সন্তান পরিত্যক্ত বৃদ্ধ মা-বাবা

মীনহার সুলতানা নিকা | সোমবার , ১ মার্চ, ২০২১ at ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ

রাতে যখন দূর আকাশের দিকে চোখ নিক্ষেপ করি তখন মায়াবী চাঁদের আশেপাশে অসংখ্য তারা চোখে ধরা পড়ে। আর তখনই মনে হয় চাঁদ হলো “মা” আর তারা হলো “সন্তান”। সন্তান তার মাকে পাহারা দিচ্ছে। বিষয় টা উল্টো দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় মানব সন্তানদের অনেক বড় বড় ইমারত কিন্তু কোথায়ও ঠাঁই নেই বৃদ্ধ মা-বাবার। সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে যে বাবা কাঠফাঁটা রোধে কুলি-মজুর করেছে আর মা রাতের স্বপ্নের ঘুম বিসর্জন দিয়েছে নকশিকাঁথার সুঁই-সুতোর ছন্দময় বুননে, কিন্তু সন্তানের সেই স্বপ্নের গড়া রাজ্যে মা-বাবার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। আহারে কষ্ট। মা-বাবা যখন সন্তানের একমাত্র নির্ভেজাল ভরসাস্থল ঠিক তখনই যখন মা-বাবা বৃদ্ধ আর তাদের একমাত্র আশ্রয়স্থল অবহেলিত অবহেলার শিকার, না হয় মানবতার লজ্জিত কারাগার বৃদ্ধাশ্রমে। মা-বাবা যখন কারাদণ্ড হিসেবে সন্তানের হাতে কলম তুলে দিয়েছে, অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে মা-বাবাকে কারাদণ্ড হিসেবে বৃদ্ধাশ্রম ধার্য্য করেছে। রাস্তা দিয়ে হেটে যাবার সময় যে সাইনবোর্ডটি দৃষ্টি কেড়ে নেয় সেটা হলো “বৃদ্ধাশ্রম”। অনুধাবন করলে দেখা যায় এই বৃদ্ধাশ্রম থেকে ভেসে আসে বৃদ্ধ মা-বাবার কান্না। অবহেলিত মা-বাবার বৃদ্ধাশ্রম জীবনের নিদারুণ গল্পের আহাজারি। জন্মের পর প্রথম যার কাছে কাঁদি সে “মা”, আর শাসন, স্নেহ আদর, আশ্রয়, প্রশ্রয় ও শেষ ভরসা হলো “বাবা”। বিনিময়ে সন্তানেরা পাই সুন্দর ভবিষ্যৎ আর পুরস্কার হিসেবে মা-বাবা পাই অকথ্য যন্ত্রণা। যখন বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত অবস্থায় চোখের জল ফেলে দিন গুনছে মা-বাবা ঠিক তখনই নির্বোধ সন্তানেরা ভাবে বৃদ্ধাশ্রমে নতুন নতুন বৃদ্ধ বয়সের মানুষের সাথে ভালো আছেন বৃদ্ধ মা-বাবা। মা-বাবা চিন্তা করে কখন সন্তানের দেখা মিলবে।মাস চলে আর নতুন বছর আসে কিন্তু সন্তানেরা আসে না। এইভাবে কেটে যায় বছরের পর বছর। হঠাৎ বৃদ্ধাশ্রম থেকে কোন একদিন ডাকপোস্টে চিঠি এলে,না হয় মুঠোফোনে ফোন বাজলে সন্তানেরা চিন্তা করে হয়তো মা-বাবার কিছু প্রয়োজন পড়েছে। যখন শুনে মা-বাবা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেছে তখন হয়তো দুফোঁটা চোখের জল গড়িয়েছে। না পেল সন্তানের দেখা, না পারল সন্তানের সাথে বলতে কথা শুধু অকথ্য যন্ত্রণায় পৃথিবী ছাড়তে হয়। তারপরও কি সন্তানেরা পেরেছে নিজেদের নিজের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে। নির্বোধ সন্তানেরা নির্বোধ হয়। যদি এমনটা হতো বৃদ্ধাশ্রমে নাম বৃদ্ধাশ্রম না হয়ে “বৃদ্ধ মা-বাবার আর্তনাদের খেলাঘর”, তবে সন্তানেরা বৃদ্ধ মা-বাবাকে লজ্জিত কারাগারে পাঠানোর আগে নিজের বিবেকের কাছে বন্দী হত। দুঃখ জনক বিষয় হচ্ছে বর্তমানে শিক্ষিত পরিবার গুলোতে বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি অবহেলা ও নির্যাতনের বিস্তার বেশি। মাকে “সন্তান পরিত্যক্ত জননী” হিসেবে কলঙ্কিত না করে বৃদ্ধ মা-বাবার বার্ধক্য জীবনের সঙ্গী হয়ে নিজেদের প্রদর্শন করি। কারণ আজ মা-বাবার প্রয়োজন নেই বলে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়েছি। একদিন সন্তানেরাও বৃদ্ধ হবে হয়তো তাদেরও শেষ ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম হবে না হয় রাস্তার ফুটপাতে। মা-বাবাকে ভালোবাসার শিকড়ে বেঁধে রাখি। ভালো থাকুক সকল মা-বাবা। সকল মা-বাবার প্রতি রইল ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআসুন, পরচর্চা থেকে নিজেকে বিরত রাখি
পরবর্তী নিবন্ধস্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আমাদের উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ