বিসমিল্লাহ খাঁ- ভারতের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের জগতে এক অবিস্মরণীয় প্রতিভা। মূলত সানাই শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি। সানাইকে ধ্রুপদী সংগীতে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার কৃতিত্ব তাঁরই। শাস্ত্রীয় সংগীতে তিনি ওস্তাদ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। বিসমিল্লাহ খাঁর জন্ম ১৯১৬ সালের ২১ মার্চ। জন্মের পর তাঁর নাম রাখা হয়েছিল কামরুদ্দিন খান। বিসমিল্লাহ খান নামটি তাঁর পিতামহের দেওয়া। পরবর্তী সময়ে বিসমিল্লাহ খাঁ নামেই তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। বিসবিল্লাহ খাঁর পূর্ব পুরুষেরা ছিলেন বিহারের ডুমরাও রাজ্যের রাজ সঙ্গীতজ্ঞ। বারাণসীর বিশ্বনাথ মন্দিরের সানাই বাদক আলী বকস বিলায়াতু ছিলেন বিসমিল্লাহ খাঁর শিক্ষাগুরু। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি সানাইয়ের খুঁটিনাটি রপ্ত করে নিয়েছিলেন। বিসমিল্লাহ খাঁ আর সানাই হয়ে উঠেছিল একে অন্যের পরিপূরক। সঙ্গীত কৃতির স্বীকৃতি হিসেবে বিসমিল্লাহ খাঁ ভারতরত্ন, পদ্মভূষণ, পদ্মশ্রী, সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, তানসেন পুরস্কার, ইরান প্রজাতন্ত্র প্রদত্ত তালার মৌসিকী পুরস্কার, সঙ্গীত নাটক একাডেমী ফেলো এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, শান্তিনিকেতন ও বারাণস হিন্দু বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অর্জন সহ নানা পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এতো বিপুল খ্যাতিমান হওয়া সত্ত্বেও বিসমিল্লাহ খাঁ অত্যন্ত অনাড়ম্বর জীবন যাপন করতেন। প্রচারবিমুখ, অন্তর্মুখী এই শিল্পী স্বভাবে ছিলেন নম্র ও বিনয়ী। দু চাকার সাইকেল ছিল তাঁর চলার বাহন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমন্ত্রিত হয়ে সানাই বাজিয়েছেন। হৃদয়ের সমস্ত আবেগ ঢেলে তিনি সৃষ্টি করতেন নানারকম সুর। সত্যজিৎ রায়, গৌতম ঘোষ প্রমুখ প্রথিতযশা পরিচালকের চলচ্চিত্রে বিসমিল্লাহ খাঁর সানাই ব্যবহৃত হয়েছে আবহ সঙ্গীতে। সত্যজিৎ রায়ের ‘জলসাঘর’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের অংশ হিসেবে সানাই বাজিয়েছেন তিনি। শক্তিমান চলচ্চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ বিসমিল্লাহ খাঁর জীবন ও কর্মনির্ভর একটি প্রমাণ্য ছবি নির্মাণ করেন। ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট প্রয়াত হন ওস্তাদ বিসমিল্লাহ খাঁ।