সাইবার অপরাধ দমনে কর্তৃপক্ষকে আরো সক্রিয় হতে হবে

‘ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রেম, পরে ব্ল্যাকমেইল’

| বৃহস্পতিবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

হোয়াটস অ্যাপ আর ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অপব্যবহার এতোটাই বেড়ে গেছে যে তা উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রতারণার বড় মাধ্যম হিসেবে যথেচ্ছভাবে। ফলে প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। গত ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রেম পরে ব্ল্যাকমেইল’ শীর্ষক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হোয়াটস অ্যাপ-ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে চ্যাট করতে করতে শুরু হয় প্রেম। অতঃপর প্রেমিকার আহ্বানে ছুটে আসে তরুণ। কিন্তু এসেই ফেঁসে যায়। কারণ যার ভাবনায় তরুণের নিদ্রাহীন রাতযাপন সে প্রেমিকা আসলে ছিল একটি ব্ল্যাকমেইল চক্রের সদস্য। এ চক্রে আছে পুরুষ সদস্যও। চক্রের মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার মতো আরো অনেক তরুণকে ডেকে আনে। এরপর পুরুষ সদস্যসহ মিলে আটকে রাখে। তারপর মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে বিবস্ত্র করে ছবি ও ভিডিও ধারণ করে। এমনকি কথিত প্রেমিকার সাথে তরুণকে আপত্তিকর অবস্থায় ছবি তুলতেও বাধ্য করে। পরে সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে তরুণের কাছ থেকে আদায় করে মোটা অংকের অর্থ। সমপ্রতি এমন অভিযোগ পেয়ে মাঠে নামে নগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। পরে নগরের কোতোয়ালী মোড় এবং চেরাগী মোড় থেকে গত শনিবার রাতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়কারী চক্রটির দুই কিশোরী সদস্যসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে। পরদিন রোববার আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
সিটি ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশনের সাইবার ইন্টেল টিমের অনলাইন মনিটরিং করা এক কর্মকর্তার বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাতে তিনি বলেন, সাইবার অপরাধীদের ‘ভয়ঙ্কর অস্ত্র ফেসবুক’। ভুয়া এ্যাকাউন্টস বা আইডি খুলে অপরাধ সংঘটিত করে চলেছে সাইবার অপরাধীরা। এই ধরনের অপরাধ করে যাতে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে না পারে সেজন্য অনলাইনে মনিটরিং করছে সাইবার ইন্টেল টিম।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) এক কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায় পত্রিকান্তরে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিরোধ, প্রেমের ফাঁদে ফেলা, প্রেম নিবেদন, প্রেম প্রত্যাখ্যান, পূর্বশত্রুতার জের ধরে ফেসবুকে অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও নারী-কিশোরীরা। সহিংস উগ্রবাদ, গুজব, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ, গ্যাং কালচার, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, আসক্তি এর সবই হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে, যার প্রধান ও অন্যতম বাহন ফেসবুক।
বাংলাদেশ সাইবার ক্রাইম এ্যাওয়ারনেস (সিসিএ) ফাউন্ডেশনের গত বছরের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। বর্তমানে দেশে যত সাইবার অপরাধ হয় তার প্রায় ৭০ শতাংশের শিকার হচ্ছে নারী ও কিশোরীরা। প্রযুক্তি ব্যবহারকারীরা ১১ ধাপে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে। এর মধ্যে চারটিই নতুন। নারী ভুক্তভোগীর হার বেড়েছে ১৬.৭৭ শতাংশ। তবে ভুক্তভোগীর ৮০.৬ শতাংশই আক্রান্ত হওয়ার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করে না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি, পারিবারিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদান, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জনের পাশাপাশি আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছে ৬৭.৯ শতাংশ নারী। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের শিকারে সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে তারা। এই অপরাধের শিকার নারীর হার ১৬.৩ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অনলাইনে বার্তা পাঠিয়ে হুমকি। ছবি বিকৃত করে অনলাইনে অপপ্রচারের শিকার হওয়া নারীর হার ১১.২ শতাংশ। সংঘটিত অপরাধের চেয়ে জরিপে মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়েছে পর্নোগ্রাফি। এই অপরাধ ২.২৫ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬.০৫ শতাংশে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে পর্যাপ্ত ফরেনসিক ডিভাইস নেই এবং এ বিষয়ক ল্যাবও তেমন গড়ে ওঠেনি। ফলে সাইবার অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। কেউ কেউ সন্দেহজনকভাবে গ্রেফতার হলেও উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসে ভুক্তভোগীকে আবার হুমকি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে অপরাধ দমনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে আরো সক্রিয় হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে