সাগরে ফের মাছ ধরা শুরু

কক্সবাজার প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর টানা ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ফের মাছ ধরা। এর ফলে গত দুই মাসাধিককাল ধরে নির্জীব থাকা জেলে পল্লীগুলোতে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ জানালেন, কক্সবাজারে ছোটবড় প্রায় ৭ হাজার মাছধরা বোট রয়েছে। এসব ট্রলারের মধ্যে বেশিরভাগই মাছ ধরার জন্য শুক্রবার মধ্যরাতে সাগরে রওয়ানা দেয়। এছাড়া বাকি ট্রলারগুলোও শনিবারের (আজ) মধ্যে সাগরে রওয়ানা দেওয়ার জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
তিনি জানান, কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণকেন্দ্র ফিশারিঘাট, কস্তুরাঘাট, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাট থেকেই শহরের অধিকাংশ ট্রলার সাগরে আসা-যাওয়া করে। বাকি ট্রলারগুলো জেলার অন্যান্য উপকূল থেকে সাগরে যাতায়াত করে। বোট মালিক সমিতি জানায়, সাগরে মাছধরা বড় নৌকায় ৩০ থেকে ৪০ জন এবং ছোট নৌকায় ৫ থেকে ১৭ জন জেলে থাকে। আবার কক্সবাজার শহরতলীর দরিয়ানগর ঘাটের ইঞ্জিনবিহীন ককশিটের বোটে থাকে মাত্র ২ জন জেলে। ট্রলারগুলোর মধ্যে ইলিশ জালের বোটগুলো গভীর বঙ্গোপসাগরে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো উপকূলের কাছাকাছি মাছ ধরে। ইলিশ জালের বোটগুলো পক্ষকালের রসদ নিয়ে এবং বিহিন্দি জালের বোটগুলো মাত্র একদিনের রসদ নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে যায়। এসব জেলে বোটগুলো সাগর উপকূলে ছোট প্রজাতির মাছ ধরে, যাকে স্থানীয় ভাষায় ‘পাঁচকাড়া’ (পাঁচ প্রকারের) মাছ বলা হয়।
দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, কলাতলী ও দরিয়ানগর ঘাটের ছোটবোটগুলো শুক্রবার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পরই মাছ ধরতে রওয়ানা দিয়েছে। এসব বোট মাছ ধরে শনিবার সকালেই পুনরায় ঘাটে ফিরে আসবে। ফলে শনিবার (আজ) সকাল থেকেই কক্সবাজারের মানুষ ফের সাগরের তাজা মাছের স্বাদ নিতে পারবেন বলে আশা করছি।
তবে ইলিশ জালের বোটগুলো মাছ ধরে ফিরতে আরো ৫ থেকে ৭ দিন সময় নেবে বলে জানান মৎস্য ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারিঘাটস্থ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, নিষেধাজ্ঞা অতিবাহিত হওয়ার পর শনিবার থেকে ছোট মাছগুলো বাজারে পাওয়া গেলেও ইলিশ পেতে আরো ৫/৭ দিন সময় লাগবে। ট্রলারগুলো মাছ ধরে ঘাটে ফিরতে শুরু করলেই আরো কয়েকদিন পর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরবে।
বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসহ মূল্যবান প্রাণিজ সম্পদের ভাণ্ডারের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করে সরকার। ইলিশের জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের সফলতাকে অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সামুদ্রিক মাছের পাশাপাশি চিংড়ি, কাঁকড়ার মতো ক্রাস্টেশান আহরণও ছিল এই নিষেধাজ্ঞার আওতায়।
কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশের প্রজননকালীন দীর্ঘ ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় বর্তমানে বঙ্গোপসাগর মাছের প্রাচুর্য ও উৎপাদন বাড়ছে। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে পারলে বঙ্গোপসাগর একটি সমৃদ্ধ মৎস্য ভাণ্ডারে পরিণত হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযথেষ্ট ভোজ্যতেল দেবে ইন্দোনেশিয়া : পররাষ্ট্রমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধজ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার স্বপ্নপূরণে অর্থের সংকট