সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে যত্নশীল ও বিশ্বাসী হতে হবে

শায়েলা আহমেদ | সোমবার , ১৮ অক্টোবর, ২০২১ at ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ

জীবনে সম্পর্ক শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। যে কোন সম্পর্ক টিকে থাকে দুইজনের সমঝোতায়। সংসারে যে কোন সম্পর্কের মাঝে পরস্পরের প্রতি আস্থা, শ্রদ্ধাবোধ, বিশ্বাস, নির্ভরতা এবং স্পর্শের অনুভূতি থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। কখনো এমনও হয়, হয়ত মানুষটা কাছে নেই অনেক দূরে। তথাপি অনুভূতিতে অনুক্ষণ ছুঁয়ে থাকা যায়। এই যে কাছে অনুভব করার প্রবল বাসনা মনকে নাড়া দিয়ে যায়, এটাকেই আমি স্পর্শের অনুভূতিতে কাছে থাকা বলছি। জীবনে এ ধরনের সম্পর্কগুলো বড় দামী। এটাকে প্রগাঢ় মমতায় লালন করতে হয়। অবিশ্বাস বা অনাস্থায় কখনো কোনো সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সংসারে এক একটা সম্পর্ক তৈরী হতে অনেকটা সময় লেগে যায়। চট করে একটা গভীর সম্পর্ক তৈরী হয় না বা হতে পারে না। আর তাই এটাকে নষ্ট হতে দিতে নেই। একবার কোনো কারণে এতে সন্দেহ বা অবিশ্বাস জন্মালে তা আর আগের মতো জোড়া লাগে না। মায়া, মমতা আর ভালবাসায় জড়িয়ে রাখে না মন। কোনো কারণে সম্পর্কে দূরত্ব বা ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টি হলে সেটা হয়ত’বা ফট করে ভেঙে যায় না কিন্তু সেখানে মমতার বাঁধনটা আর তেমনটা থাকে না। সবই হয়ত ঠিক থাকে তবু কোথায় যেনো সুরটা কেটে যায়। ছাড়া ছাড়া কেমন যেনো মাঝপথে ঝুলে থাকার মতো। এ অবস্থায় তখন মনে হয়, সবই হয়ত আছে তবু কী যেন নেই, কী যেন নেই! যে মানুষটাকে দিনের অষ্টপ্রহর মনে পড়ে তাকে তখন আর তেমন করে মনে পড়ে না। যদিও মনে পড়ে সেই মনে পড়ায় টান থাকে না। তার কথা মনে পড়লে তখন আর মন চঞ্চলতায় ভরে ওঠে না! এ এক কষ্টময় কঠিন অবস্থা। আর তাই একটা ভাল সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি। নিজের জীবনের জন্য। এবং ভাল থাকার জন্য।
তবে একজনের একক চেষ্টায় কোনো সম্পর্কই খুব বেশীদিন টিকে না। এক্ষেত্রে যত্নশীল ও বিশ্বাসী হতে হবে দু’জনেরই। জীবনে সততার চেয়ে বড় কিছু নাই। মানুষের দ্বিমুখিতা আচরণ, মিথ্যাচারিতা, অবিশ্বস্ততা ও হিংসার মত ঘৃণিত বৈশিষ্ট্য নিয়ে কেউ কখনো কোন সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারে না। আবার কখনো এমনও হয় সম্পর্কে কেউ যদি গুরুত্ব না পায় সেখানেই দূরত্ব বেড়ে যায়। আপন প্রিয় কাছের মানুষটাও তখন দূরে চলে যায়। দূরে গেলে যদি গুরুত্ব বাড়ে তবে তখন আর ফিরিয়ে আনার সময় বা সুযোগ কোনটাই থাকে না। ততোদিনে নদীর জল গড়িয়ে মহাসাগরের অতলে চলে যায়! যে মানুষটাকে ঘুমিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তেও মনে পড়ে। ঘুম থেকে জেগেও যার মুখখানি মনে করে দিনের সূচনা হয়। এমন কি হাঁটতে, চলতে, কাজে কর্মের হাজারও ব্যস্ততায়ও যার কথা মনে পড়ে, সেই মানুষটাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে হৃদয়ের খুব কাছাকাছি অবস্থানে থাকে। তাকে মনে পড়ে– চন্দ্রকিরণে নিদ্রাহীন রজনীতে, মন খারাপের বেলায়, বৃষ্টির ফোঁটায়, পূর্ণিমা তিথিতে, সাঁঝের মায়ায়, গোধূলির আরক্ত আভায়…এভাবে সবখানে তাকেই অনুভূত হয়। এমন কি সকলের মাঝে থাকলেও যার অভাবে মনে একাকীত্ব লাগে সেই মানুষটিই সংসারে আপন প্রিয় মানুষ। এমন নিবিড় সম্পর্কগুলো সত্যিই অনেক দামী। আজীবন স্বার্থহীনভাবে এমন সম্পর্ককে হৃদয় গহীণে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। এজন্য উভয়েরই সমান যত্নশীল হতে হয়। অথচ প্রগাঢ় মমতায় ভরা এমন সম্পর্কের মাঝেও কখনো কখনো যোগাযোগ কম থাকলে একেই আমরা বলি বিচ্ছেদ! আসলে এই বিচ্ছেদ কখনোই সম্পর্কে ফাটল ধরাতে পারে না, যদি বিশ্বাস আর মনের টান থাকে।
আর তাই একে অন্যের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থাকতে হয়। সম্পর্কের মাঝে মান অভিমানও থাকে কখনো ছেলেমানুষীও থাকে। আবার পাগলামিও থাকতে পারে। সেই ছেলেমানুষী সহ্য করে নেয়ার মনোভাব থাকতে হবে। প্রথম অবস্থায় হয়ত সম্পর্কে গভীরতা কম থাকে কিন্তু তা ধরে রাখতে পারলে ক্রমেই একে অন্যের প্রতি নির্ভরতা বেড়ে যায়। সম্পর্কের স্থায়িত্ব বাড়ার সাথে সাথে পরস্পরকে উপলব্ধি করার মানসিকতাও বেড়ে যায়। আর তখনই একটা সম্পর্কের বসতি গড়ে উঠে দু’টি জীবনে। আসলে সর্বোপরি সব মিলিয়েই একটা সম্পর্ক তৈরী হয় এবং তা টিকিয়ে রাখার দায়িত্বটাও তাই দু’জনের মাঝে সমানভাবে থাকা লাগে। কঠিন কোন পরিস্থিতিতেও মনে যেন এইরূপ আস্থা অবিচল থাকে যে, সবাই দূরে সরে গেলেও সম্পর্কের মানুষটি তাকে আগলে রাখবে পরম মমতায়, গভীর নির্ভরতায়। তাই হারিয়ে আফসোস না করে সম্পর্ককে নিজের মত করে মনের আঙিনায় বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
শায়েলা আহমেদ : লেখক

পূর্ববর্তী নিবন্ধশেখ রাসেলের জন্মদিন আজ
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি