সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয়

প্রতিমা দাশ | শুক্রবার , ২ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:০৬ পূর্বাহ্ণ

ইদানীং সময়ে চট্টগ্রাম শহরে ঘটে গেছে পরপর দুটি ভয়ংকর নৃশংসতম হত্যা এবং দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি যে দুটিই টার্গেটই অবুঝ শিশুর উপর। যারা ফুল হয়ে ফোটার কথা ছিলো কিন্তু তার আগেই তাদের ছোট্ট শরীরকে খণ্ডবিখণ্ড করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাবা মায়ের বুকফাটা কান্না সকল বিবেকবান মানুষের বিবেকে নাড়া দিয়ে গেছে। ভাবতে অবাক লাগে, মানুষ কতোটা অমানবিক এবং পশুত্ব ধারণ করলে এভাবে জঘন্যতম ঘৃণ্য কাজ করতে পারে। এতোকিছুর পর ও একটা ভালো দিক লক্ষ্য করা যায়, প্রশাসন খুব দ্রুত আসামিদেরকে গ্রেফতার করছেন। তাদেরকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তিও হবে। কিন্তু আমাদের সমাজের যে বড়সড় নৈতিক অধঃপতন হচ্ছে তার প্রতিকার কি? সাধারণ সুশীল সমাজ কি একবার ভেবেছেন! এরপর যখন আরেকটা শিশুকে হত্যা করা হবে তখন আমরা আবারো নড়েচড়ে বসবো প্রশাসন আবারও আসামিকে গ্রেফতার করবে কিন্তু এভাবে কি সমাজের বিবেক মূল্যবোধহীন মনুষ্য জাতির পরিবর্তন সম্ভব! আজকাল আমাদের পারিবারিক মূল্যবোধ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে যে পাশের বাসার আদর করা কোন নারী পুরুষকে এখন বিশ্বাস করা যায় না। দশ বছর আগেও মানুষ তার সন্তানকে পাশের বাসায় রেখে নিরাপদ ভেবে অতি জরুরি কাজ করতে যেতো, এখন কেউ সন্তানকে আদর করবে এই বিশ্বাসটুকু আমরা করতে পারছি না। ধীরে ধীরে সামাজিক মূল্যবোধের যে পচন ধরেছে তার দায়ভার কে নিবে। মানুষের বিবেকবোধ জাগ্রত করার জন্য প্রশাসন তো কিছু করতে পারবে না! তাহলে ঘুনে ধরা সমাজের কোথায় পচন হয়েছে সেটা আমাদের বের করতে হবে। পৃথিবীর সকল মানবিক মানুষ শিশুদের ভালবাসে, শিশুদের পবিত্র চাহনির মতো সুন্দর আর কিছুই নেই অথচ সেই সব শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যা করতে মানুষ নামক সেরা বুদ্ধিমান জাতির বিবেকে দ্বিধা কাজ করে না! এই কেমন সমাজে আমরা বসবাস করছি? এ সমস্ত নর পিশাচদের হাত থেকে বাঁচাতে আমাদের সন্তানদের আর কতো চার দেয়ালে বন্দী রাখবো। মানুষের ভিতর দিন দিন পৈশাচিক মনোভাব বেড়েই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে আগের সেই পারিবারিক মূল্যবোধ ও ভালবাসা এখন অতীত। আমাদের পরিবারের ভিতরে বাহিরে, রাস্তায় বিকৃত পৈচাশিক মনোভাব মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এই ঘুনে ধরা সমাজ থেকে উত্তরণের পথ আমাদেরই খুঁজে নিতে হবে। দেশের প্রগতিশীল সুশীল সমাজকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মদের জীবন নিয়ে ভাবতে হবে, সমাজকে কিভাবে সুন্দর করা যায় মানবিক করা যায় তার জন্য রাষ্ট্র ও পরিবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবনার সময় এসেছে। সামাজিক অস্থিরতা নির্মূল করার দায়িত্ব আমাদের সকলের। আমাদের সন্তানের জন্য একটা নিরাপদ আশ্রয় আমাদেরকেই খুঁজে নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাসন্তী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধশীতকাল এবং বিয়ে উৎসব