সব সিটের পাশাপাশি দাঁড়িয়েও নেওয়া হলো যাত্রী

বাসে বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি দুটোই উপেক্ষিত

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। সংক্রমণ রোধে গতকাল শনিবার থেকে বাসের আসন সংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিষয়ে বিআরটিএর নির্দেশনা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। সর্বত্রই স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক পরার ক্ষেত্রে উদাসীনতা লক্ষ্য করা গেছে।
অধিকাংশ বাসে দেখা যায়, আগের রূপেই সব সিটে যাত্রী নেওয়ার পাশাপাশি দাঁড়িয়েও যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের কারও মাস্ক থুতনিতে, কারও হাতে, কারও পকেটে। আবার কারও কারও মাস্কই নেই। যাত্রী ওঠানো এবং নামানোর ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। বিধিনিষেধ মানাতে সড়কে নেই কোনো ধরনের তদারকি। রাখা হয়নি কোনো সুরক্ষা ব্যবস্থাও। করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ মোকাবেলায় বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার। নির্দেশনা অনুযায়ী, উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। ট্রেন ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন এবং বাসে আসন সংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সব ধরনের যানের চালক ও সহকারীদের করোনার টিকা নেওয়ার সনদ সঙ্গে রাখার কথা বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক শাখার সভাপতি মো. মুছা আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামের পরিহন শ্রমিকদের ৬০ শতাংশ এখনো টিকা নেয়নি। এদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো কেন্দ্রও করা হয়নি। যে কারণে এদের টিকা সনদ নেই। এখন যাদের টিকা দেওয়া নেই তাদের যদি গাড়ি চালাতে দেওয়া না হয়, তাহলে পরিবহন সংকট বাড়বে, শ্রমিকরা বেকার হবে, পাশাপাশি যাত্রীদের দুর্ভোগও বাড়বে।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিআরটিএর নির্দেশনা মেনে আমরা যত আসন তত যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাতে বলেছি। কোনোভাবেই গাড়িতে বাড়তি যাত্রী নেয়া যাবে না-এমন নির্দেশনা সংগঠনের পক্ষ থেকে সব চালক-হেলপারদের দিয়েছি। পাশাপাশি আমাদের পরিবহন শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারেও নির্দেশনা দিয়েছি। তবে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাসে অফিসগামী যাত্রীদের ঠাসাঠাসি করে ওঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষার নীতি মানছেন না যাত্রীদের অনেকে। মাস্ক থাকলেও তা কারও হাতে, কারও পকেটে। অধিকাংশ চালক ও সহকারীর মাস্ক ঠাঁই পেয়েছে থুতনিতে। সুরক্ষাকারী এ পণ্যটি থাকলেও যথাযথ নিয়মে ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে উদাসীনতা। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির এমন অবহেলাকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এভাবে অবহেলা চলতে থাকলে চড়া মূল্য দিতে হবে গোটা দেশকে।
গতকাল দেওয়ানহাট মোড়ে বাসের হেলপার সুজনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে থুতনি থেকে মাস্ক টেনে মুখে তোলেন তিনি। তারপর বলেন, বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে, যাত্রীরা চাইলে দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীদের মাস্ক পরতে বলা হচ্ছে।
টাইগারপাস মোড়ে এক বাস যাত্রীকে মাস্ক নেই কেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, মাস্ক পরেছিলাম, কিন্তু নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, তাই একটু খুলে রেখেছি।
ওই বাসের অন্য এক যাত্রীর মাস্ক থুতনির নিচে রাখা ছিল। মাস্ক ঠিকমতো পরা উচিত কিনা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অবশ্যই ঠিকমতো পরা উচিত ছিল। ভাড়া দেব বলে মাস্ক খুলে রেখেছি।
গণপরিবহনে নিয়মনীতির প্রতি উদাসীনতা দেখা গেছে নগরীর চার নম্বর, দশ নম্বর, আট নম্বর, দুই নম্বরসহ অধিকাংশ রুটে।
বিআরটিএর তথ্যমতে, চট্টগ্রামে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি ও সরকারি বিধিনিষেধ মানা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করতে সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন বিআরটিএর দুজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। গতকাল সকাল থেকে তারা চট্টগ্রামের বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। চট্টমেট্রো সার্কেল-১ ও চট্টমেট্রো সার্কেল-২ এর বন্দর, ইপিজেড, পতেঙ্গা, বহদ্দারহাট, চকবাজার, কোতোয়ালী, নিউ মার্কেট, নতুন ব্রিজ, মইজ্জারটেক, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অধিক্ষেত্রাধীন বাস টার্মিনাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত-১১ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট একি মিত্র চাকমার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়।
অলংকার, জাকির হোসেন রোড, হালিশহর, আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, পাহাড়তলী, টাইগারপাস, জিইসি মোড়, মুরাদপুর, অক্সিজেন, হাটহাজারী রোড এবং অধিক্ষেত্রে বাস টার্মিনাল এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত-১৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসিন মনিরার নেতৃত্বে অভিযান পরিচালিত হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় সংসদের ষোড়শ অধিবেশন শুরু আজ
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬