সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে সুদক্ষ শিক্ষক ও তাঁদের ত্যাগ

বিভা ইন্দু | বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৬ পূর্বাহ্ণ

শিক্ষকদের জন্য মাত্র তিনটি পদায়ন। তাও সবার জন্য নয়। সহকারী শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক। কেউ কেউ একনাগাড়ে চল্লিশ বছর শিক্ষকতা করেও সহকারী শিক্ষক পদ থেকেই চাকরি থেকে অব্যাহতি পান। প্রমোশন বা পদোন্নতি তাদের ভাগ্যে জোটে না। এ ছাড়াও সেই মান্ধাতার আমল থেকেই এমন একটা ট্র্যাডিশন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, শিক্ষক মানেই জীবনের সমস্ত শখ আহ্লাদ বিসর্জন দেয়া নিরলস পরিশ্রমী মূল্যবোধ ও নৈতিকতা গৌরবে একনিষ্ঠ একজন স্বল্পেতুষ্ট মানুষ। সবকিছুতে কেবল টানাপোড়েন লেগেই থাকে শিক্ষকদের জীবনে। পেটে ক্ষুধা থাকলেও মুখে আচরণে কেবল নৈতিকতার গৌরব। নির্মোহ থাকবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়েই অনেকর মতো আমিও শিক্ষকতাকে আরাধ্য বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছি। এই তো সেদিনও বিবেকবোধে জাগ্রত মা বাবা সন্তানকে শিক্ষকের হাতে তুলে দিয়ে বলতেন- শরীরে চামড়া মাংস রক্ষার দরকার নেই। প্রাণটা থাকলেই চলবে। পিটিয়েই যেন মানুষ এর মতো মানুষ করা হয়। সাত গ্রাম মিলে তখন তেমনই যোগ্য শিক্ষার্থী বেরিয়ে আসতো। যাদের মধ্যে কখনও অমানবিক কোনো আচরণ জন্মাতে পারেনি। কিন্তু এই প্রজন্মের শিক্ষক হয়ে কতটুকু শেখাতে পারি বা পেরেছি তা জানি না, তবে নিজেকে শিক্ষক ভাবতে ভয় পাই। শিক্ষক হওয়া কি এতো সোজা বিষয়! মুখস্থ বিদ্যা তথা ঠেসে ঠেসে নোট গেলানোতেই যদি শিক্ষক সমাজ ব্যস্ত হয়ে পড়েন তবে সমাজ একটা সময় গিয়ে মনুষ্যত্ব বিবর্জিত রোবোটিক প্রজন্ম খুঁজে পাওয়া যাবে কিন্তু মেধাবী স্বশিক্ষিত সুশিক্ষিত শিক্ষার্থীর অভাবে জাতির সমৃদ্ধি মুখ থুবড়ে পড়বে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, জাত শিক্ষক কখনো মলাটবন্দী বইয়ের পাতায় শিক্ষার বিষয়কে আটকে রাখেন না। চারপাশ থেকে নেয়া পাঠসূচী সম্পৃক্ত সমৃদ্ধ অনুষঙ্গের মাধ্যমেই জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা কিছুটা হলেও ত্রুটিমুক্ত হবে। বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই এর সংখ্যা যতো বাড়বে বাস্তব প্রেক্ষিতে সমস্যা ততোটা প্রকট হবে। ঠিক তেমনই আজকাল অধীত বিদ্যাকে সমস্যা সমাধানে বা সমাজ কল্যাণে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানামুখী তর্কে জড়িয়ে পড়তে হয়। বিজ্ঞান, দর্শন, সাহিত্য কে এখন একটা পাত্রের মধ্যে ঢুকিয়ে পাত্রের মুখ ছিপি দিয়ে আটকে বাইরে নির্দিষ্ট একটি লেবেল সেঁটে দেয়ার তোড়জোড় চলছে। লক্ষ কোটি টাকার বাজেটের শিক্ষাখাত থেকে যুগোপযোগী মেধা মননে কৃতি প্রজন্ম খুঁজে বের করতে হবে। সৃষ্টিশীল শিক্ষার সাথে আনন্দের সংযোগ থাকা অত্যাবশ্যক।
নিরানন্দ শিক্ষা, শিক্ষার্থীর ইচ্ছাশক্তিকে অনেকাংশে নিস্পৃহ করে তোলে। তাই পাঠ্যপুস্তক এর সাথে সহপাঠ্যক্রমকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। মানসিক মন্দাগ্নি বা হতাশায় মুষড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়াতে খেলাধূলা সাহিত্য সংস্কৃতি শিল্প দর্শন সমাজনীতি রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করতে জাত শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে। পেরেছিলেন বিশ্বসেরা শিক্ষকদের অনেকেই। আমরাও পারবো এমন প্রত্যয় নিয়ে মেধাবী প্রজন্ম খুঁজে বের করে দেশের সম্পদ বাড়াতে। সম্পত্তি নয় বাংলাদেশ হোক ‘মেধা সম্পদের’ সূতিকাগার। জয় হোক শিক্ষক নামক অগ্রসেনার। বাদশাহ আলমগীরের মতো সাম্রাজ্যের অধীশ্বরও শিক্ষকের জন্য মর্যাদাকে সুউচ্চ আসনে ঠাঁই দিয়েছেন। আমরাও চাই শিক্ষা হোক শিক্ষককে অপদস্ত হেয় প্রতিপন্ন করা থেকে সুউচ্চ গৌরবের আসনে সমাসীন করবার উপযুক্ত অঙ্গীকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযুদ্ধ নয়, শান্তি চাই
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে