সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইফুলকে গুলির ঘটনায় পুলিশের সম্পৃক্ততা নেই

নালিশি মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন, বাদীর নারাজি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:৩২ পূর্বাহ্ণ

চাঁদা না দেওয়ায় চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা সাইফুল ইসলামকে গুলি করে পঙ্গু করার অভিযোগে দায়ের হওয়া নালিশি মামলায় সিএমপির বায়েজিদ বোস্তামী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান, পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তা ও এক সোর্সসহ মোট সাত জনের কারও বিরুদ্ধেই ঘটনায় সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তার এড়াতে সাইফুল সেদিন সহযোগীদের নিয়ে অস্ত্র হাতে বন্দুকযুদ্ধ করেন বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের একপর্যায়ে সাইফুল গুলিবিদ্ধ হন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা হিসেবে সাইফুল নালিশি মামলাটি করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সিএমপির উত্তর জোনের উপকমিশনার (ডিসি) মোখলেছুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, আদালত থেকে অভিযোগটির সত্যতা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা একজন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছিলাম। তিনি অভিযোগটি তদন্ত করেছেন। এরপর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

গত ৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাইফুলের মা ছেনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে নালিশি মামলাটি দায়ের

করেন। সাবেক ওসি কামরুজ্জামান ছাড়াও ওই মামলায় উপপরিদর্শক (এসআই) মেহের অসীম দাশ, নুরনবী, কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সাইফুল ইসলাম, মো. রবিউল হোসেন ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়। আদালত মামলার অভিযোগ আমলে নিয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদমর্যাদার নিচে নয়, এমন পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারকে আদেশ দেন। ঘটনার প্রায় ১৪ মাস পর দায়ের হওয়া মামলাটি তদন্ত করেন নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মো. শহীদুল ইসলাম। প্রায় আড়াই মাস তিনি

মামলাটির তদন্ত করেন। তদন্ত শেষে নভেম্বরে তিনি ১৯৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

আদালত সূত্র জানায়, পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদন নিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানি হয়। ওই দিন মামলার বাদী ছেনোয়ারা বেগম আদালতে হাজির ছিলেন। তিনি পুলিশের দাখিল করা প্রতিবেদন নিয়ে নারাজি দাখিলের জন্য সময় আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলার বাদীর সময় আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলাটির প্রতিবেদন নিয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৯ জানুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় নালিশি মামলার প্রধান বিবাদী ও সাবেক ওসি কামরুজ্জামান ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। গোলাগুলির খবর পেয়ে তিনি সেখানে পৌঁছান। বিবাদী এসআই মেহের অসীম সাইফুলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। মামলা দুটি তদন্ত করে তিনি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। তিনি এবং আরেক বিবাদী সোর্স শাহজাহানও ওই সময় ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তবে নালিশি মামলার ঘটনার সময় চেকপোস্টে ডিউটিতে ছিলেন এসআই নুরুনবী, কে এম নাজিবুল ইসলাম তানভীর, এএসআই সাইফুল ইসলাম ও মো. রবিউল হোসেন। তারা কেউ সাইফুলকে সরাসরি গুলি ও চাঁদা দাবি করার ঘটনায় জড়িত নয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০২১ সালের ১৬ জুন রাতে সাইফুল কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বায়েজিদ বোস্তামী থানা এলাকার বাসা থেকে বের হন। পরে স্থানীয়ভাবে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত শাহজাহান তাকে জরুরি কথা বলার জন্য ডাকেন। একটি রেস্টুরেন্টে বসা অবস্থায় হঠাৎ সাইফুলকে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা একটি সাদা প্রাইভেটকারে করে তুলে নিয়ে যায়। গাড়িটিতে করে তাকে কয়েক ঘণ্টা নগরীর বিভিন্ন সড়কে ঘোরানো হয়। একপর্যায়ে তাকে বায়জিদ লিংক রোডে আনা হয়। তখন রাত ১২টা থেকে ১টা বাজে। এসময় পুলিশ কর্মকর্তারা তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। কিন্তু টাকা দিতে অস্বীকার করলে সাবেক ওসি কামরুজ্জামান সাইফুলের পায়ে গুলি করেন। ঘটনার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইসঙ্গে তাকে একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চমেক হাসপাতালে অবস্থার অবনতি হলে সাইফুলকে ঘটনার পরদিন রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সাইফুল থানার বিভিন্ন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। ঘটনার দিন বায়েজিদ লিংক রোডে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। গ্রেপ্তার এড়াতে সাইফুল ও তার সহযোগীরা সেখানে মোটরসাইকেল ফেলে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়। এরপর সেখান থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। কিছুক্ষণ পর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় সাইফুলকে উদ্ধার করা হয়। এসময় তার কাছ থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও কয়েকটি গুলি জব্দ করা হয়। একইসঙ্গে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় সাইফুল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে বায়েজিদ বোস্তামী থানায় নতুন করে দুটি মামলা করা হয়। ওই মামলায় গুলিবিদ্ধ সাইফুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনগণ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না
পরবর্তী নিবন্ধ১৮ মামলার আসামি গিট্টু জাহাঙ্গীর অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার