সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের আলোচিত ও বর্ণিল এক চরিত্র। বাইশগজে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করেছেন। সমালোচনা আর বিতর্কেও কম জড়াননি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে। দিনশেষে সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের জান বাংলাদেশের প্রাণ। সেই সাকিবই এখন দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের কাছে চরম ‘ঘৃণিত’। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। রাজনীতিতে নাম লেখানোই যেন কাল হলো বাইশগজের রাজার জন্য। সরকার পতনের পর হত্যা মামলায় নাম জুড়ে গেছে। ক্যামেরায় অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, গ্যালারিতে দর্শক পেটানো, স্ট্যাম্পে লাথিকান্ড, শেয়ার মার্কেট কেলেঙ্কারি, জুয়াড়ির তথ্য গোপন করে আইসিসির নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হওয়া সাকিবের নামের পাশে বিতর্কের ফিরিস্তিটা বেশ দীর্ঘ। এ ছাড়া কখনো কখনো ক্রিকেটের চাইতে বিজ্ঞাপন ও অর্থকড়িকে বেশি প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগতো আছেই। এত সব বিতর্কের পরও সমর্থকদের পাশে পেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু এক আন্দোলন যেন সব হিসেব–নিকেশ বদলে দিলো! বিশ্বের বাঘা বাঘা সব ক্রিকেটারের চোখে চোখ রেখে লড়াই করা ‘বেয়াদব’ সাকিবকে নিয়ে সেই আবেগটাও যেন উবে গেছে কোথায়! একদিন আগেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাকিবের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে বিক্ষুব্ধরা। এর আগে তার ছবিতে জুতাপেটা ও দেয়ালে গ্রাফিতির কর্মকান্ডও দেখা গেছে। এর নেপথ্যে রাজনীতিতে জড়ানো এবং ছাত্র আন্দোলনের সময় নীরব ভূমিকার প্রসঙ্গ টানছেন অনেকে।
জুলাই–আগস্টে কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশ যখন উত্তাল, একের পর এক তাজা প্রাণ ঝরছিল রাস্তায়। বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গনের অনেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানালেও নীরব ভূমিকায় ছিলেন সাকিব। এ ছাড়া বিদেশে সে সময় পরিবার নিয়ে ঘুরে বেড়াতেও দেখা গেছে তাকে। শুধু তাই নয়, প্রবাসী দর্শকরা আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি পাল্টা বলেছিলেন ‘দেশের জন্য আপনি কী করেছেন?’ সাকিবের এমন ভূমিকা ভালোভাবে নেয়নি ক্রিকেটপ্রেমীরা। যদিও অনেক পরে এক ফেসবুক পোস্টে ছাত্র আন্দোলনে নীরব ভূমিকার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন সাকিব। সেই সঙ্গে রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাখ্যাও দিয়েছিলেন। সাকিবের এমন পোস্টেও বিক্ষুব্ধদের মন গলাতে পারেনি। সাকিবের দেশে ফেরা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিসিবি ইতিবাচক হলেও আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে সে পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
দেশে ফিরতে মরিয়া হওয়ার নেপথ্যে আবেগ নাকি অন্য কিছু? ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে পালাবদল এসেছে। পতিত সরকারের নেতাকর্মীরা কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কেউ বা আবার আত্মগোপনে আছেন। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বিগত সরকারের একজন সংসদ সদস্য সাকিবের দেশে ফেরাটা ঝুঁকিপূর্ণই ছিল। তা ছাড়া তার নামে হওয়া হত্যা মামলাও বাতিল হয়নি। এ ছাড়া আরও একটি অভিযোগে জরিমানার খড়গও ঝুলছে। এই মুহূর্তে দেশে ফিরলে আরও মামলার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে সাকিবের কম আগ্রহের বিষয়টিও কারও অজানা নয়। সেই সাকিবই টেস্ট ক্রিকেট বিদায় জানাতে বেছে নিতে চাইলেন হোম অব ক্রিকেট। দেশে ফেরা ঝুঁকি জেনেও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস পেলে ফিরতে প্রস্তুতি ছিলেন তিনি। হঠাৎ সাকিব কেন এত মরিয়া হয়ে উঠলেন! ফেসবুক পোস্টে সাকিব বলেছিলেন, গল্পের শেষ অধ্যায়ে আপনাদেরকে পাশে চাই। এখানে অনেকে বলছেন আবেগী হয়ে পড়েছেন সাকিব। আবার কেউ কেউ ভিন্ন মতলবের প্রসঙ্গও টানছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ক্রিকেট সংগঠক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সাকিব শুধু টেস্ট খেলতে দেশে ফিরছে এটা ভাবা খুব কঠিন। আমার কাছে মনে হয় এর পেছনে তার বড় কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। তিনি যদি খেলতে পারেন হতে পারে তার যে দেশে ব্যবসা– বাণিজ্য রয়েছে সেটি করার পথটা ফের খুলে যাবে। বিপিএল খেলে অর্থ আয় করবেন। এছাড়াও নানা বিজ্ঞাপনও তিনি করতে পারবেন। তিনি যে ক্ষমা চেয়েছেন এতে আমরা অবাক হইনি। তিনি রঙ বদলাতে পারেন এমনকি নিজের প্রয়োজনে অন্যকোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।’