সাজেকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ গত একমাসে আক্রান্ত ৪৯

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ৭ জুলাই, ২০২১ at ৫:২৮ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন সাজেকে হঠাৎ ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দুর্গম সাজেক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়া, বড়ইতলী পাড়া, শিব পাড়া, দেবাছড়া, নরেন্দ্র পাড়া, ১ নম্বর ওয়ার্ডের মন্দির ছড়া, শিয়ালদহ, তুইচুই, বেটলিং, অরুন পাড়া এসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রকোপ বেশি দেখা দিয়েছে।
বাঘাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত রাঙামাটিতে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৫৬ জন, ২০২০ সালে ছিল ১৭৮ জন ও ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত মোট ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৯৬ জন। সাজেকের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা পুষ্প ত্রিপুরা জানান, তিনি সহ তার পরিবারের তিনজন ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগী হিসেবে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের হিসাব মতে, চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দশ হাজার রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ৬৭ জন ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে কেবল জুন মাসেই ম্যালেরিয়া শনাক্ত হয়েছে ৪৯ জনের।
সাজেক ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জৈপুথাং ত্রিপুরা বলেন, আমি নিজেও গত মাসে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছি। পাশাপাশি পরিবারের অনেকে আক্রান্ত ছিল। তিনি বলেন, সরকারি হিসেবে সাজেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১শ জনের মত ম্যালেরিয়া রোগীর খবর পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃত সংখ্যাটা এর চেয়ে বেশি হবে।
ব্র্যাকের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে ২৮ হাজার রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ১৩০৬ জনের পজিটিভ আসে এবং গত বছর ২০২০ সালে ২৮ হাজার ৬৬৭ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করে ২৮৯ জনের ম্যালেরিয়া পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
সাজেক ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য হীরা নন্দ ত্রিপুরা জানান, এর আগে সাজেকে মহামারী আকারে ডায়েরিয়া এবং হাম (পোলিও) দেখা দিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় অনেক মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিয়ে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন তারা।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইফেতেখার আহমদ জানান, সাজেক অনেক আগে থেকে ম্যালেরিয়া প্রবণ এলাকা হিসেবে রেড জোনের মধ্যে আছে। এখানে নতুন করে কোনো রেড জোন ঘোষণা করা হয়নি। গত একমাসে ৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছে যারা বর্তমানে সুস্থ আছে। তিনি বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি ২শ জন কর্মী এখানে ম্যালেরিয়া এবং যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি জানান, বর্ষার সময় সাজেকে ম্যালেরিয়ার প্রকোপটা বেশি বেড়ে যায়। পুরো বাঘাইছড়ি উপজেলায় আমরা এ পর্যন্ত ৮৫ হাজার মশারি বিতরণ করেছি।
বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা শরীফুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৯৬ জন ম্যলেরিয়া রোগী আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই সুস্থ হয়েছেন। প্রতিবছরই সাজেকে এই সময়ে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। এবছর তুলনামুলকভাবে অনেক কম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় ৩৯ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুল ছাত্রী মিলির
পরবর্তী নিবন্ধবিধিনিষেধ অমান্য করায় নয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা