সরকার খুব ঘাবড়ে গেছে : ফখরুল

| শুক্রবার , ২১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে বিদায় দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি বলেন, খুব ঘাবড়ে গেছে। হাসিনা সরকার এত ঘাবড়ে গেছে যে, এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তাদের তারা চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া শুরু করেছে ভয়ে। শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তার বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর এ অভিযোগ তুললেন বিএনপি মহাসচিব। খবর বিডিনিউজের।

তিনি বলেন, গত পরশু খবরের কাগজে বেরিয়েছে- এই যে ঋণ নিয়ে কাজ করে, বিদেশ থেকে ধার নেয়, অন্যান্য সাহায্য সংস্থা থেকে ঋণ নেয়; এখন আর শোধ করতে পারছে না। তারপর কী হবে? সমস্ত বিদেশি ঋণ দেওয়া বন্ধ করে দেবে। রিজার্ভ শূন্যের কোঠায় চলে যাচ্ছে। অত্যন্ত পরিষ্কার কথা, আপনাদের আর এদেশ শাসন করবার কোনো অধিকার নেই। আপনারা দুর্নীতি-দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে আজকে দেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছেন। আপনারা দয়া করে মানে কেটে পড়ুন। যদি সরে না পড়েন, তবে এদেশের মানুষ কিভাবে সরাতে হয় তা জানে।

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে ফখরুল বলেন, নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পরিচালনায় একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে সকল দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে এবং সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা জনগণের পার্লামেন্ট, একটা জনগণের সরকার গঠন হবে। একই সঙ্গে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দিতে হবে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিভিন্নভাবে চতুর্দিকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে, বাধার সৃষ্টির করছে। ময়মনসিংহের বিভাগীয় সমাবেশে আপনারা জানেন- পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছিল। ঠিক একইভাবে খুলনায়ও তারা দুই দিন আগে গণপরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে কী লাভ হয়? মানুষ কি থেমে থাকে? মানুষ নিজে হেঁটে দলে দলে তারা বিভিন্নভাবে সমাবেশে উপস্থিত হয়। খুলনাতেও একই ঘটনা ঘটবে, খুলনাতেও লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের মতো করে সমাবেশে উপস্থিত হবে।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সারাদেশে ধড়পাকড়, মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার, পুলিশি হামলা ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের প্রতিবাদে এই সমাবেশ হয়। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল নিয়ে এই সমাবেশে যোগ দেয়। সরকারের নিপীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মিথ্যা মামলা দেওয়া বন্ধ করেন, এই অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করেন, পুলিশের মানুষ হত্যা করা বন্ধ করেন। না হলে এদেশের মানুষ কোনো অত্যাচারীকে ক্ষমা করে নাই। আপনাদেরও ক্ষমা করবে না।

‘ইতিহাস ভুলে যান কিভাবে? দেয়ালের লিখন পড়তে পারেন না। সাধারণ মানুষের চোখের দিকে তাকান, তাদের ভাষা কী বলে? এ কথায় বলে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করো, গদি থেকে সরে যাও। এই সমাবেশে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা আমাদের কথা শুনছেন, আমাদের কর্মচারি ভাইয়েরা বিভিন্ন দোকান থেকে আমাদের কথা শুনছেন। তাদের কাছে একটাই প্রশ্ন যে, আজকে চালের দাম ৯০ টাকা কেন? উনি বলেছিলেন ১০ টাকায় চাল খাওয়াবেন, ডালের দাম বেশি কেন, লবণের দাম বেশি কেন, চিনির দাম বেশি কেন?’

লোড শেডিংয়ের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা তিনি বলেছেন, ধৈর্য ধরেন। বিদ্যুৎ পেয়েছেন, আবারও বিদ্যুৎ পাবেন। তো আমাদের তো জীবন অতিষ্ঠ-লোড শেডিং, লোডশেডিং, লোডশেডিং। প্রতিদিন ৪/৫ বার লোড শেডিং হয়। আমাদের ফ্যাক্টরিগুলো চলে না, ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি বন্ধ হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশে তারা (সরকার) বিদ্যুৎ ঠিক মতো দিতে পারে না, সঞ্চালন করতে পারে না, বিতরণ করতে পারে না; সেখানে এত বিদ্যুৎ উৎপাদন করার একটা মাত্র কারণ। যেটা করতে গেলে তো প্রচুর পরিমাণ চুরি করতে পারে, তারা কমিশন পায়। সেজন্য তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। দেখবেন চারিদিকে তাকিয়ে- মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা দুর্নীতি করছে। আজকে সমস্ত দেশকে তারা পুরোপুরিভাবে পঙ্গু বানিয়ে ফেলেছে।

মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, কামরুজ্জামান রতন, নাসির উদ্দিন অসীম, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, মহানগর বিএনপির তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের হেলেন জেরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, শ্রমিক দলের হুমায়ুন কবির খান, জাসাসের জাকির হোসেন রোকন, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপাহাড় ব্যবস্থাপনা ক্যাম্প ও চেক পোস্ট উদ্বোধন
পরবর্তী নিবন্ধআমরা গাড়িও রফতানি করবো