দিন দিন ‘অবৈধ’ সাইনবোর্ড, পোস্টার ও ব্যানার-পেস্টুনে ভরে ওঠছে নগরী। এরমধ্যে প্রতি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ২৫০ অবৈধ সাইনবোর্ড হলেও পুরো শহরে এ সংখ্যা হবে ১০ হাজারের বেশি। প্রায় সমসংখ্যক রয়েছে ব্যানার-পেস্টুনও। অবশ্য পোস্টারের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়তে পারে। যত্রতত্র স্থাপিত এসব প্রচারণামূলক সাইনবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার-পেস্টুনে একদিকে সৌন্দর্যহানি ঘটছে শহরের; অন্যদিকে খাতগুলো থেকে বছরে প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পোস্টার লাগাতে চসিক থেকে ফি পরিশোধের মাধ্যমে অনুমতি নেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। আবার সাইনবোর্ডের জন্যও ফি ধার্য আছে। কোনো কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অনুমতি নিলেও অনুমতি পাওয়া সাইজের চেয়েও বড় আকারের সাইনবোর্ড স্থাপন করে তারা। আবার একটির অনুমতি নিয়ে একাধিক সাইনবোর্ডও স্থাপন করছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। সেক্ষেত্রে চসিকের কতিপয় পরিদর্শক আর্র্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এ ধরনের সুযোগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ আছে। একইভাবে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে লাগানো পরিচিতিমূলক শপসাইনের ক্ষেত্রেও ঘটছে এমন অনিয়ম। ব্যানার-পেস্টুনের জন্য অনুমতি নেয়ার প্রবণতাও কম।
গত এক সপ্তাহ ধরে নগরের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে অলিগলিতে অসংখ্য পোস্টার-ব্যানার দেখা গেছে। দেওয়ান হাট থেকে শেখ মুিজব রোড হয়ে জাম্বুরি ফিল্ড এবং সিডিএ আবাসিক এলাকা পর্যন্ত এলাকায় শত শত সাইনবোর্ড দেখা গেছে। এছাড়া আন্দরকিল্লা, টেরি বাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, শোলকবহর, আগ্রাবাদ, নিউমার্কেট, স্টেশন রোড, রাস্তার মাথা, জিইসি, পাঁচলাইশ, ফয়স’ লেক, চকবাজার ও হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে সাইবোর্ড। অধিকাংশ এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটির সাথেও সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে। এসব সাইনবোর্ডের বেশিরভাগই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের। বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে দেখা গেছে অসংখ্য পোস্টার, পেস্টুন, ব্যানার। কয়েক জায়গায় এক প্রতিষ্ঠানের একাধিক সাইনবোর্ডও দেখা গেছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘যত্রতত্র সাইনবোর্ডের কারণে নগরের সৌন্দর্যহানি ঘটছে। তাই সাইনবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান শুরু করবো। চসিকের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থ বছরে প্রথম চার মাসে ব্যানার-ফেস্টুনসহ বিজ্ঞাপন কর হিসেবে চসিকের আয় হয়েছে ১২ লাখ ৯ হাজার ৮০৬ টাকা। শপসাইন খাতে আয় হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৭ টাকা। সাধারণত ট্রেড লাইসেন্স নেয়ার সময় শপসাইনের অনুমতি নেয়া হয়। তাই দৃশ্যত খাতটিতে আয় বেশি হচ্ছে। প্রসঙ্গত, গত ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত অনুমতি রয়েছে এমন ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা হচ্ছে ৫১ হাজার ৯০৪টি।
আদর্শ কর তফসিল-২০১৬ অনুযায়ী, নগরে সরকারি, আধা-সরকারি বা স্বায়ত্ত্বশাসিত, বেসরকারি বা ব্যাক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের জায়গায় পোস্টার লাগানোর জন্য অনুমতি নিতে হবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছ থেকে। একই সঙ্গে প্রতিটি পোস্টারের বিপরীতে দৈনিক হারে কর প্রদানের বিধান রয়েছে। এরমধ্যে ৬ বর্গফুটের পোস্টারের জন্য দৈনিক ১০ টাকা এবং ৫ বর্গফুটের জন্য ৭ টাকা নির্ধারণ করা আছে। অথচ শহরে বিভিন্ন জায়গায় লাগানো পোস্টারগুলোর জন্য অনুমতি নেয়া হয় না চসিক থেকে।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগের এক কর্মকর্তা দৈনিক আজাদীকে বলেন, যেহেতু পোস্টার লাগানোর জন্য অনুমতি নেয়া হয় না তাই দেখা মাত্রই আমরা তা ছিঁড়ে ফেলি। প্রতি মাসে এ সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজার হবে। বাস্তবতা হচ্ছে আরো প্রায় ১৫ হাজার আমরা অপসারণ করতে পারি না। ফলে বলা যায়, প্রতি মাসে শহরে ৩০ হাজারের মতো পোস্টার লাগানো হয়। তবে বর্ষাকালে তিন-চার মাস লাগানো হয় না। ওই হিসেবে বছরে ৮ মাস ধরলেও পোস্টার খাতে সাড়ে ১৬ লাখ টাকা থেকে ২৪ লাখ টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে চসিক।
আইন অনুযায়ী, সাইনবোর্ডের বিপরীতেও কর পরিশোধ করার বিধান রয়েছে। পেশা, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচিতিমূলক সাইনবোর্ডের জন্য প্রতি বর্গফুট ৮০ টাকায় অনুমতি নিতে হবে সিটি কর্পোরেশন থেকে। এছাড়া প্রত্যেকটি ব্যানার-ফেস্টুনের জন্য প্রতি ১৫ দিনে পরিশোধ করতে হবে ৫০০ টাকা। সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় বা সরকারি ও স্বায়ত্ত্বশাসিত আলোকিত এলইডি সাইনের জন্য ২০ হাজার টাকা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় হলে পরিশোধ করতে হবে ১০ হাজার টাকা।
চসিকের রাজস্ব শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আজাদীকে বলেন, আদর্শ কর তফসিল অনুযায়ী সাইনবোর্ড, পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনের বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয় না। কারণ, যারা এসব স্থাপন করেন তাদের বেশিরভাগই অনুমতি নেয় না। যদি নিয়ম অনুযায়ী আদায় করা যেতো তাহলে বছরে কমপক্ষে এক কোটি টাকার বেশি রাজস্ব পেতাম আমরা। এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের পক্ষে প্রতিদিন মনিটরিং করা সম্ভব হয় না। আজকে উচ্ছেদ করলে কাল বা পরশু আবারো স্থাপন করা হয়। জনবল কম থাকায় প্রতিদিন অভিযান চালানোও সম্ভব হচ্ছে না।