সরকারি ওষুধ পাচারে কর্মচারীরা

আটক দুই, বাসা থেকেও জব্দ বিপুল পরিমাণ ওষুধ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৪৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ পাচারে জড়িত রয়েছে হাসপাতালের কর্মচারীরাই। হাসপাতালের রোগীদের বিনামূল্যে সরবরাহের জন্য সরকারিভাবে এসব ওষুধ দেয়া হয়। কিন্তু গরীব রোগীদের বিনামূল্যে পাওয়ার কথা থাকলেও হাসপাতাল থেকে এসব ওষুধ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে বাইরে। আর এই পাচার চক্রে জড়িত হাসপাতালের কর্মচারীরাই। গতকাল সোমবার এমন দুজন কর্মচারীকে হাতেনাতে আটক করেছে হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। এদের একজন হাসপাতালের সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তী (৩২)। তিনি ২৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত। অপরজন আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ পাওয়া কর্মচারী মো. সৈয়দ (৫০)। পরে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়। আটকের পর তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আশু চক্রবর্তীর বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ ওষুধ জব্দ করা হয়। ওষুধসহ হাতেনাতে দুই কর্মচারীকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার
রাতে পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর ঘটনা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছেন হাসপাতাল পরিচালক। মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাঁচলাইশ থানার ওসি (তদন্ত) সাদেকুর রহমান। হাসপাতাল স্টোরের দায়িত্বে থাকা এক স্টাফ এ মামলার বাদী বলেও জানান তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে একটি কালো রঙের বস্তার মতো ব্যাগ নিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হচ্ছিলেন আউটসোর্সিং কর্মচারী পঞ্চাশোর্ধ্ব মো. সৈয়দ। হাসপাতাল ভবনের মূল প্রবেশ পথ দিয়ে বের হয়ে গোল চত্বরে আসেন তিনি। কালো বস্তার মতো ব্যাগ দেখে সন্দেহ হয় সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও সাগরের। মো. সৈয়দের কাছে বস্তায় কি জানতে চান আনসার সদস্যরা। কিন্তু জবাব না দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন মো. সৈয়দ। দৌঁড়ে হাসপাতালের সামনে পাকির্ংয়ের মাঝখানে চলে আসেন। সন্দেহ বেড়ে যায় আনসার সদস্যদের। ধাওয়া দিয়ে তারা মো. সৈয়দকে ধরে ফেলেন। এসময় পাশ থেকে ওই লোককে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেন যুবক বয়সী আশু চক্রবর্তী। বারবার ছেড়ে দেয়ার কথা বললে তাকে ঘিরেও আনসার সদস্যদের সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এর মাঝে ঘটনাস্থলে পৌছাঁন হাসপাতালের আনসার কমান্ডার খাইরুল ইসলাম। কয়েকজন পুলিশ সদস্যও সেখানে উপস্থিত হন। তারা ব্যাগ খুলে ইনজেকশন, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, স্যালাইন, প্রেসার মাপার যন্ত্রসহ বিনামূল্যের সরকারি ওষুধ দেখতে পান। দেরি না করে দুজনকেই হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিচয় নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সদস্যরা সরকারি কর্মচারী আশু চক্রবর্তীর বাসায় অভিযানে যান। স্টাফ কোয়ার্টারের ওই বাসা থেকেও স্যালাইন, ইনজেকশনসহ বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ জব্দ করা হয় বলে জানান হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই নুরুল আলম আশিক।
জব্দকৃত ওষুধের মধ্যে রয়েছে স্যালাইন, ইনজেকশন, স্যালাইনের নল, প্রেসার মাপার যন্ত্র, গ্যাস্ট্রিকের ট্যাবলেট, ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটসহ আরো বিভিন্ন ধরনের ওষুধ দেখা যায়। এসময় হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান, উপ-পরিচালক ডা. অংশৈ প্রু মারমাসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তারাও জব্দকৃত ওষুধ দেখেন। পরে আটককৃতদের পাঁচলাইশ থানায় হস্তান্তর করা হয়।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, যা দেখেছি, আটককৃতদের কাছে বিপুল পরিমাণ ওষুধ পাওয়া গেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, তারা এর আগেও ওষুধ বাইরে নিয়ে গেছে। সরকারি যে কর্মচারী আটক হয়েছে, সে ২৬ নং ওয়ার্ডে দায়িত্বরত। আমরা চার সদস্যের একটি কমিটিকে বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব দিচ্ছি। এ ধরনের ঘটনা যাতে পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে, বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধ জব্দের বিষয়ে মঙ্গলবার (আজ) ব্রিফের মাধ্যমে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত আদালতে স্থগিত
পরবর্তী নিবন্ধএবার গাছের গোড়া ‘অপসারণ করছে আইনজীবী সমিতি’