জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার স্বপ্নপূরণে অর্থের সংকট

রামু প্রতিনিধি | শনিবার , ২৩ জুলাই, ২০২২ at ৫:০৫ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের রামু উপজেলার পূর্ব রাজারকুল গ্রামে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার’। একটি খুপড়ি ঘরেই চলতে থাকে কার্যক্রম। ২০১৮ সালে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ গণগ্রন্থাগার থেকে পায় সরকারি নিবন্ধন। এরপরে পাঠাগারের কার্যক্রম হয় আরও গতিশীল।
পাঠাগারের সদস্যরা জানান, সম্প্রতি পাঠাগারের একটি কক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে স্থানীয় এক ব্যক্তির দান করা ১০ শতক জমিতে পাঠাগারের পাকা ভবন করার উদ্যোগ নেয়া হয়। স্থানীয়ভাবে গণচাঁদার মাধ্যমে দোতলা ফাউন্ডেশনের কাজের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ অর্থাভাবে আটকে আছে।
পাঠাগারের সভাপতি আব্দুল মান্নান বলেন, ১ হাজার ২৪ বর্গফুটের দুইতলা ভবনের ফাউন্ডেশন দেওয়া আছে। নিচতলায় পাঠাগার ও উপরের তলায় হাইটেক পার্ক হবে। ইতোমধ্যে নয়টি কলামের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে আর কোনো টাকা নেই। এতটুকু কাজ করতে গিয়ে কিছু ধার-দেনাও হয়ে গেছে। সবাই সাধ্যমতো এগিয়ে আসলে দ্রুত কাজ শেষ করতে পারব।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাঠাগার পুনঃনির্মাণের কাজ চললেও একটি অস্থায়ী ভবন থেকে চলছে বই পড়া ও ধার কার্যক্রম। বিজ্ঞান, রাজনীতি, ইতিহাস, কবিতা, গল্পসহ পাঁচ হাজারের অধিক বই, ম্যাগাজিন ও দৈনিক পত্রিকা আছে পাঠাগারটিতে। পাঠাগার ভবন না থাকায় পাঠকের সংখ্যা কিছুটা কমলেও থেমে যায়নি কার্যক্রম। সম্প্রতি সরকারিভাবে মুজিব শতবর্ষে পাওয়া বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্নার এবং মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ক তিন শতাধিক বই যুক্ত হয়েছে পাঠাগারটিতে। নিত্য-নতুন বই ধার নিতে পেরে খুশি পাঠকেরাও।
জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগারের নিয়মিত পাঠক ও সাংস্কৃতিক কর্মী পিয়াল বড়ুয়া বলেন, আমাদের গ্রাম প্রত্যন্ত অঞ্চলে হওয়ায় একাডেমিক বই ছাড়া সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ক বই পাওয়া দুষ্কর ছিল। এ পাঠাগারটি হওয়ার পর গ্রামের ছেলেমেয়েরা সহজেই বিভিন্ন ক্যাটাগরির বই অনায়াসে পড়তে পারছে।
সংগঠকদের দাবি, জ্ঞানান্বেষণ একটি পাঠাগার হলেও শুধুমাত্র বই পড়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর কার্যক্রম। গ্রামের সাধারণ মানুষের জরুরি রক্তের প্রয়োজনে কাজ করে জ্ঞানান্বেষণ ব্লাড ডোনেশন ক্লাব। তাছাড়া সাপ্তাহিক সিনেমার প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও করছে জ্ঞানান্বেষণ ফিল্ম সোসাইটি। পাঠাগারের উদ্যোগে রামুতে সাতটি সেলুনে স্থাপিত হয়েছে মিনি সেলুন পাঠাগার।
কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ফ্রিল্যান্সিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক শিপ্ত বড়ুয়া বলেন, বর্তমান সময় ডিজিটাল রেভুল্যশনের যুগ। ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে হাজার হাজার ডলার আয় করা যাচ্ছে। আমরা চাই আমাদের এলাকার যুবকেরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে মনযোগ দিক। পাঠাগারের প্রস্তাবিত ভবনের দুইতলায় ১ হাজার ২৪ স্কয়ার ফুট জায়গায় ৫০টি কম্পিউটারের মাধ্যমে নামমাত্র মূল্যে ফ্রিল্যান্সিং কোর্স চালুর পরিকল্পনার কথা জানান এই সংগঠক।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষানুরাগীরাও জ্ঞানান্বেষণ পাঠাগার পুনঃনির্মাণের গুরুত্বের কথা বলছেন। রাজারকুল ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি স্বপন বড়ুয়া বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চাসহ সামাজিক কাজ করে যাচ্ছে এই পাঠাগার। সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলে পাঠাগার পুনঃনির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে ফের মাছ ধরা শুরু
পরবর্তী নিবন্ধবাবার বঁটির কোপে প্রাণ গেল গর্ভের শিশুর