলা-নির্যাতন বন্ধ, নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। গতকাল সকাল পৌনে ১০টায় নিউ মার্কেট মোড়ে দুই ঘণ্টার এ কর্মসূচি পালন করেন ঐক্য পরিষদসহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন হিন্দু ও বৌদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এর আগে, নিউমার্কেট মোড়ে নির্মাণ করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। সকাল থেকেই সেখানে অবস্থান নিতে শুরু করেন ঐক্য পরিষদের নেতারা। মঞ্চের আশপাশে পরিষদের হাজার হাজার নেতাকর্মী গণঅবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেন। এছাড়াও প্রগতিশীল নেতৃবৃন্দও এতে অংশ নেন। এসময় রাস্তায় অবস্থান নেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্তসহ সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা। তাঁরা ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’, ‘৭২ এর সংবিধান ফিরিয়ে দাও’, ‘সামপ্রদায়িক শক্তির কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
মূলত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে লালমনিরহাট ও কুমিল্লায় সংখ্যালঘুদের আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিলের প্রতিবাদে এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবিতে চট্টগ্রামে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কারো উপর আস্থা নেই : কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত ক্ষোভের সাথে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ছাড়া সরকারের আর কারও ওপর দেশের সংখ্যালঘুদের আস্থা নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংখ্যালঘুর স্বার্থবান্ধব। তিনি বলেন, ৬৪-র সাম্প্রদায়িক হামলার সময় দু’জন রাজনীতিবিদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আতাউর রহমান খান এগিয়ে এসে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করে স্লোগান তুলেছিলেন। ‘বাঙালি রুখিয়া দাঁড়াও’-আজ সেই রাজনীতিবিদ কই। সাম্প্রদায়িকতার ক্রম উত্থান ও সংখ্যালঘুদের উপর হামলার বিরুদ্ধে রাজনীতিবিদদের কোন উদ্যোগ নেই।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সংখ্যালঘুরা যেমনিভাবে নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তেমনি অন্য ধর্মের প্রতিও শ্রদ্ধাশীল। অথচ ২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তাদের বাড়িঘর-ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। নানা অপপ্রচারের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতাকে তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এর ফল কখনো শুভ হবে না।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায় বাংলাদেশের জনসংখ্যা গণনায় সংখ্যালঘু হতে পারে কিন্তু সারাবিশ্বে এরা সংখ্যালঘু নয়। তা আজ সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।
তিনি বলেন-সংখ্যালঘুরা আর পালিয়ে যাবে না। ঐক্যবদ্ধ শক্তি দিয়ে তারা অন্যায় ও জুলুমের প্রতিবাদ করবে। সংখ্যালঘুদের দাবি মানা না হলে ভবিষ্যতে লং মার্চের মতো কঠোর কর্মসূচী আসতে পারে।
কর্মসূচিতে সংহতি জানান সাংবাদিক কবি আবুল মোমেন। তিনি বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি ‘হতাশাজনক’। একাট্টা হয়ে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে না দাঁড়ালে দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। দেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করতে যাচ্ছে তখন সবারই ভাবা দরকার এ দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ আছে কি না? এতে ড. জিনবোধি ভিক্ষু সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।
হাজার দশেক লোকের জনসমাবেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অসংখ্য সংগঠন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে উপস্থিত হয়। জামায়েত শেষে বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাবে এলে ঐক্য পরিষদের মহানগর কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী পরিমল কান্তি চৌধুরী কর্মসূচির সমাপ্ত ঘোষণা করেন। সভা পরিচালনা করেন মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. নিতাই প্রসাদ ঘোষ। বক্তব্য রাখেন পরিষদের দক্ষিণ ও উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে তাপস হোড় ও অ্যাড. অজিত নারায়ণ অধিকারী, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত, অ্যাড. চন্দন বিশ্বাস, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাড. চন্দন তালুকদার ও সম্পাদক শ্রীপ্রকাশ দাশ অসিত, অ্যাড. তপন কান্তি দাশ, সুমন দেবনাথ, অ্যাড. প্রদীপ কুমার চৌধুরী, জেলা পূজা পরিষদের সম্পাদক অসীম কুমার দেব, পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সুমন কান্তি দে ও বিশ্বজিৎ পালিত, বিকাশ মজুমদার, দেবাশীষ নাথ দেবু, মহানগর যুব ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রুবেল পাল, উত্তরের আহ্বায়ক রিমন মুহুরী, কাউন্সিলর প্রার্থী পুলক খাস্তগীর, শৈবাল দাশ সুমন, রুমকি সেনগুপ্তা, নিলু নাগ, কল্লোল সেন, সুগ্রীব মজুমদার দোলন।
এতে যোগ দেয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মহানগর, জেলা ও উপজেলা কমিটি সমূহ, পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর শাখা সহ বিভিন্ন ইউনিট, বাংলাদেশ হিন্দু ফাউণ্ডেশন, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, যুব ঐক্য পরিষদ, মহিলা ঐক্য পরিষদ, প্রবর্ত্তক সংঘ (বাংলাদেশ), শারদাঞ্জলি ফোরাম, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, সনাতন সংগঠন, গীতা শিক্ষা কমিটি, গোলপাহাড় শশ্মান কালী বাড়ি পরিচালনা কমিটি, জাগো হিন্দু, আইনজীবী বিজয়া সম্মিলনী পরিষদ-চট্টগ্রাম, হিন্দু ডক্টরস এসোসিয়েশন-চট্টগ্রাম, ইসকন-প্রবর্ত্তক ও নন্দনকানন, সৎসঙ্গ বিহার-চট্টগ্রাম, লোকনাথ সেবক সংঘ, উত্তর চট্টগ্রাম মৎসজীবী জলদাশ ফেডারেশন, স্বস্তিকা, আমাদের পূজো, জাগো অপরাজিত মৈত্রী সংঘ, সনাতন মঠ মন্দির সেবায়েত সংঘ, সনাতনী জাগরণ সংঘ, মাইনোরিটি ওয়াচ, বিশ্ব সনাতন ঐক্য, জুয়েলার্স সমিতি, স্বর্ণশিল্পী ঐক্য পরিষদ, গীতা প্রচার সংঘ, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ, বৌদ্ধ সমিতি, স্বর্ণশিল্পী শ্রমিক লীগ, হিন্দু সমাজ কল্যাণ পরিষদ, গীতা পরিষদ, দক্ষিণ বুড়িশ্চর রামকৃষ্ণ সংঘ, কৃষ্ণ মন্দির-ক্ষেতচর, সনাতন সম্প্রীতি ঐক্য পরিষদ, পিপল্‌স রাইট্‌স ফাউণ্ডেশন, হিন্দু মহাজোট, চট্টগ্রাম বৈদিক সংঘ, লোকনাথ ধাম-চাক্তাই।
হেফাজত ইসলামকে ধন্যবাদ : সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানানোর জন্য হেফাজতে ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঐক্য পরিষদ নেতা রানা দাশগুপ্ত। গতকাল গণঅবস্থান কর্মসূচিতে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা নূর হোসাইন কাসেমীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, গত পরশু এক বিবৃতিতে কাসেমী বলেছেন, মানবাধিকার বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। লালমনিরহাট ও কুমিল্লার ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়।
তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
তীব্র যানজট : নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান কর্মসূচির কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ত্র ও বিস্ফোরকসহ নব্য জেএমবির চার সদস্য গ্রেপ্তার
পরবর্তী নিবন্ধগণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন সংগ্রামের বিকল্প নেই