সাত মাসে ৮ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি, যাচ্ছে ১৫৭ দেশে

প্রয়োজনীয় ৯৭ শতাংশ ওষুধই তৈরি হচ্ছে দেশে

হাসান আকবর | শুক্রবার , ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৫:১২ পূর্বাহ্ণ

ইউরোপ ও আমেরিকাসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় আট হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এটিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম একটি বৃহৎ খাতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। শুধু রপ্তানিই নয়, দেশের প্রয়োজনীয় অন্তত ৯৭ শতাংশ ওষুধই দেশে তৈরি হচ্ছে। এই খাতে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে।

বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের বিকাশ প্রত্যাশা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। একসময় দেশের প্রয়োজনীয় সিংগভাগ ওষুধ আমদানি করতে হলেও এখন চিত্র পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, পাবনা, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬৯টি ছোটবড় ওষুধ কারখানা রয়েছে। কারখানাগুলোর মধ্যে বেশ কিছু কারখানা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। বিশেষ করে স্কয়ার, বেক্সিমকো, গ্লাক্সো, রেনেটা, ইনসেপটা, হেলথ কেয়ার, এসকেএফ, সেনডোজসহ বেশ কিছু কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ উৎপাদিত হয়। এই ধরনের বিশ্বমানের ৪২টি ওষুধ কারখানায় উৎপাদিত কোটি কোটি টাকার ওষুধ আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, জাপান, ইতালি, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, সৌদি আরবসহ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার ওষুধ রপ্তানি এই খাতের বিরাট অর্জন বলেও সূত্র জানিয়েছে। দেশের ২৬৯টি এলোপ্যাথিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৪ হাজার ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকার ওষুধ ও ওষুধ তৈরির কাঁচামাল তৈরি হচ্ছে বলেও ওষুধ প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে।

বাংলাদেশে উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বমানে উন্নীত হয়েছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানি হলেও কোনো কোনো দেশে রপ্তানির পরিমাণ খুবই সামান্য। বিদেশে ওষুধের বিশাল বাজার সৃষ্টির ক্ষেত্রে কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বৈদেশিক মিশন, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের সাথে যৌথভাবে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে অগ্রসর হলে এই খাতে আরো বেশি সফলতা আসবে।

বিশ্বের অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ওষুধ রপ্তানিতে বাংলাদেশ বেশ এগিয়ে থাকার কথা উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, বর্তমানে সরকার আফগানিস্তান, আজারবাইজান, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, হংকং, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, ইরান, জর্ডান, জাপান, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ম্যাকাও, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তাজিকিস্তান, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন, তাইওয়ান, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিন, লেবানন, কুয়েত, কাতার, ওমান, উপসাগরীয় দেশসমূহ (জিসিসি), তুর্কমেনিস্তান কাজাকিস্তান, বাহরাইন, ব্রুনাই দারুস সালাম, দুখাই, নরওয়ে, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মলদোভা, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল রাশিয়া, রুমানিয়া, ফ্লোভেনিয়া, স্লোভাকিয়া, স্পেন, আয়ারল্যান্ড, বুলগেরিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া, সান মারিনো, চাদ, মিশর, কেনিয়া, লিবিয়া, লাইবেরিয়া, মরিশাস, নাইজেরিয়া, সেনেগাল, সোমালিয়া, সোয়াজিল্যান্ড, তানজানিয়া, তিউনিসিয়া, টোগো, উপান্ডা, জামাইকা, লাওস, জাম্বিয়া, মেঙিকো, হাইতি, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, মন্টিনিগ্রো, নিকারাগুয়া, পানামা, সামোয়া, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভেনিজুয়েলা, প্যারাগুয়ে, উরুগুয়েসহ ১৫৭টি দেশে ওষুধ রপ্তানির রেকর্ড পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় একটি সেক্টর হিসেবে ওষুধ খাতের আত্মপ্রকাশ ঘটছে উল্ল্লেখ করে ওষুধ প্রশাসনের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ওষুধ রপ্তানিতে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। এই খাতে বিদেশী বিনিয়োগ যেমন হচ্ছে, তেমনি আমাদের বিনিয়োগে বিদেশেও কারখানা গড়ে উঠছে। সবকিছু মিলে অসাধারণ এক সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠেছে ওষুধ শিল্প। এই শিল্পের বিকাশে সরকারি বেসরকারি যৌথ যে উদ্যোগ তাকে আরো গতিশীল করতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

দেশের অনেক কারখানা বিশ্বমানের ওষুধ তৈরি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আমেরিকা এবং কানাডাসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছি। এসব দেশে ওষুধ রপ্তানি অনেক কঠিন। বিশেষ করে আমেরিকা এবং কানাডায় নানা কঠিন ও জটিল পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই কেবল অনুমোদন দেয়া হয়। বাংলাদেশের একাধিক ওষুধ কোম্পানি ওইসব কঠিন পরীক্ষা নিরীক্ষায় পাস করে সেখানে ওষুধ পাঠাচ্ছে। পৃথিবীর বহু দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে আমরা বাজার ধরছি মন্তব্য করে তিনি বলেন, গার্মেন্টস খাতের মতো আমাদের ওষুধ শিল্পও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের একটি বড় খাত হয়ে উঠতে যাচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক সুখবর বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘কিছু করা যাবে?’ পরীক্ষায় সুবিধা পেতে শিক্ষামন্ত্রীকে এসএমএস
পরবর্তী নিবন্ধএসএসসি পরীক্ষা শুরু, প্রথমদিন অনুপস্থিত ৮০৯ জন