সমপ্রীতির বাংলাদেশ

সৈয়দা সেলিমা আক্তার | সোমবার , ৩০ নভেম্বর, ২০২০ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

জীবনে প্রথম প্রোসেশনটা ছিলো হাই স্কুলে পড়ার সময়। পাশের দেশে মসজিদ ভেঙেছে যেনো আমাদের দেশে তার আঁচ না পড়ে। হাতে হাত ধরে স্কুলের বান্ধবীরা প্রথম মানববন্ধন করলাম আমরা নন্দনকাননে কৃষ্ণকুমারী স্কুলের সামনের সড়কে। আমি বড় ওড়না পড়তাম ইউনিফর্মের সাথে। পোশাক কখনো কোনো কিছুতে কোনো বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে না। জাতীয় সংগীত কোরাসে গাইতে উঠতাম স্টেজে। আমাদের স্কুলের বারান্দাটা একদম স্টেজের আদলে ছিলো। মাঠ থেকে যেনে মঞ্চ দেখতাম। সামনা সামনি দুটো স্কুল কৃষ্ণ কুমারী অপর্ণা চরণ একটা গেইটে ঢুকতাম সবাই বেরুতামও। লেখালেখি সাংস্কৃতিক চর্চা সব ভালো হতো। ছড়ার জন্য পুরস্কারে মনোনীত করে একটা সংগঠন থেকে চিঠি আসে স্কুলে আমার নামে। দিদিমণিরা অনেক খুশি হয়েছিলেন সেদিন। গীতা দিদিমণি বলেছিলেন বড় ওড়না পরে প্রথমে তো বুঝতে পারিনি সৈয়দা সেলিমা লেখালেখিতে ঝোঁক আছে পুরস্কারও পেলো। আমি কোরাস গান আবৃত্তি নাচ সব কিছুতে পারটিসিপেট করতে চেষ্টা করতাম। আরবি ক্বেরাত ও হামদ নাতেও পুরস্কার পেয়েছি। কলি বসাক নামে আমার এক বান্ধবী ‘নাম-দেশ-ফল-ফুল’ খেলাতে ‘দ’ দিয়ে ‘দ্রাক্ষা দাড়িম্ব’ ফল লিখে প্রথম সংস্কৃত শব্দের প্রতি আমার আগ্রহ সৃষ্টি করে। আমি কিছু কিছু লিখতে ও শিখি। পরে সে বন্ধু পাশের দেশে চলে যায়। যাওয়ার আগে অবশ্য আমাকে কানে কানে বলে যায় সে চলে যাচ্ছে। হাজারি লেনে ওদের গহনার দোকান ছিলো অলংকার কুটির নামে। ওকে খুবই মিস করতাম। মহিলা কলেজের মাঠে বাতাসে ঢেউ খেলে যেতো সবুজ ঘাস দৈনিক পত্রিকা উল্টে দেখতাম লেখা ছাপলো কিনা। বড় ভাইয়াকে খুব মিস্‌ করি। তিনি প্রথম আমাকে লেখালেখির জগতের দ্বার উন্মোচন করেছিলেন আজো মনে পড়ে। আমাদের পরিবারটাতে অন্ধতা ছিলো না। অথচ মাকে নানীকে বলা যায় অসূর্যস্পর্শা। আমাদের এলাকাতে কখনো অপ্রীতিকর কিছু করতে দেখিনি কাউকে। একবার আমাদের ঘরে আব্দুল নামে একজন ছিলো। সে কারো প্ররোচনায় না বুঝে বলেফেলেছিলো দাঙ্গার কথা ধর্মীয় স্থাপনাভেঙে ফেলবে কিনা এরকম সামপ্রদায়িক কথা। আমার নানী খুব রাগ করেছিলেন। কড়াভাবে বলেছিলেন খবরদার ওরকম কিছু আমার এখানে করা যাবেনা। অন্যধর্মের মানুষের হেফাজত করতে না পারলে খোদা নারাজ হন। কারো ধর্মীয় স্থাপনা ভাংচুর অন্যায়। সত্যিই আমার নানীর দোয়াতে আমাদের এলাকা এখনো সুরক্ষিত।
ইবাদত খানার সাথে লাগানো আমাদের বাড়িকে আমার কখনো আলাদা কিছু মনে হয়নি। ঘরটা আর ইবাদত খানা আলাদা নয়। মানুষকে ভালোবাসলে তো খোদাকে পাওয়া যায়। আমরা মানুষের মাঝে এসত্যিটা যতই ছড়িয়ে দিতে পারবো ততই বাড়বে বন্ধুতা, ভালোবাসা আর এভাবেই আমরা গড়তে পারবো সমপ্রীতির বাংলাদেশ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনিজে বই পড়ুন, অন্যকে বই পড়ার জন্য উৎসাহিত করুন
পরবর্তী নিবন্ধআত্মশুদ্ধি ও মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি