মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সাতকানিয়ায় উপজেলা প্রশাসনের দেওয়া সংবর্ধনা বর্জন করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানরা। গত রবিবার দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা সভার ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকার এবং উপহার হিসেবে নগদ টাকা বা প্রাইজবন্ডের পরিবর্তে ইফতার সামগ্রী দেয়ার প্রতিবাদে সংবর্ধনা বর্জন করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ঘটনার দিন বেলা ১১ টার দিকে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে সাতকানিয়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের জন্য সংবর্ধনা সভার আয়োজন করেন। এতে সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব প্রধান অতিথি ছিলেন। সংবর্ধনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা–তুজ–জোহরা। অনুষ্ঠান চলাকালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও সাতকানিয়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ডালু কথা বলার সুযোগ নিয়ে ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ছবি না থাকায় প্রতিবাদ জানান। তখন একই বিষয় নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতকানিয়া উপজেলা শাখার সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজিসহ উপস্থিত বেশির ভাগ মুক্তিযোদ্ধা প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা সভার ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকাটা খুবই দুঃখজনক। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের উপহার হিসেবে নগদ টাকা বা প্রাইজবন্ডের পরিবর্তে ইফতারি দেয়ার বিষয়েও প্রতিবাদ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। তারা বলেন, সব জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে উপহার হিসেবে নগদ টাকা অথবা প্রাইজবন্ড দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র সাতকানিয়ায় ইফতারের অগোছালো প্যাকেট দিচ্ছে। এটা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অপমান। এ ধরনের অগোছালো ইফতার সামগ্রীর প্যাকেট তারা নেবেন না বলে জানিয়ে দেন। কিছু মুক্তিযোদ্ধা ইফতার সামগ্রীর প্যাকেট নিতে চাইলে অন্যান্যরা তাদের বাধা প্রদান করেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা–তুজ–জোহরা মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে পড়েন। হট্টগোল দেখে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা–তুজ–জোহরাও আনসার প্রহরায় সভাস্থল ত্যাগ করেন। এদিকে, মুক্তিযোদ্ধারা সংবর্ধনা বর্জন করে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন থেকে বেরিয়ে গিয়ে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাতকানিয়া উপজেলা শাখার সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজি জানান, এ ধরনের অপমানজনক সংবর্ধনা ও উপহার আমরা বর্জন করেছি। আমরা মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও’র বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই। আগামীকাল বুধবার মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও ফাতেমা–তুজ–জোহরার বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করবে বলেও তিনি জানান।
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়াসির আরাফাত জানান, ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকা এবং মুক্তিযোদ্ধারের উপহার হিসেবে নগদ টাকা বা প্রাইজবন্ড না দেয়াকে কেন্দ্রে করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলা দমানোর চেষ্টা করেছি। সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা–তুজ–জোহরা জানান, পুরো অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শেষ হয়েছে। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা উপহারও গ্রহণ করেছেন। পরে হঠাৎ করে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু তারে এলএমজি মুক্তিযোদ্ধাদেরকে টাকা দিচ্ছি না কেন প্রশ্ন করেন। তখন আমি উনাকে বললাম এবারে আমরা টাকা দিচ্ছি না, ইফতার সামগ্রী দিচ্ছি। মূলত টাকা না দেয়ায় তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আর ‘ব্যানারে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধ’ু স্লোগান এবং ছবি না থাকার বিষয়ে ইউএনও জানান, এগুলো রাজনৈতিক স্লোগান, প্রশাসনিক স্লোগান নয়। উপজেলা প্রশাসনের ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান লেখা এবং বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহারের বিষয়ে বাধ্যবাধকতা নাই।
ফাতেমা–তুজ–জোহরা আরো জানান, স্লোগান, ছবি এবং উপহার মূল বিষয় নয়। আবু তাহের এলএমজি অনেক আগে থেকে আমার উপর রেগে আছেন। উনার পক্ষের মুক্তিযোদ্ধারা উপহার নেননি, অন্যরা উপহার নিয়ে গেছেন।
সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব জানান, অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ব্যানারে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর ছবি না থাকায় এবং উপহার হিসেবে নগদ টাকা বা প্রাইজবন্ড না দেয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ করেছেন। আমি প্রথমে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেছি। পরে সভাস্থল থেকে চলে এসেছি।