সন্দ্বীপবাসীর ঈদযাত্রায় ভরসা কেবল এমভি আইভি

কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ ঘাট

লিটন কুমার চৌধুরী, সীতাকুণ্ড | শুক্রবার , ৫ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:০৫ পূর্বাহ্ণ

চার লাখ সদ্বীপবাসীর নদীপথে নিরাপদ যাতায়াতের জন্য বিআইডব্লিউটিসির একটি মাত্র জাহাজ এমভি আইভি রহমান। আবার অন্যান্য নৌযানের তুলনায় জাহাজের ভাড়া কম হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা খরচ বাঁচাতে এ সরকারি জাহাজের উপর নির্ভরশীল। অথচ জাহাজটি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে দীর্ঘদিন এ রুটে চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাখা মেরামতের জন্য কর্ণফুলী ডক ইয়ার্ডে রয়েছে জাহাজটি। তবে আসন্ন ঈদে নিরাপদ যাত্রার জন্য এটি মেরামত করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৬ এপ্রিল থেকে আবার এ নৌরুটে জাহাজটি চলাচল শুরু করবে।

যাত্রী পারাপারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে প্রতিবছর ঈদের ছুটি শুরুর পর চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ উপজেলায় প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী আসাযাওয়া করে। এবার এমভি আইভি রহমান নামের ছোট আকারের জাহাজটি দৈনিক সর্বোচ্চ ৫শ যাত্রী বহন করতে পারবে। বাকি যাত্রীদের ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় ও স্পিডবোটে ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হবে। ছোট জাহাজের যাত্রীদেরও ঘাট থেকে জাহাজে ওঠানামা করতে হয় নৌকায় চড়ে। এ কারণে তাদের ঝুঁকিও কম নয়।

একদিকে বাতাসের কারণে সাগর উত্তাল অন্যদিকে পর্যাপ্ত জাহাজ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল সাগর পাড়ি দিতে হচ্ছে কখনো মালবাহী ট্রলার ও সার্ভিস ট্রলারে, আবার কখনো স্পিডবোটে। তবে সাগর অত্যধিক উত্তাল থাকলে বন্ধ হয়ে যায় স্পিডবোটের চলাচল। তখন যাত্রীদের ভরসা করতে হয় মধ্যযুগীয় বাহন কাঠের ট্রলারগুলোতে।

বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ এমভি আইভি রহমানের কমিশন এজেন্ট ইকরাম উদ্দিন ফরহাদ জানান, জাহাজের পাখা মেরামতের জন্য এ মুহূর্তে এটি কর্ণফুলী ডকইয়ার্ডে রয়েছে। মেরামতের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

প্রতিনিয়ত উত্তাল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এ নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীরা জানান, যদিও জাহাজে উঠানামা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও ভোগান্তি হলেও প্রচণ্ড ঢেউ আর বাতাসে জাহাজই সবচেয়ে নিরাপদ নৌযান। কিন্তু বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকে। যার কারণে আমাদেরকে ঝুঁকি নিয়ে অনিরাপদ নৌযানে করে বাধ্য হয়ে সাগর পাড়ি দিতে হয়। এছাড়া একটি মাত্র জাহাজের শুধু সকালে ট্রিপ থাকায় দিনের বাকি সময় ও রাতে দ্বীপের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

সন্দ্বীপ নাগরিক সমাজের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়া গুপ্তচরাকুমিরা নৌপথে জাহাজ বন্ধ থাকে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। যে দুষ্টচক্র সবসময় এই পথে জাহাজ অকার্যকর রাখার চেষ্টা করে এবার তারা যুক্ত কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। এছাড়া তিনি ঈদের আগেই জাহাজটি চালুর জোর দাবি জানান।

কুমিরা গুপ্তছড়া নৌরুটে মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ যাত্রীদের। কিন্তু ইজারাদাররা এ বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করছে না। দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে ঈদযাত্রা করতে হয়। ইজারাদার ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায়ের অভিযোগ যাত্রীদের। গত বছর ঈদের আগের দিন ইচ্ছাকৃত ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে কুমিরা ঘাটে যাত্রীরা ইজারাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ ঘটনায় কয়েকজন যাত্রীকে আটক করে এবং কর্তৃপক্ষ শতাধিক যাত্রীর বিরুদ্ধে দায়ের করে। এ নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। এবারের ঈদেও এ ধরনের অনিয়ম হলে যাত্রীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিতে পারে। এ বিষয়ে আগে থেকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন ইজারাদারদের। তবে কুমিরাগুপ্তচড়া ঘাটের ইজারাদার আনোয়ার হোসেন জানান, ঈদে নিরাপদ যাত্রার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জেলা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়াই যাত্রীদের কাছে নেয়া হবে।

সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন, এবার কুমিরা ঘাটে কোনো অবস্থাতেই ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। আবার যাত্রী প্রতি লাইফ জ্যাকেট রাখতে হবে নৌযানে। সীতাকুণ্ড উপজেলা ও সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসন থেকে চট্টগ্রামসন্দ্বীপ নৌপথের দুই প্রান্তে এই নির্দেশনা মানা হচ্ছে কি না তা কঠোরভাবে তদারক করা হবে। অনুমোদনহীন নৌযানও যাতে চলাচল করতে না পারে সে জন্যও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভাড়ায় খাটছে ভিক্ষুকরা
পরবর্তী নিবন্ধপুঞ্জীভূত লোকসান মেটাবে গ্রহীতা ব্যাংক