একটা সমসয় ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিয়মিতই হোয়াইট ওয়াশ হতো বাংলাদেশ। সময় গড়ানোর সাথে সাথে উল্টো প্রতিপক্ষকে হোয়াইট ওয়াশ করতে থাকে টাইগাররা। কিন্তু এবার আবার সেই হোয়াইট ওয়াশের লজ্জায় পুড়তে হলো তাদের। শুধু তাই নয় শ্রীলংকার কাছে ষষ্ঠবারের মতো হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ডুবলো বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টে বাংলাদেশকে ১৯২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ১২ বারের মতো সিরিজ জিতে নিলো লংকানরা। সর্বশেষ ২০০৯ সালে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল শ্রীলঙ্কা। সেই সময় দুই ম্যাচের সিরিজের দুটি ম্যাচই জিতেছিল লঙ্কানরা। এর ১৫ বছর পর আবার সেই লঙ্কানদের কাছে ধবলধোলাই হতে হলো বাংলাদেশকে। এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১৩টি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কেবল একটি সিরিজ ড্র করতে পেরেছে টাইগাররা। বাকি সবগুলো সিরিজই জিতে নিয়েছে লংকানরা। চট্টগ্রামে দুই ম্যাচের সিরিজের শেষ টেস্টে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৫১১ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে গেছে ৩১৮ রানে।
বাংলাদেশের হারের মঞ্চটা তৈরি হয়ে গিয়েছিল ম্যাচের তৃতীয় দিন থেকেই। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাকে যে পঞ্চম দিনে নিয়ে যেতে পেরেছে সেটাই বড় সাফল্য। শেষ দিকে অপেক্ষা ছিল কেবল পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর। মেহেদী মিরাজের হাফ সেঞ্চুরিতে সে ব্যবধানটা কিছুটা কমিয়েছে মাত্র। তবে সেই সাথে আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাকে। কারণ সঙ্গীর অভাবে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও (৮১ রান) সেটা পূরণ করতে পারেননি মিরাজ। আগের দিনের ৭ উইকেটে ২৬৮ রান নিয়ে গতকাল পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। ব্যাটিংয়ে নেমে টেস্ট ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন মিরাজ। ডানহাতি এই ব্যাটারের ফিফটি হাঁকানোর পরই ১৪ রানের মাথায় আউট হয়ে যান তাইজুল। এরপর ২৫ বলে ৬ রান করে সাজঘরে ফেরত যান হাসান মাহমুদ। সর্বশেষ ব্যাটার হিসেবে নেমে ২ রানে শেষ হয় খালেদ আহমেদের ইনিংস। তবে অপরাজিত থেকে যান মিরাজ। ১১০ বলে ৮১ রানের ইনিংস খেলেন এই অলরাউন্ডার। মাত্র ৭০ মিনিটে জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারে শ্রীলংকা।
আগেরদিন ম্যাচের চতুর্থ দিনে লঙ্কানদের দেওয়া বিশাল রানের জবাবে দায়িত্বহীন ব্যাটিং করে ফিরেন তিন টপঅর্ডার। ওপেনিংয়ে ৩৭ রানের ছোট জুটি করার পর বোকার মতো বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরত যান মাহমুদুল হাসান জয়। লঙ্কান স্পিনার প্রবাধ জয়সুরিয়াকে পেছনে নেমে কাট করতে গেলে সরাসরি ভেঙে যায় জয়ের স্টাম্প। ৩২ বলে ২৪ রান করেন তিনি। কিছুক্ষণ পরই জয়ের দেখানো পথে হাঁটেন জাকির হাসানও। খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ তুলে উইকেট বিলিয়ে আসলেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৩৯ বল খেলে মাত্র ১৯ রান করেন জাকির। তৃতীয় উইকেটে মোমিনুলের সঙ্গে ৪৩ রানের একটি জুটি করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে জুটিটি বেশি লম্বা হয়নি শান্তর ২০ রানে ফিরে যাওয়ার কারণে। পেসার লাহিরু কুমারার বলে বোল্ড হন বাংলাদেশ অধিনায়ক। এরপর বলতে গেলে একাই লড়াই চালিয়ে গেছেন মোমিনুল হক। তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। প্রবাথ জয়সুরিয়ার বলে লাহিরু কুমারার হাতে ক্যাচ হওয়ার আগে ৮ বাউন্ডারি আর ১ ছক্কায় ৫৬ বলে ৫০ রান করেন তিনি। এরপর সাকিব আল হাসান আর লিটন দাস লড়াই করার চেষ্টা করেন। তবে দুজনই সেট হয়ে ইনিংস বড় করতে পারেননি। সাকিব করেন ৩৬, লিটন ৩৮ রান। এরপর ১৫ করে কামিন্দু মেন্ডিসের বলে এলবিডব্লিউ হন শাহাদাত হোসেন দিপু। শ্রীলংকার পক্ষে লাহিরু কুমারা নিয়েছেন ৫০ রানে ৪ উইকেট। ৩টি উইকেট নিয়েছেন কামিন্দু। ম্যাচ সেরা এবং সিরিজ সেরা দুটি পুরস্কারই জিতেছেন কামিন্দু মেন্ডিস।