এখন আবার প্রতিদিনই বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। করোনার বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা আবিষ্কার হওয়ার পর আমাদের দেশে গণটিকাদান কর্মসূচিও সম্পন্ন হয়েছে। মানুষ আশা করেছিল টিকা প্রয়োগের ফলে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ হবে। আকস্মিক সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের মানুষ আতঙ্কিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আবার মাস্ক পরাসহ বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধ মেনে চলা বাধ্যতামূলক করেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার ওপরও গুরুত্বারোপ করে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে ছয়টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সামপ্রতিককালে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও জনগণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে যথেষ্ট শৈথিল্য পরিলক্ষিত হচ্ছে মর্মে সরকারের উচ্চ মহলে আলোচনা হচ্ছে। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির গত ১৪ জুন অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত সুপারিশ প্রতিপালনের জন্য এবং কোভিড প্রতিরোধকল্পে নিম্নোক্ত নির্দেশনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য অনুরোধ করা হলো। সরকারের নির্দেশনাগুলো হলো : স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করতে সব গণমাধ্যমে অনুরোধ জানাতে হবে; সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা, ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি প্রয়োগ করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাগম যথাসম্ভব বর্জন করতে হবে; ধর্মীয় প্রার্থনার স্থানগুলো (যেমন-মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি) মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। জ্বর, সর্দি, কাশি বা কোডিড ১৯ এর উপসর্গ দেখা দিলে কোভিড টেস্ট করার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে হবে; দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে হবে। অন্যথায় তাকে আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন এবং মাস্ক পরিধানের বিষয়ে সব মসজিদে জুমার নামাজে খুতবায় ইমামরা সংশ্লিষ্টদের সচেতন করবেন।
বাংলাদেশ করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন একটি ঢেউয়ে প্রবেশ করছে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলছেন, সংক্রমণের হার দীর্ঘ সময় ধরে এক শতাংশের নিচে থাকার পর হঠাৎ করে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়াটা উদ্বেগজনক।
কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির প্রধান প্রফেসর মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, অতি অল্প সময়ে সংক্রমণের হার ছয় শতাংশ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি অবশ্যই উদ্বেগের। তিনি মনে করেন, নতুনভাবে সাবধানতা অবলম্বনের এখনই সময়। তিনি বলেন, ‘তিনটি জিনিস যদি আমরা অবলম্বন করি তাহলে এক রকম ফলাফল পাবো। আর তিনটি জিনিস অবলম্বন না করলে আরেক রকম ফলাফল পাবো। একটি হলো আবারো স্বাস্থ্যবিধি মানা, যারা করোনা টিকা নিয়েছে তাদের বুস্টার নেওয়া, আর যারা বুস্টার নিয়েছে তাদের সতর্ক থাকা।’ তবে করোনাভাইরাস সংক্রান্ত দুটি গবেষণাও জরুরি বলে উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, মানুষ নতুন কোনো সাব ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা এবং আরেকটি হচ্ছে, মানুষের ইমিউনিটি ফল (রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে) করেছে বলে আমরা যে ধারণা করছি সেটা কতটুকু বাস্তবসম্মত। এই কাজগুলো সুচারুভাবে সম্পন্ন করা গেলে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সব খোলা রাখা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
যদিও আমাদের দেশে করোনা এখনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু ভ্যাক্সিনেশন কাভারেজ (টিকাদান কর্মসূচি) ভাল হয়েছে তাই কিছুটা আশান্বিত হওয়া যায়। তবে সংক্রমণের সংখ্যা যদি বেশি বাড়তে থাকে, অনেক বয়স্ক মানুষ যদি আক্রান্ত হতে থাকে, কো-মরবিডিটি আছে এমন মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে, তখন সেটার প্রভাব কী হতে পারে সেটা এখনো অনিশ্চিত বলে মন্তব্য করেন তাঁরা। এজন্য তাঁরা বলেন, অবহেলা করারও সুযোগ নেই। করোনার টিকা গ্রহণের পর অনেকেই যদি মনে করে থাকেন তার মধ্যে সুরক্ষা চলে এসেছে- এমনটি ভাবা ঠিক নয়।
এখনও দেশের সব মানুষকে টিকা দেওয়া যায়নি। সেদিক দিয়ে নিজে এবং পরিবারের সদস্যরা নিরাপদ নন। সুতরাং আমরা কেউই এখনও ঝুঁকি মুক্ত নই। টিকা নেওয়ার পরও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। এ বিষয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং মাস্ক পরা জরুরি। দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে যে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা সময়ের দাবি। সামগ্রিকভাবে করোনা পরিস্থিতিতে সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।