সন্তানের মা ডাক শুনতে ব্যাকুল ছিলেন গৃহবধূ জুলি আকতার (১৯)। সেই সন্তান দুনিয়াতে এসেছে ঠিকই, কিন্তু মা ডাক আর শোনা হলো না জুলির। আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদন্ডী গ্রামে গত ১১ নভেম্বর আগুনে দগ্ধ হওয়ার পর এক সপ্তাহ মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে বৃহস্পতিবার বিকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল শুক্রবার জুঁইদন্ডী গ্রামে তার নামাজে জানাজায় হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। নিহত জুলি আকতার (১৯) ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ম্বামী মফিজ উদ্দীনের ঘরে রান্না করার সময় অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। ঘটনার পর প্রথমে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় বৃহস্পতিবার বিকালে মারা যান। মারা যাওয়ার দুইদিন আগে গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন জুলি।
জুলির স্বামী মফিজ উদ্দিন বিলাপ করতে করতে বলেন, মা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন জুলি। এভাবে একটি দুর্ঘটনা সব তছনছ করে দেবে কল্পনাও করিনি। এখন এই মাসুম বাচ্চাকে কীভাবে বড় করব ভাবতে পারছি না। এ কষ্ট আমি রাখবো কোথায়। বর্তমানে তার কন্যা সন্তানের
দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছেন পাশের বাড়ির তার মামাতো বোনকে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর পারিবারিক ভাবে জুলি আকতারের সাথে মফিজের বিয়ে হয়। পরিবারে মফিজের মা বাবা ছাড়াও রয়েছে দুই ভাই, দুই বোন। পরিবারে ভাইবোনের মধ্যে মফিজ বড়। আর জুলির পরিবারে দুই ভাইবোনের মধ্যে সে সবার বড়।
গত ১১ নভেম্বর দুপুরে রান্না করার সময় অসাবধানবশত জুলির শরীরে আগুন ধরে যায়। আগুনে তার শরীরের বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়। সাথে সাথে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। পরে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করে সেখানে পাঁচদিন চিকিৎসা দেওয়া হয়।
জুইঁদন্ডী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ইদ্রীস জানান, গত ১১ নভেম্বর রান্না করার সময় গৃহবধূ জুলি অগ্নিদগ্ধ হন। মৃত্যুর ২ দিন আগে হাসপাতালে ১টি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। গত বৃহস্পতিবার বিকালে গৃহবধূ জুলি ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জানাজা শেষে স্বামীর বাড়িতে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।