চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পরিচালিত জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত প্রকল্প সময়মতো বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই গতকাল চট্টগ্রাম মহানগরীর একটি বড় অংশ ডুবে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট স্থপতি ও নগর পরিকল্পনাবিদ আশিক ইমরান। গতকাল দৈনিক আজাদীর সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ নিয়েই জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে খালগুলো দখলমুক্ত করতে প্রায় চার হাজার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা এবং খালের নাব্যতা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখা যায় যে, একদিকে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার দশ পনের দিনের মধ্যে ওই জায়গাটি ফের ভরাট হয়ে নাব্যতা শূন্যের কোটায় নেমে যাচ্ছে। সিডিএ এবং সেনাবাহিনী নানাভাবে চেষ্টা করেও খালের নাব্যতা রক্ষা করতে পারেনি।
এর উপর করোনার ধাক্কাটি অনেক বড় প্রভাব ফেলে বলে মন্তব্য করে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, স্বাস্থ্যখাতের জন্য টাকার সংস্থান করতে গিয়ে এ প্রকল্পের বরাদ্দে কিছুটা কাটছাঁট হয়েছে। এতে প্রকল্পের কাজ স্তিমিত হয়ে গেছে। খালের পাড়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের জন্য অস্থায়ী বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজ স্তিমিত হয়ে যাওয়ায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ সময় মতো শেষ হয়নি। খালে অস্থায়ী বাঁধ রয়ে গেছে। পলিথিন, প্লাস্টিক এবং পাহাড়ের মাটি গিয়ে খাল ভরাট অব্যাহত রয়েছে। এতে করে নগরীর পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়নি। খাল দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরীর বড় অংশ ডুবে গেছে। অপরদিকে বিদেশ থেকে কিছু ইক্যুপমেন্ট আনার কথা থাকলেও তা আনা সম্ভব হয়নি। করোনার কারণে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো মিলে সমন্বিতভাবে এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করতে হবে। খাল যাতে ভরাট না হয়, খালে যাতে পলিথিন না পড়ে, পাহাড় যাতে কাটতে না পারে ইত্যাদি বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
এ প্রকল্পকে চট্টগ্রামের সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, করোনার মাঝে পদ্মা সেতুর কাজ হয়েছে, ঢাকার মেট্রো রেলের কাজ হয়েছে। মেট্রো রেলের ট্রায়াল হয়েছে। তাহলে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের বরাদ্দ কমাতে হবে কেন? এ প্রকল্পকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালগুলোর প্রবাহ ফিরিয়ে আনা গেলেই কেবল চট্টগ্রাম মহানগরী জলাবদ্ধতা থেকে নিস্তার পাবে।
তিনি বলেন, যেভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে তাতে আগামী দশ বছর পর চট্টগ্রাম যে একটি পাহাড় ঘেরা শহর, সেটি রূপকথাই পরিণত হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প সম্পন্ন হলেও এটির ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় ব্যক্ত করে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে সিডিএ তা সিটি কর্পোরেশনের কাছে হস্তান্তর করবে। কিন্তু এ প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণের মতো লোকবল এবং আর্থিক সঙ্গতি সিটি কর্পোরেশন থাকবে না। ফলে আবারো খালগুলোর নাব্যতা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এখন থেকে এ প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণ এবং সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রশিক্ষিত লোকবল এবং অর্থের সংস্থানের বিষয়টি নিশ্চিত করারও আহ্বান জানান তিনি। স্লুইচগেটগুলো পরিচালনা করতে হবে। জোয়ার ভাটার সময় খোলা বাধা করতে হবে। খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে। যদি বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হয় তাহলে বছর কয়েকের মধ্যেই প্রকল্পটি চট্টগামের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে উঠবে।