সবার উপর মানুষ সত্য

অভিরাজ নাথ | মঙ্গলবার , ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ at ১০:৪৯ পূর্বাহ্ণ

বাংলা সংস্কৃতির এই অতীব জনপ্রিয় ভাবটির স্রষ্টা হলেন মধ্যযুগের বাঙালি কবি বড়ু চণ্ডীদাস। সমগ্র বিশ্বসমাজের অবিরাম অস্থিরতার প্রাক্কালে বড়ু চন্ডীদাসের সৃষ্ট এই বাণীটি মানব সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক বাণী হিসেবে পরিচিত। এই বাণীটির মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে সৃষ্টির দুটি অন্যতম উপাদানের দ্যোতনা: মানুষ এবং সত্য। একটি জৈবিক, অন্যটি দৈবিক। সৃষ্টির আদি লগ্নে মানুষ যখন প্রথম পৃথিবীর আলো দেখলো, তখন তার কাছে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। তারপর সময়ের বিবর্তনে মানুষ গড়ে তুলল উন্নত সভ্যতা, উন্নতির সাথে সাথে মানুষ হাতে পেল অফুরান সময় আর সুযোগ। মানুষের বাসনা হল প্রতিমুহূর্তে নিজেদেরকেই বারবার অতিক্রম করে যাওয়ার। সেই বাসনা থেকে মানুষ নিজেকে করে তুলল নিজেরই প্রতিপক্ষ। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই আত্মবিরোধিতা থেকেই জন্ম নিল বৈষম্য, ভেদাভেদ, হিংসা ও হানাহানি। সময়ের সাথে সাথে সমাজের এই সকল বিভেদকামী শক্তিগুলি আরো দৃঢ় হয়েছে। মানুষের চরিত্রের সাধারণ গুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিযোগী মানসিকতা ও অবিশ্বাস। প্রতিমুহূর্তে মানুষ ব্যস্ত নিজেকে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করতে। তার কাছে আজ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে ধনসম্পত্তি, জাতপাত, লিঙ্গ, ধর্ম ইত্যাদি অতি তুচ্ছ বাহ্যিক বিষয়গুলি। এগুলির ভিত্তিতে প্রতিনিয়ত মানুষ বুনে চলেছে বিভেদের বীজ। কিন্তু এই সুবিশাল সৃষ্টির বৃহত্তর প্রেক্ষিতে দেখতে গেলে মানুষ অতি তুচ্ছ এক জীব, যারা অন্যদের মতোই জীবনধারণের জন্য প্রতিমুহূর্তে সংগ্রাম করে চলেছে। সেই সংগ্রামের পথে পড়ে রয়েছে অসংখ্য বাধা ও বিপদ। কিন্তু মানুষ নিজের ব্যাপকতার স্বার্থরক্ষার কথা ভুলে মেতে রয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতায়। কিন্তু জীবনের শেষে এই সকল প্রতিযোগিতাই পর্যবসিত হয় সৃষ্টির মহাশক্তির সাথে আত্মশক্তির মিলনে। তাই কবিতার এই উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন সকল প্রকার বিভেদ, হিংসা ও হানাহানির ঊর্ধ্বে উঠে একমাত্র সত্য বলে যদি কিছু থাকে তাহলো কেবল মানুষ; মানুষের ঊর্ধ্বে আর বড় সত্য কিছু নেই। লেখক: তরুণ শিশুসাহিত্যিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅটোরিকশার দৌরাত্ন্য বন্ধ হোক
পরবর্তী নিবন্ধতুলনায় সংসার নরকতুল্য