রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সবার মতামত নিয়ে গ্রহণযোগ্য একটি ইসি গঠনের আশা প্রকাশ করেছেন। কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হতে চলায় নতুন ইসি গঠনে গতকাল সোমবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপ্রধান। খবর বিডিনিউজের।
বঙ্গভবনে প্রথম দিনে জাতীয় পার্টির সঙ্গে মো. আবদুল হামিদের আলোচনার পর রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফেব্রুয়ারি মাসেই শেষ হবে। তার পূর্বেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনার এই উদ্যোগ। রাষ্ট্রপতি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সম্ভব হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে। রাষ্ট্রপতি এই প্রক্রিয়া সফল করতে সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সহযোগিতা কামনা করেন। এবার যে ইসি গঠন হবে তাদের ব্যবস্থাপনায় আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।
আইন প্রণয়নসহ ৩ দাবি জাপার : রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় ইসি গঠনে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তিনটি দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। সংলাপ শেষে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের সাথে রাষ্ট্রপতির অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে আলাপ হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়নসহ তিনটি প্রস্তাব দিয়েছি। উনি প্রস্তাবগুলো মোটামুটি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রস্তাব তিনটি হচ্ছে ১. নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রণয়ন, ২. সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন, ৩. রাষ্ট্রপতি নিজে যোগ্য ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব বের করে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন।
কাদের বলেন, আমরা দ্বিতীয় যে প্রস্তাবটি দিয়েছি যদি কোনো কারণে আইন প্রণয়ন করতে না পারেন তাহলে যেটা সবসময় করা হয় সার্চ কমিটি গঠন, সেটাও আপনারা করতে পারেন।
সার্চ কমিটির সদস্য হিসেবে কয়েকজনের নামের প্রস্তাব দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সার্চ কমিটি গঠনের জন্য কিছু যোগ্য এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তি লাগে বলে আমরা মনে করি। সেজন্য উনাকে (রাষ্ট্রপতি) ৪ থেকে ৫ জনের একটি তালিকা দিয়েছি। যেটা আমরা এখানে প্রকাশ করব না।
রাষ্ট্রপতি যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন, তাতে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যাবে কিনা প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনে যাব না, এরকম কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নিইনি।
বিকাল ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বসে জাতীয় পার্টির ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ছিলেন মুজিবুল হক চুন্নু, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদ, সালমা ইসলাম, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ। মহামারীর এই সময়ে তাদের সবাইকে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে নেগেটিভ সনদ নিয়ে বঙ্গভবনে যেতে হয়েছে।
আরও ৭ দলের সংলাপ সূচি চূড়ান্ত : ইসি গঠনে আরও সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সংলাপের সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বঙ্গভবনের প্রেস উইং থেকে আগামী ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব দলের সঙ্গে সংলাপের তারিখ জানানো হয়।
এর আগে বুধবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সঙ্গে আলোচনার সূচি জানানো হয়েছিল। গতকাল আরও সাত দলের নাম আসায় এ পর্যন্ত মোট নয় দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের সূচি চূড়ান্ত হলো।
সূচি অনুযায়ী ২৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ২৭ ডিসেম্বর তরীকত ফেডারেশন ও খেলাফত মজলিস, ২৮ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপ হবে।