সন্তানকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে ভূমিকা নিতে হবে

| সোমবার , ২ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:০১ পূর্বাহ্ণ

একটি পরিবারে যে কোনো কাজে মাবাবার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। শৈশবে ও কৈশোরে সবকিছুর দায়িত্ব থাকে মাবাবার। থাকা, খাওয়া, পোশাক পরিধান ও সুস্থতা থেকে শুরু করে সবকিছুই মাবাবার নজরদারিতে হয়। অতি আদরের সন্তানটি তাই চোখ বন্ধ করেই পার করে দিতে পারে জীবনের অনেকটা সময়। তবে মা হলেন শিশুর প্রথম পথ নির্দেশক। বলা যায়, প্রথম শিক্ষক। মা শিশুকে লালনপালন করে বড় করে তোলেন, খাওয়ান, পোশাকপরিচ্ছদে ভালোভাবে চলার জন্য শিষ্টাচার শেখান। প্রকৃতিগতভাবেই মাই এই কাজ করে থাকেন। মায়ের কাছে এই আগ্রহটা জাগে তাঁর শিশু সন্তানের প্রতি গভীর ভালোবাসা থেকে। সন্তান সারা জীবন সুখী, সুস্থ, স্বাবলম্বী আর সফল হোকএটাই সব মায়ের আকাঙ্ক্ষা। কিন্তু তাঁর সন্তান যাতে শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলি অর্জন করতে পারে সেই ব্যবস্থা করতে মাকে অবশ্যই একটু বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হয়। এই বিশেষ ভূমিকায় মা হন শিশুর ভবিষ্যৎ নির্মাতা, তিনি তাঁর সন্তানকে সামাজিক হতে শেখাবেন, শেখাবেন মানুষের সাথে ব্যবহার, নৈতিকতা ও মানবিকতা। সমাজে মানুষের সঙ্গে মানুষের ব্যবহারিক কার্যকলাপ ও মেলামেশার যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া তার সাথে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, সক্রিয় ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়ে গড়ে ওঠে একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব। আর এ কথা সত্যি যে, ব্যক্তিত্ববান আদর্শবান চরিত্রবান মানুষই যে কোনো পরিবার, সমাজ ও দেশের সম্পদ। একজন মা তার সন্তানকে কিভাবে শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়ে বর্তমান আধুনিক সমাজে সফল, স্বাবলম্বী ও ব্যক্তিত্ববান করে গড়ে তুলতে পারেন তার জন্য মাকেও প্রস্তুতি নিতে হয়।

শৈশবের শুরু থেকেই শিশুর চারিত্রিক, নৈতিক ও মানসিক বিকাশ শুরু হয়। তাই এই সময়ে প্রাপ্ত শিক্ষা যাতে তার ভবিষ্যৎ জীবনের সম্পূরক হতে পারে সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখতে হবে। আর এ দায়িত্ব প্রধানত মায়ের ওপরই বর্তায়। কারণ, একজন শিশুর সবচেয়ে বড় কাছের মানুষ বা বন্ধু হলেন তার মা। তাই শিশুর মানস গঠনে ও প্রাথমিক শিক্ষায় মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। মা শুধু একজন জন্মদাত্রী জননীই নন, সুন্দর চরিত্রবান সন্তান তৈরি করার কারিগরও বটে।

শিশু বিষয়ক মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শৈশবকালই হচ্ছে একজন মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তিভূমি। এই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে ভবিষ্যতের আদর্শ নাগরিকদের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ছোট বেলায় একটি শিশু যে পরিবেশে প্রতিপালিত হয় তার ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে তার জীবন ধারা গড়ে ওঠে। শিশুর প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তিভূমি হচ্ছে আপন আপন গৃহাঙ্গন। পাঁচ বছর বয়স হতেই শিশুকে খেলার ছলে পড়ার বই, ছবির বই, রঙ পেন্সিল ইত্যাদির সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এই সময়ে পড়ালেখার মাধ্যমে শিশুকে অক্ষরজ্ঞান শিখাতে হবে। শিশুকে বাল্যকাল থেকেই স্বাবলম্বী হতে দেওয়া উচিত। কেননা স্বাবলম্বন মানুষকে আত্মনির্ভরশীল করে তোলে। শিশুর প্রতিটি ভালো কাজে প্রশংসা করলে সে উৎসাহ পায়। শিশুকে কখনো বেশি শাসন করা উচিত নয়। লঘু পাপে গুরুদন্ড অনেক সময় শিশুকে আরো জেদী করে তোলে। মা যদি স্নেহ সহানুভূতির সাথে শিশুকে সংশোধন করার চেষ্টা করেন, তবে সে চেষ্টা শারীরিক শাস্তির চেয়ে অনেক বেশি সুফল বয়ে আনে। শিশুর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করলে সে অকপটে তার অন্যায় স্বীকার করে ভয়ে লুকিয়ে রাখবে না। শিশুর সামনে কখনো মিথ্যা কথা বলা এবং কোনো প্রকার অসংযত আচরণ করা উচিত নয়। আর মিথ্যা প্রলোভন দেখানোও অনুচিত। ছোটবেলা হতেই শিশুকে আপন আপন পিতামাতার আর্থিক সঙ্গতির সাথে খাপ খাওয়ায়ে চলতে শেখানো উচিত। অতিরিক্ত স্নেহ বশে তাদের অন্যায় আবদার মেনে নেওয়া উচিত নয়। চাইবা মাত্র চাহিদাপূরণের অভ্যাস শিশুকে জেদী করে তোলে। তাই নিজ নিজ সামর্থ্যের অনুকূলে শিশুর আবদার পূরণ করা উচিত। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর চরিত্র গঠনে প্রত্যেক মাকে কিছু সময় অবশ্যই ব্যয় করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে