সাতকানিয়ায় টয়লেটের রিংয়ের টাঙ্কি থেকে এক নারীর অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই নারীর নাম শামসুন্নাহার বেগম (২৫)। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসার টয়লেটের রিংয়ের ট্যাঙ্কি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার স্বামী রোহিঙ্গা মো. বাবুলকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিহত শামসুন্নাহার বেগম কঙবাজার সদরের খুরুশকুল পেঁচার ঘোনা এলাকার রশিদের বাড়ির মৃত সৈয়দ করিমের মেয়ে এবং তার স্বামী মো. বাবুল কঙবাজারের উখিয়া জামতলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আবদুস শুক্কুরের পুত্র। তারা স্বামী-স্ত্রী বিগত দুই বছর ধরে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের নয়াপাড়া এলাকায় নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। শামসুন্নাহারের ভাগিনা একরামুল হক জানান, বাবুল কিছুদিন আগে আমার মাকে ফোন করে জানায় আমার খালা শামসুন্নাহার অসুস্থ। তার কাছে চিকিৎসা করানোর মতো টাকা নেই। এজন্য কিছু টাকা পাঠাতে বলে। তখন আমার মা খালার চিকিৎসার জন্য বিকাশের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৫ শত টাকা পাঠায়। কয়েকদিন যেতে না যেতে বাবুল আবারো ফোন করে জানায় আমার খালা খুব বেশি অসুস্থ। তার কাছে চিকিৎসার টাকা নেই। আরো কিছু টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে। তখন আমার মা খালাকে মোবাইল দিতে বলে। কিন্তু খালার স্বামী মোবাইল দিতে রাজি হয়নি। নানা অজুহাতে মোবাইল না দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তখন বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এরপর খালার মোবাইলে ফোন করলে বন্ধ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে বাবুলকে অনেকবার ফোন করে খালার সাথে কথা বলতে চাইলে সে মোবাইল দিতে রাজি হয়নি। কিন্তু চিকিৎসার খরচের কথা বলে বারবার টাকা দাবি করে। ফলে গত রবিবার আমি নয়াপাড়া এলাকায় খালার ভাড়া বাসায় আসি। সেখানে বাবুল এবং খালাকে না পেয়ে আমি কেরানীহাটের দিকে যায়। কেরানীহাটে বাবুলের সাথে দেখা হয়। তখন তার কাছে খালা কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করলে প্রথমে কেরানীহাট আশশেফা হাসপাতালে আছে বলে জানায়। পরে তাকে নিয়ে আশশেফা হাসপাতালে যাই। কিন্তু সেখানে খালাকে পাইনি। তাকে পুনরায় জিজ্ঞাস করলে বলে এখানে নয়, চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। সেখানে যাওয়ার পর দেখি খালা নেই। এরপর বাবুলকে নিয়ে আমি কঙবাজারে চলে যাই। কঙবাজারে পৌঁছার পর আত্মীয়-স্বজনরা চাপ প্রয়োগ করলে বাবুল জানায়, আমার খালা মারা গেছে। দোহাজারী শঙ্খ নদীর পাড়ে দাফন করা হয়েছে। তখন তাকে বললাম আমাদেরকে কবরটি দেখাও। বাবুল কবর দেখাতে রাজি হয়। কবর দেখানোর কথা বলে আমাদেরকে কক্সবাজার থেকে আবার শঙ্খ নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে কোন কবর দেখাতে পারেনি।
এরপর আমরা বাবুলকে নিয়ে সাতকানিয়া থানায় যাই। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে বাবুল জানায় আমার খালাকে মেরে টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ট্যাঙ্কির ভেতর ফেলে বালি চাপা দেয়া হয়েছে। পরে সাতকানিয়া থানা পুলিশ বাবুলের দেখানো মতে কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নয়া পাড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসার টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ট্যাঙ্কি থেকে অর্ধ গলিত অবস্থায় আমার খালার লাশ উদ্ধার করে। একরামুল হক আরো জানান, বাবুল স্বীকার করেছে গত ১৪ তারিখে সে আমার খালাকে হত্যা করে টয়লেটের রিংয়ের ট্যাঙ্কির ভেতর ফেলে বালি চাপা দেয়।
সাতকানিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল ইসলাম জানান, কেঁওচিয়া ইউনিয়নের নয়া পাড়ার নুরুল ইসলামের ভাড়া বাসার পার্শ্ববর্তী টয়লেটের পরিত্যক্ত রিংয়ের ভেতর থেকে শামসুন্নাহারের অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত স্বামী মো. বাবুলকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।