সহায়তায় পরিত্রাণ মিলবে ভারতের?

দৈনিক শনাক্ত তিন লাখের নিচে নামছে না

| বুধবার , ২৮ এপ্রিল, ২০২১ at ৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

কেউ দিচ্ছে অক্সিজেন জেনারেটর, কেউবা টিকা তৈরির কাঁচামালে দিচ্ছে; বড় বড় কোম্পানির নেতৃত্বে থাকা ভারতীয় ব্যবসায়ীরা দিচ্ছে নগদ টাকা। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারতের পাশে এসে দাঁড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়। কিন্তু এই সহায়তায় কি পরিত্রাণ মিলবে? ভারতের ডুবতে বসা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নৌকার সব ছিদ্র বন্ধ করতে এসব সহায়তা যথেষ্ট কিনা- তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে। ভারতের সেন্টার ফর ডিজিজেস ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. রামাণন লক্ষ্মীনারায়ণ যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সহায়তার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েই বলেছেন, ভারতের এখন ‘মরিয়া’ দশা; এসব সহায়তায় সঙ্কটের ‘ছিটেফোঁটা’ হয়ত মিটবে। ভারতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো তিন লাখের বেশি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। ভারতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো তিন লাখের বেশি করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হয়েছে। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সকালে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে তিন লাখ ২৩ হাজার ১৪৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সংখ্যা সোমবার শনাক্ত হওয়া তিন লাখ ৫২ হাজার ৯৯১ জনের চেয়ে অনেকটা কম হলেও এতে সংক্রমণ হ্রাস পাচ্ছে, এমন সিদ্ধান্ত টানা বিভ্রান্তিকর হবে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির একজন বিশেষজ্ঞ। টানা পাঁচ দিন ধরে দৈনিক রোগী শনাক্তের বিশ্বরেকর্ড করা ভারতের হাসপাতালগুলো শয্যা সংকট ও তীব্র অক্সিজেন ঘাটতিতে ভুগছে। উপচে পড়া ভিড় সামলাতে বহু রোগীকে ফিরিয়ে দিচ্ছে তারা। এ পরিস্থিতিতে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী হু হু করে বাড়তে থাকা সংক্রমণ মোকাবেলায় জরুরি চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে মাঠে নামার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। গতকাল সকালের আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে আরও দুই হাজার ৭৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু এ সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি হবে বলে দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস।
অপরদিকে, হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে রোববার জানানো হয়, টিকা তৈরির কাঁচামাল রপ্তানিতে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তা তুলে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে ভারতকে চিকিৎসা, করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট, ভেন্টিলেটর এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক টুইটে বলেন, ‘মহামারীর শুরুতে আমাদের হাসপাতালগুলোতে যখন চাপ বাড়ছিল, তখন ভারত যেভাবে আমাদের সহায়তা পাঠিয়েছে, ভারতের প্রয়োজনেও আমরা সহায়তা দিতে বদ্ধপরিকর।’ সোমবার বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামনের মাসগুলোতে নিজেদের মজুদ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের ছয় কোটি টিকার ডোজ অন্যান্য দেশেকে দেওয়া হবে। তবে কোন কোন দেশ টিকা পেতে যাচ্ছে, তা যুক্তরাষ্ট্রের সার্জন জেনারেল, ডা. বিবেক মূর্তির ওই ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে টিকার ঘাটতি না থাকায় ভারতকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিতে বাইডেনের কাছে তদবির চালিয়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকার এই সময়ে অনেক দেশই ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ওপর নির্ভরশীল। টিকা উৎপাদনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালা এ মাসের শুরুতে টিকা তৈরির কাঁচামালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে টুইট করেছিলেন। সোমবার হোয়াইট হাউজের কোভিড-১৯ টিকা সরবরাহের সমন্বয়কারী টিম ম্যানিং টুইটারে বলেন, গত মার্চে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের করা ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্ট আসলে কোনো নিষধাজ্ঞা নয়। ‘কোম্পানিগুলো রপ্তানি করতে পারবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস্তবে যেসব কোম্পানি আমাদের টিকা সরবরাহ করে, সারা বিশ্বেই তাদের পণ্য রপ্তানি হয়।’
নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, সেরাম ইনস্টিটিউট এখন প্রতিদিন ২৪ লাখ ডোজ টিকা তৈরি করলেও টিকাদানের গতি বাড়াতে খাবি খাচ্ছে ভারত। ১৪০ কোটি মানুষের এই দেশে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশকে টিকার আওতায় আনা গেছে। অথচ মহামারীর মধ্যে ছয় কোটি ৬৪ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছে ভারত। পাশাপাশি বিক্রির লক্ষ্য রেখে টিকা নীতি ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ভারতকে ৪৯৫টি অক্সিজেন তৈরির যন্ত্র দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যুক্তরাজ্য। এসব যন্ত্র খোলা বাতাস থেকে অক্সিজেন তৈরি করে রোগীদের দিতে পারবে। সেই সাথে ১৪০টি ভেন্টিলেটরও দেবে দেশটি। অক্সিজেন পাঠানোর চিন্তা করছে ফ্রান্স এবং অস্ট্রলিয়াও। শত বৈরিতার মধ্যেও প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এক্স-রে মেশিন, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য সহায়তা দিতে চেয়েছে ভারতকে। মাইক্রোসফটের প্রধান নির্বাহী সত্য নাদেলা এবং গুগল প্রধান সুন্দার পিচাই জানিয়েছেন, ভারতকে অর্থ সহায়তা দেবে তাদের প্রতিষ্ঠান।
২০২১ সালের শুরুতেও নরেন্দ্র মোদী সরকারের কথায় মনে হচ্ছিল, ভারত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয় পেয়ে যাচ্ছে। অবশ্য মোদীর কণ্ঠ এখন অনেক গম্ভীর। রোববার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এই ‘ঝড়ে’ ভারত ‘কেঁপে উঠেছে’। নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, করোনাভাইরাস মোকাবেলার প্রস্ততি এবং সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের চেয়ে পিছিয়ে ছিল ভারত। ডিউক গ্লোবাল হেলথ ইনোভেশন সেন্টারের পরিচালক সহযোগী অধ্যাপক কৃষ্ণ উদয়কুমার বলেন, ‘আগেই আরও বেশি মাত্রায় বিনিয়োগের খুব দরকার ছিল।’
সেন্টার ফর ডিজিজেস ডায়নামিকস, ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিসির পরিচালক ডা. রামাণন লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ভারত যদি দ্রুততার সাথে টিকা উৎপাদন বাড়াতে পারে এবং জরুরি ভিত্তিতে অন্য কোম্পানিকে টিকা তৈরির অনুমোদন দেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের এই সঙ্কট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর তার মতে, এটাই একমাত্র ‘দীর্ঘমেয়াদী সমাধান’। লক্ষ্মীনারায়ণ বলেন, ‘ভারত যদি চায়, তবে সেটা করার সামর্থ্য আছে এ দেশের।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধমিয়ানমারে সেনা ঘাঁটি দখল করল কারেন বিদ্রোহীরা
পরবর্তী নিবন্ধটেস্ট ক্রিকেটে রোমাঞ্চিত পেসার শরিফুল