সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো দরকার

| শনিবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ

গত ১৯ জানুয়ারি আমরা এই সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম, চালের দাম বেড়েই চলেছে। যদিও আমরা জানি, সরবরাহে কোনো সংকট নেই। তারপরও চালের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মানুষ কথায় কথায় একটা কথা বলে। সেটি হলো কারণ ছাড়া কার্যের উৎপত্তি হয় না। চালের দাম বাড়ারও কোনো না কোনো কারণ আছে। সেটা কী? সিন্ডিকেট। মিল পর্যায়ে সিন্ডিকেশনেরও অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দুরভিসন্ধি নিয়ে কোনো পণ্য মজুদ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে ‘জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে’ বলেও তিনি হুঁশিয়ার করেছেন। গত সোমবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের জরুরি সভার আগে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে বলেন, নির্বাচনে এদেশের মানুষ যখন অংশগ্রহণ করেছে, এখন অযথা একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগে, কথা নাই বার্তা নাই হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে গেল, জিনিসের দাম বেড়ে গেল! তিনি বলেছেন, করোনভাইরাস মহামারীর পর ইউক্রেনরশিয়া যুদ্ধ এবং পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞার জেরে সারা বিশ্বেই যে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেই বাস্তবতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত দেশও ধাক্কা সামাল দিতে পারছে না। যে সকল জিনিস আমাদের বাইরে থেকে ক্রয় করতে হয়ে, যেমন গম, চিনি, ভোজ্য তেল, গ্যাস এগুলো আমাদের ক্রয় করতে হয়। কারণ আমাদের যা আছে তা চাহিদার চেয়ে অনেক কম। আমাদের দেশ, সতের কোটি মানুষের দেশ। যে সকল জিনিস আনতে হয়, এগুলোর উচ্চ মূল্য, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে, সেই কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

সে জন্য শুরু থেকেই উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার আমাদের ফসল ভালো হয়েছে, চাল উৎপাদন বেড়েছে। তারপরেও হঠাৎ দাম বাড়াটা এই রকম ভরা মৌসুমে, এটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি।

এর পেছনে কারা আছে, সেটা খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এটা আমরা আগামীতে করব। দরকার হলে জেলে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এখন থেকে প্রথমে ওই জায়গাতে আঘাত করতে হবে। ডিম, সেটাও মজুদ করে রাখা হয়। এর আগে পেঁয়াজ একটার পর একটা পচা পেয়াজের বস্তা ফেলে দেওয়া হল। এটা কোন ধরনের কথা? মানুষের খাবার নিয়ে খেলা, এর তো কোন অর্থ হয় না। আর এই ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ারও কথা না। এ সময় তো আরও কমে জিনিসের দাম।

পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা যায়, ‘দেশে ধানচালের বাজারে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে কয়েকবার হাতবদল হয়। প্রতিবার হাতবদলের সময় যোগ হয় খরচ আর মুনাফা। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি মুনাফা করে থাকেন চালকল মালিকরা। অতিমুনাফার লোভে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে ধান কিনে মজুত করেন, এ খবর নতুন নয়। এই ধান সিন্ডিকেট করে মিলারদের কাছে বাড়তি দরে বিক্রি করা হয়। এছাড়া একশ্রেণির বড় ব্যবসায়ী প্যাকেটজাত চাল বাড়তি দামে বিক্রির উদ্দেশ্যেও ধান মজুত করেন। বস্তুত যেসব কারণে বাজার অস্থির হয়, সেই তথ্যগুলো সবার জানা। কাজেই চালের বাজারের অস্থিরতা দূর করার জন্য অব্যাহত অভিযানের বিকল্প নেই।’

গবেষকদের মতে, চাল এমন একটি পণ্য, এর দাম বাড়লে সবচেয়ে বেশি চাপে পড়ে শ্রমজীবী ও গরিব মানুষ। অতএব, চালের দাম যাতে কোনোভাবে না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। আমদানি নয়, বরং খাদ্য উৎপাদন বাড়িয়ে এবং সরকারি গুদামে প্রয়োজনীয় ধানচাল মজুত করেই বাজার স্থিতিশীল রাখার ওপর জোর দিতে হবে। খোলাবাজারে কম দামে পর্যাপ্ত চাল বিক্রিও পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।

চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সমপ্রতি একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। গবেষকরা বলেন, চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর। কেননা, গরিব মানুষের মোট আয়ের শতকরা ৮০ শতাংশ ব্যয় হয় চাল কিনতে। চালের দাম কমলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী আবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে যাবে। এ কথা সত্যি, দারিদ্র্যসীমার বিষয়টি কোনো সময়েই স্থিতিশীল নয়। নানা কারণে এ সীমার হ্রাসবৃদ্ধি হয়। যেখানে চাল দৈনন্দিন খাদ্যসামগ্রীর মধ্যে প্রধান উপাদান, সেখানে এর মূল্য বৃদ্ধি হওয়া মানেই দরিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি, যা আশঙ্কাজনক।

প্রধানমন্ত্রী যেভাবে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, তাতে আমরা আশ্বস্ত হতে পারি। যেন কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কেউ মূল্য বৃদ্ধি করতে না পারে, সে জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানো দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে