সাইবার অপতৎপরতা দমনে পুলিশি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে

| সোমবার , ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির নিত্য নতুন উদ্ভাবনের কারণে দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী। সমগ্র পৃথিবী ইন্টারনেটনির্ভর হয়ে পড়েছে। ইন্টারনেট মানুষের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বাংলাদেশেও ইন্টারনেটের প্রসার ঘটছে। ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ইন্টারনেটের গুরুত্ব। এর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করে চলেছে। শহরের গণ্ডি পেরিয়ে ইন্টারনেট সেবা এখন পাড়াগাঁয়ে পৌঁছে গেছে। ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার ফলে সব কাজ প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। জ্ঞানার্জনের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেট সব শ্রেণির মানুষের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ইন্টারনেটকে বাদ দিয়ে আধুনিক সমাজকে ভাবা যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির নানা সুফল ক্রমেই মানুষের কাছে সহজলভ্য হচ্ছে। বলা চলে, এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ করা সহজ হয়েছে। কিন্তু দুখের বিষয় যে, ‘তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত সমপ্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার ক্রাইম বা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও দ্রুত বেড়ে চলেছে। নিরীহ মানুষ নানা ধরনের অপরাধের শিকার হচ্ছেন। আবার সরকারের বিরুদ্ধেও নানা ষড়যন্ত্র চলছে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধা ব্যবহার করে। রটানো হচ্ছে নানা ধরনের গুজব। বিভিন্ন গোষ্ঠীকে উসকানি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক অপরাধ যেমন ঘটছে, তেমনি ছড়ানো হচ্ছে উগ্র সামপ্রদায়িকতা। দিন যত যাচ্ছে এই সাইবার অপরাধ তত বাড়ছে।’ সাইবার অপরাধ কাকে বলে? আইনে লেখা আছে, ‘ফেসবুক বা যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা কোনো গণমাধ্যমে মানহানিকর, বিভ্রান্তিমূলক, অশালীন, অরুচিকর, অশ্লীল, আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক এমন কিছু লেখা বা পোস্ট করা বা স্ট্যাটাস দেওয়া বা মন্তব্য করা কিংবা ছবি বা ভিডিও আপলোড করা সাইবার অপরাধ। অনলাইন ব্যবহারে এমন কোনো কিছু করা যাবে না, যাতে দেশের আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম, জাতীয়তা, যৌনতা ইত্যাদি উল্লেখ বা ইঙ্গিত করে কুৎসা রটানো কিংবা মানহানিকর, অনূভূতিতে আঘাত লাগতে পারে এ সবই সাইবার অপরাধ। কোনো ব্যক্তি বা পরিবার বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে অনলাইনে ভীতি বা শক্তি প্রদর্শন করা, হুমকি দেওয়া বা কোনো কিছু পাঠানো অথবা মিথ্যা তথ্যসম্বলিত বিভিন্ন উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রচার করলেও সাইবার অপরাধ হবে।’

 

 

 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ১২ সেকেন্ডে একটি সোশ্যাল মিডিয়া আইডি খোলা হয়। ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, টেলিগ্রামের মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই আইডি খোলা হয়। বিটিআরসির তথ্য মতে, এখন দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। আর মোবাইল সিম ব্যবহারের সংখ্যা প্রায় ১৬ কোটি। ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের একটি বড় অংশ এখন হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা, যাকে বলা হয় কমেপ্রামাইজ হয়ে যাওয়া। অথবা ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা। এ ছাড়া সাইবার বুলিং, অনাকাঙ্ক্ষিত কনটেন্ট ছড়িয়ে দেওয়ার মতো অপরাধের ঘটনাও ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এখন নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে নেটিজেনরা। ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার, ভাইবার, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো ইত্যাদির মাধ্যমে অনেকেই সাইবার অপরাধীদের শিকারে পরিণত হচ্ছে। এসব ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে কারও ব্যক্তিগত দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করা, ভয় দেখানো বা মানসিক নির্যাতন বা অন্যায় কোনো কিছুতে প্রলুব্ধ করা। কিশোরকিশোরীরাই প্রথমদিকে এ ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছিল। এখন বিভিন্ন বয়সিরাও এই ফাঁদে পা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইন্টারনেটের এই সময়ে এসে সাইবার আক্রমণ জটিল এক মনস্তাত্ত্বিক উপদ্রব। বিশেষ করে,একজন ব্যক্তিকে সুনির্দিষ্টভাবে সবার সামনে দোষারোপ বা খারাপ ভাষায় আক্রমণ করা।

তাঁরা বলেন, সাইবার অপরাধীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেট সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানার্জনে সচেষ্ট হতে হবে। সাইবার অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে, বাংলাদেশে প্রথম ২০০৬ সালে সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ আইন (আইসিটি অ্যাক্ট ২০০৬) প্রণয়ন করা হয়। এর পর ২০১৩ সালে এই আইন সংশোধন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। ২০১৩ সালে রাজধানীতে স্থাপন করা হয়েছে দেশের একমাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল। তবে আইনের আশ্রয় নিলেই হবে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশি সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। শুনেছি, বর্তমানে সাইবার অপরাধের ওপরে পুলিশের নতুন নতুন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যৎকে সামনে রেখে সাইবার অপরাধকে দমন করবে এই স্মার্ট পুলিশ। আমরা যেন তাদের কাজের ওপর আস্থা রাখতে পারি, তার ব্যবস্থা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে