সাতকানিয়ায় ১০ কোটি টাকার ক্রিস্টাল মেথসহ আটক ২

আসছে অবাধে, মূল হোতারা আড়ালে

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

অবাধে আসছে ক্রিস্টাল মেথ বা আইস। ধরা পড়ছে পাচারকারীরা। মূল হোতারা রয়ে যাচ্ছে আড়ালে। গত বৃহস্পতিবার সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাটস্থ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুই কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইসসহ পিকআপের চালক-হেলপারকে আটক করেছে পুলিশ। যার মূল্য ১০ কোটি টাকা। এবারই প্রথম নয়, আইস ইতোপূর্বেও ধরা পড়েছে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে। কিন্তু থেমে নেই পাচারকারীদের তৎপরতা। গত ১২ জুলাই র‌্যাব ফিসারীঘাট এলাকা থেকে ৯৭৫ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথসহ (আইস) ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে। এ ক্রিস্টাল মেথগুলো (আইস) টেকনাফ থেকে আড়ালে চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন পটিয়ার মো. রুবেল (৩২) নামে এক মাছ ব্যবসায়ী। পরে তিনি সৌদি আরব চলে যান। এরপর এ মাদকগুলো বিক্রয়ের জন্য কোতোয়ালী এলাকায় নিয়ে আসেন এ মাদক চক্রটি। চন্দনাইশ উপজেলা থেকে গত ১ মে ক্রিস্টাল মেথসহ একজনকে গ্রেপ্তার করে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। তার কাছ থেকে ২০০ গ্রাম আইস উদ্ধার করা হয়েছিল।
সাতকানিয়া প্রতিনিধি জানান, সাতকানিয়া থানা পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০ কোটি টাকা মূল্যের ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথসহ ২ মাদক কারবারিকে আটক করেছে। আটককৃতদের নাম ফয়সাল আহমদ (২৯) ও রোহিঙ্গা যুবক জাহিদ আলম (২০)। তারা উভয় পিকআপ চালক ও হেলপার। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাট এলাকায় পুলিশ এ অভিযান চালায়। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জাকারিয়া রহমান জিকু জানান, বিপুল পরিমাণ ভয়ংকর মাদক ক্রিস্টাল মেথ পাচারের সংবাদ গোপন সূত্রে পেয়ে সাতকানিয়া থানার একদল পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কেরানীহাটের উত্তরে তেমুহনী নেজাম উদ্দিন এলপিজি গ্যাস পাম্পের সামনে অবস্থান নেয়। এসময় মহাসড়কে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হয়। এক পর্যায়ে রাত ২টার দিকে একটি মিনি ট্রাককে নং- (ঢাকা মেট্রো-ড- ১১- ৯৩৪২) সিগন্যাল দিয়ে থামানো হয়। এসময় গাড়ির চালক ও হেলপার পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটক করে। আটককৃতরা হলো টেকনাফের বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার গুরা মিয়ার পুত্র মিনি ট্রাক চালক ফয়সাল আহমেদ (২৯) ও উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং- ০৭ এর আনজুর হোসেনের পুত্র হেলপার জাহিদ আলম (২০)। পরে চালক ও হেলপারের দেয়া তথ্য মতে মিনি ট্রাকের এয়ারকুলারের ভিতর বিশেষ ব্যবস্থায় রাখা উন্নত মানের পলি প্যাকেট ভর্তি ২ কেজি ওজনের ক্রিস্টাল মেথ জব্দ করা। উদ্ধারকৃত মাদকের আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এসময় মাদক পরিবহনের দায়ে পুলিশ মিনি ট্রাকটিও জব্দ করে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকারিয়া রহমান জিকু আরো জানান, মো. আরিফুর রহমান নামের এক এনজিও কর্মকর্তা বদলিজনিত কারণে ওই মিনি ট্রাক ভাড়া করে টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসবাবপত্র নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সুযোগে গাড়ির চালক ও হেলপার মিলে এসব ভয়ংকর মাদক ঢাকায় পাচার করছিলো। মাদক উদ্ধারের ঘটনায় সাতকানিয়া থানায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন, ওসি (তদন্ত) সুজন কুমার দে, উপপরিদর্শক শেখ সাইফুল আলম ও উপ পরিদর্শক জাকির হোসেন।
ভয়ংকর মাদক এই ক্রিস্টাল মেথ। অতিরিক্ত সেবনে মৃত্যু অপরিহার্য। তারপরও তরুণরা এর দিকে ঝুঁকছে। আগে থেকে ইয়াবায় আসক্ত মাদকসেবীদের মধ্যে ক্রিস্টাল মেথ (আইস) গ্রহণের প্রবণতা বেশি। মূলত ক্রিস্টাল মেথামফিটামিনের সংক্ষিপ্ত নাম ক্রিস্টাল মেথ। এটি দেখতে স্বচ্ছ পাথরের মতো। রং নীলাভ সাদা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে সৈনিকদের সজাগ ও উদ্দীপ্ত রাখতে মেথ ব্যবহারের কথা শোনা গেছে। চিকিৎসকরা স্থ্থূলতা দূর করতে ও অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারের (এডিএইচডি) চিকিৎসায় সীমিত ক্ষেত্রে মেথামফিটামিন ব্যবহার করেন উন্নত বিশ্বে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মেথামফিটামিন বা এমফিটামিনের যোগান আসে মিয়ানমারের সান স্টেট থেকে। মাদকের রাজধানী হিসেবে পরিচিত সান স্টেট থেকেই এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত, চীন, লাওস এবং থাইল্যান্ডে এমফিটামিনের যোগান আসে। যার মধ্যে সান স্টেট-মান্দালে হয়ে সাতটি আন্তর্জাতিক রুট দিয়ে বাংলাদেশ আসছে এমফিটামিন। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে দেশে ভয়ংকর মাদক আইস বা ক্রিস্টাল মেথের অস্তিত্ব মিললেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বরং একের পর এক চালান ধরা পড়ছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি সক্রিয় মাদক কারবারি চক্র ক্রিস্টাল মেথামফিটামিনের (মেথ/আইস) বাজার তৈরি করার অপচেষ্টা করে আসছে। এই মাদকের ক্ষতিকর দিক হলো, আইস বা ক্রিস্টাল মেথ নামে পরিচিত এই মাদক ইয়াবার চেয়ে ১০০ গুণ বেশি ক্ষতিকর। এটি ধোঁয়া, নাক ও ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়। এটি একটি সিনথেটিক স্টিমুল্যান্ট জাতীয় মাদক। ক্রিস্টাল মেথামফিটামিন (মেথ/আইস) পশ্চিমা বিশ্ব, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মিয়ানমারসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় শনাক্ত ৩১ মৃত্যু ১
পরবর্তী নিবন্ধআল-আকসায় ইহুদিদেরও প্রার্থনার অনুমতি, মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভ