সহিংসতা নয়, সহনশীলতাই গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ

ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী | শনিবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

এটি সর্বজনবিদিত যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যথার্থ ধারণ ও পরিচর্যা আধুনিক জাতিরাষ্ট্রে উন্নয়নঅগ্রগতির প্রণিধানযোগ্য অনুষঙ্গ। আপামর জনগণের সামষ্টিক চিন্তাচেতনার প্রতিফলনে বিধিবদ্ধ প্রক্রিয়ায় অবাধসুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্র ব্যবস্থাই প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রকৃষ্ট পরিচায়ক।

মূলতঃ সকল দলমতের সম্মিলিত অংশগ্রহণসমর্থনে নেতৃত্ব বাছাই এবং সঠিক প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সরকার গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনা গণতন্ত্রকে শক্তিমান করে। গণতন্ত্র হলো আধুনিক বিশ্বের সর্বাপেক্ষা সমাদৃত শাসনব্যবস্থা যা বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিক থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বত্রই সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছিল। বিপুল পরিবর্তনপরিমার্জনের মধ্য দিয়ে বর্তমানেও গণতন্ত্র সমধিক জনপ্রিয় শাসন ব্যবস্থার রূপ পরিগ্রহ করে চলছে।

গণতন্ত্র যেকোন সমাজে পরিশুদ্ধ পন্থায় সমগ্র জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনে রাষ্ট্র বা সরকার পদ্ধতিকে নির্দেশিত করে। একনায়কতন্ত্র বা রাজতন্ত্রের বিপরীতে জনগণের শাসন বা শাসন নীতির ইচ্ছানুসারে পরিচালিত রাষ্ট্রব্যবস্থা গণতন্ত্রের সাবলীল ধারণাধারাবাহিকতার সুস্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ।

অনেকেই আধুনিক যুগকে গণতান্ত্রিক যুগ বলে অবহিত করেছেন। গণতন্ত্র সরকার পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণে জনগণের অংশগ্রহণ, মানুষের স্বাধীনতাঅধিকার নিশ্চিতকরণ, রাজনৈতিক চেতনা বৃদ্ধি, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাসহ সরকারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে সহায়তা করে।

আমাদের সকলের জানা, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠানদলগত আদর্শমতামতপরমতসহিষ্ণুতাপারস্পরিক শ্রদ্ধাসৌহার্দ এবং অন্যের মতকে প্রাধান্যের অনবদ্য সমন্বয়। মতপার্থক্যমতবিরোধমতদ্বৈততা রাজনীতির স্বাভাবিক পর্যায়ে যেকোন সমাজ ব্যবস্থায় অনুভূত। নৈরাজ্যঅগ্নিসন্ত্রাসবলপ্রয়োগঅধিকমাত্রায় ক্ষমতালিপ্সু আচরণে দেশকে অস্থিতিশীলঅরাজক পরিস্থিতি তৈরিতে নেতিবাচক ভূমিকা বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে পরিত্যাজ্যপ্রত্যাখিত।

জনদুর্ভোগ সৃষ্টি নয়, বরং লাঘবের মধ্যেই রাজনীতির কর্মকৌশল অধিকমাত্রায় প্রশংসিত। ভয়াবহ বিশৃঙ্খলাভীতিপ্রদর্শনগুজবসন্ত্রাসের মাধ্যমে জনগণকে বিভ্রান্ত করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা জনসমর্থনহীন রাজনৈতিক দলের দুর্বলতাকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

দলীয় কর্মযজ্ঞকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা রাখার জন্য দেশবিধ্বংসী কোনো কর্মসূচি বা অন্যকোন অশুভঅনৈতিক প্রক্রিয়ায় মতাদর্শ প্রকাশপ্রচার সকল সময়ে নিন্দনীয় ও অগ্রহণযোগ্য। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে গ্রিসে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহৃত হয়। গ্রীক শব্দ Demos (জনগণ) Kratia (শাসন) শব্দদ্বয়ের সমন্বয় গণতন্ত্রের ধারণাকে জনগণের শাসন হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতিমান লেখক ও চিন্তাবিদগণ গণতন্ত্র শব্দটিকে ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন।

আধুনিককালের শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ লর্ড ব্রাইস তাঁর ‘আধুনিক গণতন্ত্র’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘যেখানে শাসনব্যবস্থা কোন শ্রেণির উপর ন্যস্ত না থেকে সমগ্র সমাজের উপর ন্যস্ত থাকে তাই গণতন্ত্র’। উনবিংশ শতকের যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত দার্শনিক, যুক্তিবিদ ও অর্থনীতিবিদ জন স্টুয়ার্ট মিল এর ভাষায়, ‘রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতায় সকলের প্রবেশাধিকার হচ্ছে গণতন্ত্র’। বিখ্যাত মার্কিন গবেষকঅধ্যাপক ক্নিটন বুথ সিলির মতে, ‘গণতন্ত্র হলো এমন এক শাসনব্যবস্থা যেখানে প্রতেক্যকেরই অংশগ্রহণ রয়েছে।’

ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাচীন গ্রীস ও রোম এর সরকার পরিচালনায় নাগরিকের অংশগ্রহণের অধিকার প্রচলিত ছিল। প্রাচীন গ্রীসে সীমিত সংখ্যক জনসংখ্যা অধ্যুষিত ছোট ছোট নগরকেন্দ্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকেরা সরাসরি ভোট দিত। কিন্তু এসব গণতন্ত্রে নিম্নবিত্ত কিংবা ক্রীতদাসদের কোন স্থান ছিল না। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার বহু পূর্বে ইংল্যান্ডে পার্লামেন্ট সরকার চালু ছিল।

ইংল্যান্ডে প্রায় হাজার বছর পূর্বে হাউজ অব ল’স প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বেশ কয়েক শতাব্দী ধরে ইংল্যান্ডে আইন প্রণয়নে হাউজ অব কমন্স এর অংশগ্রহণ কারো অজানা নয়। সামগ্রিক অর্থে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বহু পূর্ব থেকেই অভিজাত শ্রেণির প্রতিনিধিরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও সংখ্যালঘিষ্ঠতার ভিত্তিতে সংসদীয় শাসন পরিচালনা করত। এই সংসদীয় কাঠামো বজায় রেখে ইংল্যান্ডে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় অনেক পরে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পরেও বহুকাল ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় নারীদের ভোটাধিকার ছিল না। আধুনিককালে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গের আইন পরিষদে প্রতিনিধিত্ব করার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার যে ব্যবস্থা, তাকেই বর্তমানে গণতন্ত্রের মূল প্রত্যয় হিসেবে অভিহিত করা হয়।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর লাস্কির ভাষায় ‘কোন রাষ্ট্র পরিচালিত হয় সে রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রদত্ত অধিকার দ্বারা’ এবং গণতন্ত্রকে যথার্থ মর্যাদায় আসীন রাখতে পারে জনগণের সঠিক চেতনা ও সতর্ক পাহারা যেটি লাস্কির ভাষায়– eternal vigilance is the price of liberty

গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় অনেক অন্তর্নিহিত দুর্বলতা বা গুটিকয়েক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্রতর গোষ্ঠীর ক্ষমতা করায়ত্তের মাধ্যমে গণতন্ত্র অনুশীলন করা হলেও এটি গণতন্ত্রকে at least arbitratory and most responsible least dratic and most considerateঅর্থাৎ “সবচেয়ে কম স্বৈরাচারী সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল, সবচেয়ে কম কঠোর এবং সবচেয়ে বেশি সহানুভূতিশীল” বৈশিষ্ট্যের কারণে প্যারেটো, র‌্যাকো এবং সমবার্ট এর মত কতিপয় সমাজরাষ্ট্রবিজ্ঞানী ব্যতীত প্রথিতযশা প্রায় সকলেই গণতন্ত্রের দুর্বলতা, অপূর্ণতা ও অপপ্রয়োগ স্বীকার করেও এর অপরিহার্যতা দারুণ সমর্থন করেছেন।

আধুনিক গণতন্ত্রের বিকাশের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বাধীনতা ও মুক্তি তথা মানবজাতির মুক্তির সনদ হিসেবে জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার ২১তম অনুচ্ছেদের ৩নং ধারা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সরকারের কর্তৃত্বের ভিত্তি হবে জনগণের ইচ্ছা যা নির্দিষ্ট সময় অন্তর সার্বজনীন ও সমান ভোটাধিকারের ভিত্তিতে গোপন ভোটের মাধ্যমে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান অর্থাৎ জনগণের ইচ্ছার প্রকৃত প্রতিফলন’ জাতিসংঘ ঘোষিত এ নীতিমালা গণতান্ত্রিক ধারাকে সমগ্র বিশ্বে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। অনুচ্ছেদের ১নং ধারা বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তিরই স্বাধীনভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে দেশের শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করেছে, অর্থাৎ যথার্থভাবে জনগণের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা সমুজ্জ্বল হয়েছে।

গণতন্ত্র শুধু যে সরকার সম্পর্কিত তথ্য তা কিন্তু নয়। আধুনিক গণতন্ত্রের বিজ্ঞতাত্ত্বিক লিন্ডসের ভাষায়, গণতন্ত্র একটি সামাজিক প্রক্রিয়া বটে। এটি মূলত ঃ কতগুলো রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সামাজিক মূল্যবোধের সমন্বয়, পরিচর্যা ও প্রতিফলন।

গণতন্ত্রের প্রাথমিক মূল্যবোধ হচ্ছে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অর্থাৎ ব্যক্তির মৌলিক স্বাধীনতার তথা চিন্তাবাকসংগঠনের স্বাধীনতা, ভোটাধিকার প্রয়োগ, দলগঠন এবং অংশগ্রহণ, প্রার্থী হওয়ানির্বাচনে অংশগ্রহণঅভিযোগ উস্থাপনের স্বাধীনতা অর্থাৎ সার্বিকভাবে জীবনধারণপরিবার গঠননিরাপত্তা বিধানআইনের আশ্রয়স্বাধীন মতামত প্রকাশনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বিরোধিতার অধিকার ইত্যাদি সকল কিছুকেই অন্তর্ভূক্ত করে। যে কোন সামাজিক প্রক্রিয়ায় ব্যক্তির স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিভার উন্মেষ একমাত্র গণতান্ত্রিক পন্থায় সম্ভব।

এ জন্যই বিশ্বের সকল সভ্য দেশ, বিবেকবানমানবতাবাদী মানুষ গণতন্ত্রের ভাবধারায় বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের যৌক্তিক বিশ্লেষণে নিজের ইচ্ছার সাথে অন্যের ইচ্ছার সমন্বয় ঘটানো বা অধিকাংশের ইচ্ছা বা আগ্রহকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় পরিপূর্ণতা পায় গণতন্ত্রের সহজাত রীতিনীতি।

গণতন্ত্রের বিকাশমানতায় বহু দলের অস্তিত্ব থাকা যেমন জরুরি, তেমনি দলনেতাকর্মীদের আচারআচরণে পারস্পরিক আস্থাবিশ্বাসযোগাযোগ প্রভৃতির প্রচলন একান্ত বাঞ্চনীয়। দলগুলোর মধ্যে নানান বিষয়ে ভিন্নমত থাকাটা অস্বাভাবিক না হলেও; এই মতভিন্নতা পারষ্পরিক আলাপআলোচনা এবং সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্কের সমৃদ্ধিতে দূরীভূত করা সম্ভব। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে কালক্রমে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির অধিকতর নিকৃষ্ট প্রচলন সমাজকে নিদারুণ কাতরতায় নিপতিত করে চলছে।

সচেতন মহল সম্যক অবগত আছেন, রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি পারষ্পরিক সম্পূরকপরিপূরক। খ্যাতিমান সমাজবিজ্ঞানী লুসিয়ানপাই রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যাখায় বলেছেন, কোন জাতিরাষ্ট্রে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিবিশ্বাসআদর্শিক মনোভাবের সমষ্টিগত প্রক্রিয়ায় শৃঙ্খলাবদ্ধ আচরণের নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাবিধিবিধান ও নীতিনৈতিকতার সমাহার রাজনীতির মৌলিক ভিত্তি তৈরি করে।

মূলতঃ রাজনৈতিক সংস্কৃতির মূল উপাদান হচ্ছে কোন দেশে বিরাজিত রাজনৈতিক পরিবেশপরিস্থিতির প্রতি নাগরিকদের সনাতন মূল্যবোধঅনুভূতি এবং আস্থার সামগ্রিক প্রতিচ্ছবি। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রত্যয়টি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি হল রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি।’

কোন একটি দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতির প্রবাহমানতায় সে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি উদ্ভাসিত। রাজনীতি নিয়ে সমাজের চিন্তাচেতনাধ্যানধারণা, রাজনৈতিক মূল্যবোধবিশ্বাসমতাদর্শ, জ্ঞানগত কার্যকলাপআগ্রহের পরিমাপমূল্যায়নমূলক অভিযোজনে নির্ধারিত হয় রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাবলীল উত্তরণ।

দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিবেশ বিবেচনায় আত্ম সমালোচনাআত্মবিশ্বাসআত্মশুদ্ধির অপরিসীম অবজ্ঞা দৃশ্যমান হচ্ছে। পারষ্পরিক সমঝোতাসৌহার্দসম্প্রীতির বিপরীতে বেপরোয়া সহিংসতাচক্রান্তষড়যন্ত্রঅসহিষ্ণু আচরণ রাজনীতির প্রতি পুরো জাতির চরম অনাগ্রহ তৈরি করছে। মানুষের মর্যাদা সুদৃঢ় করার জন্য প্রয়োজনীয় নাগরিক স্বাধীনতা অপরিহার্য।

জাতিরাষ্ট্রের সকল জনগণের সামগ্রিক সুযোগসুবিধা অবারিত ভোগ করার মধ্যেই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির অন্যতম মানদন্ড। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় মুক্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জনগণের অধিকার প্রয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে গতিশীল করে সমাজের স্বয়ম্ভরতা অর্জনে মুক্তচিন্তার অবাধ প্রকাশ এবং সাংস্কৃতিক বিবেকের জাগরণ একান্ত প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য হিসেবে বিবেচ্য।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনকালে প্রচন্ড সংঘাতসংঘর্ষ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতে হতাহতের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জোটটির সদস্য দেশগুলোর ঢাকা মিশন থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ঢাকায় ইইউ ডেলিগেশনের পক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইন বাংলাদেশ নামে টুইটার বার্তায় বলা হয়েছে, ইইউ এবং ইইউ সদস্য দেশগুলোর ঢাকা মিশন রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংসতার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।

রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত সবাইকে তারা শান্তিপূর্ণ ও আইনানুগ পদ্ধতিতে রাজনীতি পরিচালনার জন্য দৃঢ়ভাবে উৎসাহিত করছে। ১ নভেম্বর ২০২২ গণমাধ্যমে প্রকাশিত মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে ৪২টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় সরকারি দলের ছয়জনসহ মোট সাতজন নিহত হয়েছে। আহত হওয়া ৩৭৪ জনের মধ্যে ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। এসময় আটক করা হয়েছিল ১০৩ জনকে।

দেশবাসী আশা পোষণ করেন যে, সরকারি দলের ভুলত্রুটি বা নানাবিধ ক্ষমতা প্রয়োগ যদি বিরোধী দলের মনঃপুত না হয়ে থাকে; শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ বা অরাজকতা সংহার করে প্রকৃত অর্থেই অর্থবহ সমালোচনাকর্মসূচিতে জনসমর্থন আদায়ে সচেষ্ট হবে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্নক সহযোগিতা দিয়ে পরিচ্ছন্ননিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্র তৈরির মূলে বিরোধী দলের ভূমিকাই মূখ্য।

এটি প্রত্যাশিত; ভোটারদের মনোযোগ আকর্ষণে পরিশীলিতপরিমার্জিতদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার ব্রত নিয়েই বিরোধী দল কার্যকর সক্ষমতা অর্জনে প্রতিশ্রুত থাকুক।

শুধুমাত্র বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা নয়; জনমন জয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে ধারণ করে সকল পক্ষই সদাচারন্যায়নিষ্ঠদেশের সামগ্রিক জনকল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে একযোগে জনগণের রায় বা জয়পরাজয়কে মেনে নিয়েই সম্ভাব্য বৈশ্বিক মন্দা উত্তরণে যথাযথ দৃষ্টান্ত স্থাপন করুকদল হিসেবে যেকোন রাজনৈতিক পরিচয়ে মতাদর্শের ভাবমূর্তি সুরক্ষায় এটিই হবে সর্বোৎকৃষ্ট উদ্যোগ।

লেখক : শিক্ষাবিদ, সাবেক উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পূর্ববর্তী নিবন্ধহল্যান্ড থেকে
পরবর্তী নিবন্ধআলো আর অন্ধকারের গল্প