সরকারি ব্যাংকই তাদের টার্গেট। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে যাওয়া লোকজনদের মধ্যে সুযোগ বুঝে সহজ–সরল ব্যক্তিদের টার্গেট করে একটি চক্র। পরে অভিনব কায়দায় হাতিয়ে নেয় টাকা। এমন চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর কোতোয়ালী থানা পুলিশ জানতে পারে দেশজুড়ে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে আছে। গত ৭ আগস্ট রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর। এর আগে ৩০ জুলাই দুপুরে কাঞ্চন মজুমদার নামে এক কৃষক তার টাকা তুলতে লালদিঘির পাড় এলাকার সোনালী ব্যাংক শাখায় যান। তিনি টাকা উত্তোলন করে কাউন্টারের পাশে গুনছিলেন। এ সময় এক ব্যক্তি টাকা পড়ে গেছে বলে জানায়। তিনি ওই টাকা তুলতে গেলে ওই ব্যক্তি দেড় লাখ টাকা কৌশলে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে তিনি ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে থানায় এসে মামলা দায়ের করেন।
ওসি বলেন, এ ঘটনায় সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তিনজন আসামিকে শনাক্ত করা হয়। সোমবার রাতে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুরা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা রিপন গাজীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে চুরি যাওয়া টাকার মধ্যে আড়াই হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো ঢাকার ওয়ারী জেলার নবাবপুর থানার মৃত খলিলুর রহমানের ছেলে আবুল কালাম (৭০), খুলনা জেলার বাটিয়াঘাটা থানার গ্রাম আমতলা এলাকার মোরসালিন গাজীর ছেলে মো. রিপন গাজী (৪০) ও নগরীর সদরঘাট থানার ফকির মাজার লেনের মৃত বাবর আলী শেখের ছেলে মো. হারুন অর রশীদ ওরফে ইকবার (৪৫)। গ্রেপ্তার আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। চুরি যাওয়া টাকা উদ্ধার, সহযোগী পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে পৃথকভাবে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও চোরাই টাকা উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত আছে।
ওসি জানান, এটি একটি আন্তঃজেলা চোর চক্র। সরকারি ব্যাংক তাদের মূল টার্গেট। ইতোপূর্বে তাদের চক্রের সদস্যরা দেশের বিভিন্ন জেলায় সরকারি ব্যাংকে চুরি করেছে। গ্রেপ্তার আবুল কালামের বিরুদ্ধে ঢাকা, গোপালগঞ্জ, জামালপুর, ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন থানায় ৪টি মামলা এবং আসামি রিপন গাজীর বিরুদ্ধে খুলনা জেলার রূপসা থানা ও লবনচরা থানায় ২টি মামলা রয়েছে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তার আসামিরা তিন–চারজন করে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকে গ্রাহক সেজে প্রবেশ করে। ব্যাংকে প্রবেশ করার পর যারা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যান এবং ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে তাদের মধ্য থেকে সহজ সরল ধরনের ব্যক্তিকে টার্গেট করে। তাদের মধ্যে দুয়েকজন টার্গেট করা ব্যক্তিকে বিভিন্ন কথা বলে অথবা টাকা পড়ে গেছে বলে ব্যস্ত রাখে এবং সুযোগ বুঝে আরেকজন টাকা নিয়ে গ্রাহক সেজে ব্যাংক থেকে চলে যায়। পরে বাকিরাও সুযোগ বুঝে ব্যাংক ত্যাগ করে।
১১ মে এই চক্রের সদস্যরা সোনালী ব্যাংক ভোলা শাখায় হানা দেয়। ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন ফকির বলেন, সোনালী ব্যাংকের একজন গ্রাহক ব্যাংক থেকে দেড় লাখ টাকা উত্তোলন করে অন্য একজনের জন্য যখন অপেক্ষা করছিল। তখন গ্রেপ্তার দুই ব্যক্তি ছুরি দিয়ে তার ব্যাগ কেটে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজের সহায়তায় তাদের ব্যাংক থেকেই গ্রেপ্তার করা হয়।
২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জ শহরের কোর্টগাঁও এলাকার সোনালী ব্যাংক থেকে গ্রাহকের ব্যাগ কেটে টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। ২০২১ সালের ৩০ মে মাদারীপুরে পুরান বাজার সোনালী ব্যাংকের ভেতর থেকে গ্রাহকের এক লাখ টাকা চুরি হয়।