কৌতুক শুনে মজা পায়না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। যারা কৌতুকে হাসে না, তাদের আমরা বলতে পারি রামগড়ুরের ছানা। হাসবো না না না। যদিও আবার অনেকে এদের ংবৎরড়ঁং মানুষ হিসেবেই দেখেন। যারা প্রচুর মজা করেন, তাদের আমরা ভাঁড় বলি। কারণ আমাদের সমাজ রসিক মানুষ সহজে পছন্দ করেনা। অথচ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নানা ধরনের মিম (সবসব) বা রসাত্মক কৌতুক দিয়ে ঠাসা। তবে সেখানে বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে আনন্দদায়ক উপস্থাপন যেটাকে বলা হয় মড়ড়ফ ংবহংব ড়ভ যঁসড়ৎ সেটার উপস্থিতি একেবারে নেই বললেই চলে। সে জন্যই বোধ হয় বলা হয় যে বাঙালির ংবহংব ড়ভ যঁসড়ৎ কম। এদেশে কৌতুক মানেই আদি রসে ঠাসা এবং স্বাভাবিকভাবে নারী এর মূল উপজীব্য। নারী ছাড়া কৌতুক এটা খুব একটা ভাবা যায় না। গবেষকরা এ ধরনের স্থূল রসিকতাকে বলছেন, ংবীরংঃ যঁসড়ৎ. এই ংবীরংঃ যঁসড়ৎ এর অর্থ হলো হালকা কথাবার্তার মাধ্যমে কোন একটা পক্ষকে বিশেষ করে নারীদের হেয় করে দেখা। আমাদের সমাজে ংবীরংঃ যঁসড়ৎ খুব প্রচলিত। আর নারীরা এর খুব সহজ টার্গেট। ংবীরংঃ লড়শবং দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমই শুধু সয়লাব নয় এমন কি কর্মক্ষেত্রেও ংবীরংঃ যঁসড়ৎ এর শিকার হচ্ছেন নারীরা প্রতিনিয়ত। কর্মক্ষেত্রে নারীদের যে সব ংবীরংঃ যঁসড়ৎ বা মর্যাদাহানিকর কথা-বার্তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেখানে নারীদের প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকে খুব কম। কারণ হিসেবে দেখানো হয়ে থাকে এগুলো নিছকই মজা। মজা করলে যে রাগ করে, সমস্যাটা তো তার। প্রায়শই বলা হয়ে থাকে, মহিলারা কোন মজা করলে মজা নিতে পারেন না। এইজন্যই মহিলাদের সাথে কাজ করা মুশকিল! আসলে এই ংবীরংঃ যঁসড়ৎ এর আড়ালে লুকিয়ে থাকে বাচিক যৌন নির্যাতন বা াবৎনধষ ংবীঁধষ যধৎধংংসবহঃ . আর এভাবেই মজার ছলে কর্মক্ষেত্রে নারীর যোগ্যতা, তার শরীর, আচরণ, তার মনোভাব ও পোশাক নিয়ে হেয় করে কথা বলাটা পুরুষরা তাদের এক ধরনের অধিকার বলে মনে করেন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিয়ে যে ধরনের ংবীরংঃ যঁসড়ৎ করা হয়, তার একটা উদাহরণ দেই-
১. পাশের দেশের কোন এক রাজনৈতিক নেতা সংসদে বললেন, মাননীয় স্পিকার আপনি কখনোই কোন মহিলার মাইক অফ করে থামতে বলবেন না। মহিলারা ননস্টপ বক বক করতে না পারলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজেই ওদের কথা বলতে দিতেই হবে। ংবীরংঃ যঁসড়ৎ এর মোড়কে যে াবৎনধষ ংবীঁধষ যধৎধংংসবহঃ করা হয়ে থাকে সেগুলোর দুই একটা নমুনা দেই…।
২. বসকে খুশি করার জন্য আপনার যা আছে আমাদের তো তা নেই ম্যাডাম।
৩. ভাইরে, যে পোশাক পরে আসছেন, আজকে ক্লায়েন্ট খুশি না হয়ে যাবেই না।
৪. আরে প্রেজেন্টেশনের সময় ম্যাডামকে রাখলে বেশি সুবিধা। আমি প্রেজেন্টেশন দিলাম, উনি ংযড় িহিসেবে থাকলেন ইত্যাদি, ইত্যাদি।
যেহেতু এধরণের বাক্য নিছকই মজা করার জন্য ব্যবহার করা হয় সেহেতু এসবকে কেউ গায়ে মাখেন না। বরং গবেষণা বলছে, এ ধরনের বাচিক বা অবাচিক যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন নারী-পুরুষ উভয়েই।
এর ফলাফল ঘটছে খুব খারাপ। ংবীরংঃ যঁসড়ৎ পুরুষদের ধর্ষকামী মানসিকতাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। নারীদের নিয়ে যেসব নানা আদিরসাত্মক কৌতুক অথবা নারীদের খাটো করে দেখানো হয়েছে সে-সব ধরণের রসিকতার ফলে সমাজে সহিংস আচরণ এবং নারীদের হ্যারাস, বুলিং বা যৌন নির্যাতন করার প্রবণতা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে ারপঃরস নষধসরহম অর্থাৎ মনে করা হয়, নারীর পোশাক বা আচরণই আসলে নারীর ধর্ষণের জন্য দায়ী।
গবেষণা বলছে ৎধঢ়ব পঁষঃঁৎব বা ধর্ষণ সংষ্কৃতি গড়ে উঠেছে এক ধরনের বিশ্বাস বা মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে, এসব বিশ্বাস বা মূল্যবোধের কারণে এমন এক পরিবেশ তৈরি হয়ে থাকে যেখানে পুরুষ ধর্ষকামী হয়ে উঠতে উদ্বুদ্ধ হয়। কাজেই ধর্ষণ সংষ্কৃতির মূল ভিত্তি হলো- নারীর প্রতি ধনঁংরাব ধঃঃরঃঁফব. আর ংবীরংঃ লড়শবং বা যঁসড়ৎ হলো নারীর প্রতি পুরুষের এক ধরনের ধনঁংরাব মনোভাব। ৎধঢ়ব পঁষঃঁৎব এর আরেকটি বড় উপাদান হলো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা। প্রশ্ন হলো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কি শুধু পুরুষদেরই থাকে?
পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা এবং ধনঁংরাব নবযধারড়ৎ কিন্তু নারীদের মধ্যেও আছে। তারাও পুরুষদের সাথে সুর মিলিয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ারপঃরস নষধসরহম করে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে নারীরাই নারীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে থাকেন অনেক বেশি। তাই অন্য নারীর ধর্ষণের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নারীরাও খানিকটা দায়ী হয়ে ওঠেন। সমাজ বদলাতে চাইলে নারীদের যেমন সচেতন হতে হবে, তেমন হতে হবে দৃঢ়চেতা। তাকে বেরিয়ে আসতে হবে, নারীর প্রতি প্রথাগত আচরণের ধ্যান ধারণা থেকে। নারীকে হতে হবে উদারমনষ্ক। ভয়কে জয় করে প্রতিবাদ করতে হবে যে কোন ধরনের যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে। তাহলেই হয়তো প্রগতিকে গতি দেওয়া হবে।
রূপক হিসেবে আমরা যদি একটি চলন্ত গাড়িকে উন্নয়ন হিসেবে ধরি, তাহলে কিন্তু তার সামনের দুটো চাকা এবং পেছনের দুটো চাকাই সমান ভূমিকা রাখে। একটিকে বাদ দিয়ে আরেকটি অচল। ঠিক তেমনি সামনের দুটো চাকাকে নারী ধরলে এবং পেছনের দুটো চাকাকে পুরুষ ভাবলে – সমাজে উভয়ের কন্ট্রিবিউশন সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই নারীদের নিজের ব্যাপারে ভাবার পাশাপাশি আরও একটা বিষয়ে ভাবার সময় এসে গেছে- স্মার্টনেস মানে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা বা ধনঁংরাব নবযধারড়ৎ অথবা ারপঃরস নষধসরহম নয়। নিজের অধিকার আদায় মানে স্বার্থপর বা আত্মকেন্দ্রিক আচরণ নয়। এভাবে আর যাই হোক সমাজ বদলানো সম্ভব নয়। সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন চাইলে নারী-পুরুষ একে অপরকে প্রতিদ্বন্দ্বী বা শত্রু ভাবলে চলবে না বরং একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠতে হবে। বর্তমানে নারীদের ভাবনায় রাখতে হবে, খুব অল্প সংখ্যক হলেও কিছু পুরুষ এগিয়ে এসেছেন বলেই নারীরা আরো বেশি কর্মমুখি হতে পারছেন। কাজের ক্ষেত্রগুলো কিছুটা হলেও হয়ে উঠছে নারীবান্ধব। যেসব পুরুষ ভাগ করে নিচ্ছেন ঘরের দায়িত্ব এবং চেষ্টা করছেন, দুজন মিলে ঘরে এবং বাইরে ভারসাম্য রক্ষা করার তাদেরকে তাদের প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু জানানোর সময় এসে গেছে। এই সময়টা পুরুষদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি ংঃৎঁমমষব এর সময়। তাদের দীর্ঘদিনের ংঃবৎবড়ঃুঢ়ব ভাবনার বিরুদ্ধে তাদের এক একজন পুরুষকে বিষম লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেক জায়গায় পুরুষরাই এখন াঁষহবৎধনষব. কোথাও কোথাও খুব সামান্য হলেও পুরুষরাও হচ্ছেন নির্যাতনের শিকার। এটাকে প্রতিশোধ হিসেবে না দেখে বরং পারিবারিক, কর্মক্ষেত্রে এবং সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য পুরুষদের এই বভভড়ৎঃ গুলোকেও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। সমাজ বদলাতে চাইলে শুধু একদল মানুষের বদলই সব নয়। বদলাতে হবে নারী-পুরুষ উভয়কেই। এগিয়ে থাকা পুরুষদের সমকক্ষ হতে হলে নারীকে শান দিতে হবে নিজস্ব চেতনা ও বুদ্ধির গোড়ায়। হতে হবে মড়ড়ফ ংবহংব ড়ভ যঁসড়ৎ এর অধিকারী। হতে হবে পরিশ্রমি। ভাঙ্গতে হবে প্রথাগত ধ্যানধারণা। তাহলেই একটা ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব।
(কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট)












